Samakal:
2025-06-16@01:04:07 GMT

মধ্য শাবানের পুণ্যময় রাত

Published: 13th, February 2025 GMT

মধ্য শাবানের পুণ্যময় রাত

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুসলিম জাতিকে এমন কিছু বরকতময় দিন ও রাত উপহার দিয়েছেন, যাতে ইবাদত করলে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। এগুলোর মধ্যে শবেবরাত অন্যতম। 
ফারসি ভাষায় ‘শব’ অর্থ রাত; ‘বরাত’ অর্থ ভাগ্য। শবেবরাতের অর্থ হলো ভাগ্যরজনি। যেহেতু এ রাতে মানুষের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয়, তাই একে ভাগ্যরজনি বলা হয়। হাদিস শরিফে বর্ণিত হজরত ইকরামা (রা.

) বলেন, এ রাতে আগামী এক বছরের রিজিক নির্ধারণ করা হয়।

আগামী এক বছরে যারা মারা যাবে, যারা জন্মগ্রহণ করবে, তাদের তালিকা এ রাতে নির্দিষ্ট ফেরেশতাগণের হাতে সোপর্দ করা হয়। অন্যদিকে আরবি পরিভাষায় এটিকে ‘লাইলাতুল বারাআত’ বলা হয়। লাইলাতুল অর্থ রাত আর ‘বারাআত’ অর্থ মুক্তি, ক্ষমা। যেহেতু এ রাতে আল্লাহ তাঁর অগণিত বান্দাকে ক্ষমা করেন, তাই একে মুক্তির রজনি বলা হয়। হাদিসে এ রাতকে ‘লাইলাতুল নিসফি মিন শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত নামে অভিহিত করা হয়েছে। 

একাধিক সহিহ হাদিসে এ রাতের মর্যাদা প্রমাণিত। তা ছাড়া এ রাতের মাহাত্ম্য সম্পর্কে রয়েছে বিশিষ্ট ইমামদের নির্ভরযোগ্য বহু বক্তব্য। শবেবরাতে আল্লাহর অপার অনুগ্রহ নাজিল হয়। বিখ্যাত সাহাবি হজরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে অর্থাৎ শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে তাঁর সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান)

অপর হাদিসে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর সব বান্দাকে ক্ষমা করেন। তবে মুশরিক, হিংসুক, জাদুকর, ব্যভিচারী, মা-বাবার অবাধ্য সন্তান ও অন্যায়ভাবে হত্যাকারীকে ক্ষমা করেন না।’ (ইবনে মাজাহ) 
শবেবরাতে বিশেষ কিছু আমল রয়েছে, যা করলে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হয়। এ রাতে করণীয় আমলগুলোর মধ্যে রয়েছে: রাতে নফল নামাজ আদায় করা এবং দিনে রোজা রাখা। এ রাতে সাধ্যমতো নফল নামাজ আদায় করা এবং পরদিন নফল রোজা রাখা খুবই পুণ্যের কাজ।
হাদিস শরিফে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যখন শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাত আসবে, তখন তোমরা দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবে এবং দিনে রোজা রাখবে।’ (ইবনে মাজাহ)
অন্যত্র হজরত ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘পাঁচটি রাত এমন রয়েছে, যে রাতের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না– ১. জুমার রাত, ২. রজব মাসের প্রথম রাত, ৩. শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত (শবেবরাত),

৪. ঈদুল ফিতরের রাত; ৫. ঈদুল আজহার রাত।’
শবেবরাতের রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) জান্নাতুল বাকিতে উম্মতের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘একদা এ রাতে আমি রাসুলুল্লাহকে (সা.) না পেয়ে তাঁকে খুঁজতে থাকি। এর পর আমি তাঁকে জান্নাতুল বাকিতে দু’হাত তোলা অবস্থায় পেলাম।’ (ইবনে মাজাহ)। 
শবেবরাত পুণ্যময় রজনি। এ রাতে যে কোনো ধরনের পাপ বা গর্হিত কাজ না করে বরং আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভের নিমিত্তে ইবাদতে কাটিয়ে দেওয়াই উত্তম। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য যা ক্ষতিকর এবং যে কাজের দ্বারা সমাজের মানুষের মাঝে ভীতির সৃষ্টি করে, তা পরিহার করাই হলো ইসলামের অন্যতম নির্দেশ।
এ রাতে আতশবাজি ছোড়া এবং পটকা ফুটানো উচিত নয়। এর কারণে যেখানে সেখানে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। তাই এসব কাজ ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। কোনো কোনো এলাকায় এ রাতে অনেক বাড়িঘর, মসজিদ ও ধর্মীয় স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হয়। অথচ এগুলোর সঙ্গে শবেবরাতের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এসব করা অপচয়ের শামিল। আল্লাহ তায়ালা সুরা বনি ইসরাইলে এরশাদ করেন, ‘তোমরা খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই অপচয়কারী শয়তানের ভাই।’ 

ড. মো. শাহজাহান কবীর: বিভাগীয় প্রধান, 
ইসলামিক স্টাডিজ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আল ল হ ত বর ণ ত

