চট্টগ্রাম নগরের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলাচলে গতিসীমা সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার। তবে এই গতিসীমা মানার গরজ মনে করছেন না চালকেরা। তা উপেক্ষা করে প্রতিদিন ১ হাজার ৩০০টির বেশি গাড়ি চলাচল করছে অতিরিক্ত গতিতে। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। আবার নিয়ম ভঙ্গ করা চালকদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগও নেই।

নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৫ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ শহীদ ওয়াসিম আকরাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে আনুষ্ঠানিকভাবে গাড়ি চলাচল শুরু হয় গত ৩ জানুয়ারি। এর আগে গত বছরের ২৮ আগস্ট পরীক্ষামূলকভাবে চলাচলের জন্য এক্সপ্রেসওয়েটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

ঢাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে অতিরিক্ত গতিতে চালানো গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে মামলা দেওয়া শুরু হবে। তবে চট্টগ্রাম নগরের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গতিসীমা না মানা চালকদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এখন পর্যন্ত তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

সিডিএর কর্মকর্তারা দাবি করছেন, গতিসীমা লঙ্ঘনকারী গাড়ি ও চালকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সহযোগিতা নেওয়া হবে।

চট্টগ্রামের এক্সপ্রেসওয়েতে সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করা হয় ৬০ কিলোমিটার। তবে আঁকাবাঁকা অংশে সর্বোচ্চ গতিসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৪০ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি থামানো বা দাঁড় করিয়ে রাখা এবং গাড়ি থেকে নামা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচলের সময় অধিকাংশ গাড়িই গতিসীমা মেনে চলছে না। এক্সপ্রেসওয়ের দেওয়ানহাট, বারিক বিল্ডিং, সল্টগোলা, ইপিজেড, কাঠগড় এলাকায় বাঁক রয়েছে। বাঁকগুলোতে গতিরোধক রয়েছে, গতিসীমাও ৪০ কিলোমিটার। এরপরও গাড়ির গতি না কমিয়ে গাড়ি চালাতে দেখা গেছে চালকদের। এক্সপ্রেসওয়ের অনেক জায়গায় গাড়ি থামিয়ে যাত্রীরা বের হয়ে আসেন। ঝুঁকিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতেও দেখা যায়।

পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চলাচল শুরুর পর থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর অভিযোগ ওঠে। এতে বারবার ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে। গত বছরের ৮ নভেম্বর রাতে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে মৃত্যু হয়েছিল দুই মোটরসাইকেল আরোহীর। তবে দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর মোটরসাইকেল চলাচলের সুযোগ রাখা হয়নি। অন্য গাড়িগুলোও গতিসীমা মানছে না। গত বছরের ১৮ নভেম্বর দ্রুতগামী একটি প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। কেউ মারা না গেলেও দুজন আহত হয়েছিলেন ওই দুর্ঘটনায়।

এভাবে দুর্ঘটনা ঘটতে থাকার পর এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলরত গাড়িগুলো শনাক্ত করতে ক্যামেরা বসায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। প্রাথমিকভাবে নগরের পতেঙ্গা প্রান্তের টোল প্লাজা থেকে এক কিলোমিটার দূরত্বে একটি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এই ক্যামেরা দিয়ে নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গামুখী গাড়িগুলোর গতি শনাক্ত করা যায়।

সিডিএর কর্মকর্তারা বলছেন, এক্সপ্রেসওয়ের গাড়ি চলাচল তদারকির সুযোগ পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকে দেওয়া হবে। যাতে ট্রাফিক বিভাগও গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। আর অতিরিক্ত গতিতে চলা গাড়িগুলোর তালিকা বিআরটিএকে নিয়মিত সরবরাহ করা হবে। লাইসেন্স ও গাড়ির প্রয়োজনীয় নথিপত্র নবায়ন করতে গেলে যাতে বিআরটিএ পদক্ষেপ নিতে পারে।

সিডিএ সূত্র জানায়, ৩ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর এক্সপ্রেসওয়েতে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ছয় হাজার গাড়ি চলাচল করছে। এর মধ্যে প্রথম ৩৭ দিনে গতিসীমা না মেনে চলেছে ৪৮ হাজার গাড়ি। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে গতি মানছে না ১ হাজার ৩০০ গাড়ি, যা মোট গাড়ির ২০ শতাংশ। গতি না মানার দৌড়ে এগিয়ে আছে প্রাইভেট কারজাতীয় গাড়িগুলো। পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চলাচলের সময় গত বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর রাতে একটি প্রাইভেট কার চলেছিল ১৮১ কিলোমিটার গতিতে।

সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস প্রথম আলোকে বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গতি নিয়ন্ত্রণ এবং বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলাচল বন্ধে তাঁরা পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন। নিয়ম ভঙ্গকারী গাড়িচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ ও বিআরটিএর সঙ্গে কথা বলছেন। তাদের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) চুক্তি হবে। তারা জরিমানা করবে।

তবে এক্সপ্রেসওয়েতে গতিসীমা লঙ্ঘনকারী গাড়ি ও চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সিডিএর পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কেউ যোগাযোগ করেননি বলে জানান বিআরটিএর চট্টগ্রামের উপপরিচালক সৈয়দ আইনুল হুদা চৌধুরী। তিনি বলেন, নগরের এক্সপ্রেসওয়েতে যদি গতিসীমা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে এবং সিডিএ তা অবহিত করলে পুলিশের সহায়তায় তাঁরা ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করবেন

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ লকদ র ব র দ ধ গত বছর র ব আরট এ দ র ঘটন ব যবস থ গত স ম স ড এর ক ত কর নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

মঙ্গলবার কুয়াকাটায় রাস উৎসব, গঙ্গা স্নান বুধবার

প্রায় ২০০ বছর ধরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মদনমোহন সেবাশ্রম মন্দির ও কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরে পৃথক আয়োজনে রাস উৎসব পালন করে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এবছরও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে হবে এ উৎসব। রাস উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ায় বসছে ৫ দিনব্যাপী মেলা। 

কলাপাড়ায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শেষ সময়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে মন্দিরের আঙ্গিনাসহ রাধা ও কৃষ্ণের ১৭ জোড়া প্রতিমা।

মঙ্গলবার পূর্ণিমা তিথিতে রাত ৯টা ২২ মিনিটে অধিবাসের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে রাস পূজার আনুষ্ঠানিকতা। পরের দিন বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৬ মিনিটে এ তিথি শেষ হবে। সেদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কুয়াকাটা সৈকতে গঙ্গা স্নান করবেন পুণ্যার্থীরা। এর পর মন্দিরের আঙ্গিনায় রাধা-কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন করবেন তারা। তাই, দুই মন্দিরেই ১৭ জোড়া প্রতিমা বানানো হয়েছে। প্যান্ডেল সাজানোর কাজ শেষ। চলছে লাইটিং ও সাজসজ্জার কাজ। 

এ উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ার মন্দির প্রাঙ্গণ, কুয়াকাটার মন্দির প্রাঙ্গণ ও সৈকতে অস্থায়ীভাবে বসছে শতাধিক পোশাক, প্রসাধনী, খেলনা ও গৃহস্থালী সামগ্রীর দোকান। কুয়াকাটায় তিন দিনব্যাপী উৎসব হলেও কলাপাড়ায় এ উৎসব চলবে পাঁচ দিন। এসব দোকানে অন্তত ৩০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রির আশা করছেন আয়োজকরা। 

কলাপাড়ার শ্রী শ্রী মদনমোহন সেবাশ্রমের রাস উদযাপন কমিটির সভাপতি দিলীপ কুমার হাওলাদার বলেছেন, আজকের মধ্যেই আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। হিন্দু ধর্মালম্বীদের এ উৎসব হলেও এখানে ৫ দিনব্যাপী মেলায় সব ধর্মের মানুষের আগমন ঘটে। আমাদের মন্দির প্রাঙ্গণে অন্তত ৭০টি দোকান বসেছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে রাস উৎসব সম্পন্ন হবে। 

কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নীহার রঞ্জন মন্ডল বলেছেন, আগামীকাল রাতভর মন্দির প্রাঙ্গণে ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলবে। পরদিন সকালে গঙ্গা স্নান হবে। লাখো পুণ্যার্থীর আগমনের আশা করছি আমরা। বুধবারও গঙ্গা স্নান হবে। উৎসব উপলক্ষে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউসার হামিদ বলেছেন, রাস উৎসব উপলক্ষে কুয়াকাটায় ১ লাখ পুণ্যার্থী সমাগমের আশা করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে। 

ঢাকা/ইমরান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