শ্রীনগরে পুকুর থেকে বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার, নিখোঁজ ছাত্রের লাশ দাবি করে পুকুরসংলগ্ন দুই বাড়িতে ভাঙচুর
Published: 13th, February 2025 GMT
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরের একটি পুকুর থেকে এক ব্যক্তির বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১টার দিকে বীরতারা ইউনিয়নের ছয়গাঁও এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের দাবি, সিরাজদিখান থেকে নিখোঁজ স্কুলছাত্র রোমান শেখের (১৬) মরদেহ হতে পারে—এমন খবরে ওই পুকুরপাড়সংলগ্ন বাসিন্দা ও রোমান শেখ অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার আসামি মো.
নিখোঁজ রোমান শেখ (১৬) শ্রীনগর উপজেলার কোলা ইউনিয়নের থৈরগাঁও গ্রামের মিরাজ শেখের ছেলে ও বেলতলী গঙ্গাপ্রসাদ জগন্নাথ উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। এক ভাই দুই বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। অভাবের কারণে রোমান পড়াশোনার পাশাপাশি অটোরিকশা চালাত। গত ২১ জানুয়ারি অটোরিকশা নিয়ে বের হওয়ার পর থেকে সে নিখোঁজ আছে। এ ঘটনায় গত ২৬ জানুয়ারি রোমানের বাবা মিরাজ শেখ বাদী হয়ে মো. সিয়াম (১৭), মানিক শেখ (১৭), রাসেলসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৫ জনকে আসামি করে সিরাজদিখান থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। এ মামলায় ২৬ জানুয়ারি মানিক, সিয়ামসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শ্রীনগরের বীরতারা ইউনিয়নের ছয়গাঁও গ্রামে মানিক ও সিয়ামের বাড়িসংলগ্ন পুকুর থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি হয়। পরে তাঁরা একত্র হয়ে পুকুরের কচুরিপানা সরিয়ে গন্ধের উৎসের খোঁজ শুরু করেন। আজ সকাল ১০টার দিকে আসামি সিয়ামের ঘরের পাশের পুকুরের অংশ থেকে কচুরিপানা সরাতেই সেখানে বস্তাবন্দী মরদেহটি খুঁজে পান তাঁরা। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলে বেলা সোয়া একটার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে লাশটি উদ্ধার করা হয়। লাশটির বস্তার সঙ্গে ইট ও আরসিসি খুঁটির অংশ বেঁধে পুকুরে ফেলা হয়েছিল। তবে বস্তার মুখ না খোলায় লাশটি রোমান শেখের কি না নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে লাশটিকে রোমান শেখের দাবি করে সমবেত জনতা উত্তেজিত হয়ে সিয়াম ও মানিক শেখের বাড়ি ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে ঘরের ভেতরের আসবাবপত্র ও বাড়ির ভাঙা অংশে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
রোমান শেখের সন্ধান চেয়ে গতকাল বুধবার মানববন্ধন করে তাঁর স্বজন, সহপাঠী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। ওই দিন এ কর্মসূচি শেষে তাঁরা থানা ঘেরাও করে হামলা চালান। এ সময় সিরাজদিখান থানা ও থানা প্রাঙ্গণের পাশে অবস্থিত সহকারী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের পাশাপাশি এর সামনে থাকা পুলিশের ৫টি গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়।
মুন্সিগঞ্জ সহকারী পুলিশ সুপার (সিরাজদিখান সার্কেল) ইমরান খান বলেন, ‘গতকাল থানায় হামলার ঘটনার পর আমরা নিখোঁজ স্কুলছাত্রের স্বজনসহ স্থানীয়দের বলেছিলাম, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের বাড়ির আশপাশে যত ডোবা, পুকুর আছে সেখানেও আপনারা খোঁজ করেন। সে হিসেবে নিখোঁজদের স্বজনেরা আজ সিয়াম ও মানিকদের বাড়ির পাশের পুকুরে খোঁজ চালায়। সেখানে বস্তাবন্দী অবস্থায় একটি মৃতদেহ দেখতে পেয়ে আমাদের খবর দেয়। একটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশটি রোমান শেখের কি না সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ র নগর
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।