পুলিশ সুপার তানভীর সালেহীন হত্যা মামলায় কারাগারে
Published: 12th, February 2025 GMT
রাজশাহীর সারদায় অবস্থিত বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির পুলিশ সুপার (এসপি) তানভীর সালেহীনকে হত্যা মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত আজ বুধবার এ আদেশ দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় তানভীরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাঁকে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন জানায় পুলিশ। আদালত ১৯ ফেব্রুয়ারি রিমান্ড বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
মামলার কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ জুলাই নিউমার্কেট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদ মারা যান। এ ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় তানভীর সালেহীনের নাম রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল তাঁকে সারদা থেকে নিয়ে যায়। তাঁর বাড়ি কিশোরগঞ্জে। তাঁর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.
২৮তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে ২০১০ সালে পুলিশে যোগ দেন তানভীর সালেহীন। তিনি ২০১৬ সালে আইজিপি ব্যাজ এবং ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পান।
আরও পড়ুনসারদা পুলিশ একাডেমি থেকে এসপি তানভীরকে নিয়ে গেল ডিএমপির ডিবি৮ ঘণ্টা আগে২০২২ সালে তানভীর সালেহীন এসপি হিসেবে পদোন্নতি পান। এরপর তাঁকে ডিএমপির উপকমিশনার (সদর দপ্তর ও প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাঁকে রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির পুলিশ সুপার (বেসিক ট্রেনিং-২) হিসেবে পদায়ন করা হয়। সম্প্রতি সারদায় প্রশিক্ষণরত পুলিশ কর্মকর্তা ও কনস্টেবলদের তাঁর স্বাক্ষরেই কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হচ্ছিল। একাডেমির অধ্যক্ষের পক্ষে তিনি তাঁদের এই শোকজ করছিলেন।
আরও পড়ুনচট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম গ্রেপ্তার৯ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এক ড ম
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি সংস্থার এজেন্ট দাবি করা এনায়েত করিমের ৪৮ ঘণ্টার রিমান্ড মঞ্জুর
রাজধানীর রমনা থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় নিজেকে বিদেশে সংস্থার এজেন্ট দাবি করা এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমকে ৪৮ ঘণ্টা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার সিএমএম আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা।
পুলিশ ও আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা আদালতে বলেন, আসামি এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বাস্তবে তিনি ‘র’-এর এজেন্ট। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মিশন নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বর্তমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। সেটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হলে তাঁর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আরও অনেক নতুন তথ্য জানা যাবে।
অতিরিক্ত পিপি শামসুদ্দোহা আদালতে আরও বলেন, এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমসহ আর কারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, সেটি জানার জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
অপর দিকে এনায়েত করিম চৌধুরীর পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, এনায়েত করিম ৬ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছেন, তাঁর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার কথা ১৪ সেপ্টেম্বর। তিনি বাংলাদেশে এসে গুলশানে অবস্থান করছিলেন। তিনি কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত নন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত এনায়েত করিম চৌধুরীর ৪৮ ঘণ্টার রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, শনিবার সকালে রাজধানীর মিন্টো রোড থেকে তাঁকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এনায়েত করিম নিজেকে মাসুদ করিম নামে পরিচয় দেন। তিনি নিজেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই পরিচয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখান। ২০১৮ সালের ভোটের আগেও তিনি একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেশের বাইরে বৈঠক করেন।
সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম বলেছেন, বর্তমান সরকার পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার গঠনে কাজ করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর দাবি, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও এই সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করতে বাংলাদেশে এসেছেন। সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।
আরও পড়ুনবিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট দাবি করা সেই এনায়েত করিমকে মিন্টো রোড থেকে গ্রেপ্তার২১ ঘণ্টা আগেআদালতে জমা দেওয়া পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, এনায়েত করিম চৌধুরী ৬ সেপ্টেম্বর সকালে নিউইয়র্ক থেকে কাতার এয়ারওয়েজে করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন। প্রথম দুই দিন তিনি সোনারগাঁও হোটেলে ছিলেন। পরের কয়েক দিন গুলশানে ছিলেন। তিনি ১৯৮৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যান। ২০০৪ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট পান।
এর আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার আমলেও (২০০১-০৬ সাল) একবার এনায়েত করিমকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তখনো তাঁর বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়েছিল।