এছাড়াও পড়ুন:

মদিনায় রয়েছে বেহেশতের বাগান

মদিনার পূর্ব নাম ইয়াসরিব। রাসুলুল্লাহ (সা.) হিজরতের পর এই শহরের নাম হয় মদিনাতুন্নবী বা নবীর শহর। মদিনা হচ্ছে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আশ্রয়ভূমি; প্রেম, ধৈর্য ও আত্মত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তস্থান এবং সত্যনিষ্ঠার পুণ্যময় কর্মক্ষেত্র। এটি নবীজি (সা.)-এর শহর, শান্তির নগর। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে আমার রওজা জিয়ারত করল, তার জন্য আমার সাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল।’ (দারুকুতনি: ২৬৯৫; বায়হাকি: ৩৮৬২)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘যে হজ করল, কিন্তু আমার রওজা জিয়ারত করল না, সে আমার প্রতি জুলুম করল।’ (দারুকুতনি, পৃষ্ঠা: ২৭২) ফকিহদের মতে, মদিনা শরিফ জিয়ারত করা সুন্নত। আল্লামা ইউসুফ ইসলাহি (রহ.) বলেন, ‘হাজি সাহেবদের জন্য রওজা শরিফ জিয়ারত করা ওয়াজিব।’ (আসান ফিকাহ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৫০)

নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার মসজিদে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেছে এবং কোনো নামাজ কাজা করেনি, সে নিফাক এবং দোজখের আজাব থেকে মুক্ত।’ (তাবরানি, খণ্ড: ৫, পৃষ্ঠা: ৩২৫, হাদিস: ৫৪৪৪ ও তিরমিজি: ২০০)। তিনি আরও বলেন, ‘মসজিদে নববিতে এক রাকাত নামাজ পড়লে তার সওয়াব ৫০ হাজার রাকাত নামাজের সমান।’ (ইবনে মাজাহ: ৭৫২)

রওজা শরিফ এবং এর পশ্চিম দিকে নবীজি (সা.)-এর মিম্বর পর্যন্ত স্বল্প পরিসর স্থানকে রিয়াজুল জান্নাত বা বেহেশতের বাগান বলা হয়

মসজিদে নববির সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো নবীজি (সা.)-এর রওজা শরিফ, যা হজরত আয়েশা (রা.)-এর হুজরার মধ্যে অবস্থিত। এই রওজার পাশে হজরত আবু বকর (রা.) এবং তাঁর পাশেই হজরত ওমর (রা.)-এর মাজার অবস্থিত। এখানে আরেকটি কবরের স্থান খালি রাখা হয়েছে, যেখানে হজরত ঈসা (আ.)-এর দাফন হবে বলে বর্ণিত আছে।

রওজা শরিফ এবং এর পশ্চিম দিকে নবীজি (সা.)-এর মিম্বর পর্যন্ত স্বল্প পরিসর স্থানকে রিয়াজুল জান্নাত বা বেহেশতের বাগান বলা হয়। এই স্থান আলাদা রঙের (ধূসর সাদাটে) কার্পেট দ্বারা চিহ্নিত থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার ঘর ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানে জান্নাতের একটি বাগান রয়েছে।’ (বুখারি: ১১৯৬, মুসলিম: ১৩৯১)

মসজিদে নববির পূর্ব দিকে অবস্থিত গোরস্থানকে জান্নাতুল বাকি বলা হয়, যেখানে অসংখ্য সাহাবি, আউলিয়া, বুজুর্গ ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কবর রয়েছে।

মদিনার উত্তর-পূর্ব দিকে ঐতিহাসিক ওহুদ পাহাড় ও ওহুদের প্রান্তর অবস্থিত, যা মসজিদে নববি থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে। এখানে হজরত হামজা (রা.)-সহ ৭০ জন সাহাবি শহীদ হন। এখানেই কাফেররা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দাঁত মোবারক শহীদ করেন। এখানে একটি মসজিদ ও মাদ্রাসা রয়েছে।

কিবলাতাইন মসজিদ: হিজরতের প্রায় দেড় বছর পর এই মসজিদ থেকে তৎকালীন কিবলা বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে জোহরের নামাজ পড়ার সময় নবীজি (সা.)–এর কাছে ওহি নাজিল হয় যে ‘তুমি এখনই এই অবস্থায় কাবার দিকে কিবলা করে নামাজ সমাধা করো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৪৪)

কুবা মসজিদ: এটি ইসলামের প্রথম মসজিদ। এটি রাসুলে করিম (সা.)–এর নিজ হাতে তৈরি। মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববি ও মসজিদুল আকসার পরই মসজিদে কুবার সম্মান। এখানে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়লে এক ওমরাহর সওয়াব হয়।

খন্দক প্রান্তরের পাশে অতি অল্প পরিসর স্থানের মধ্যে পাশাপাশি ছয়টি মসজিদ আছে। এগুলো হচ্ছে মসজিদে ফাতাহ, মসজিদে সালমান ফারসি (রা.), মসজিদে আবু বকর সিদ্দিক (রা.), মসজিদে ওমর (রা.), মসজিদে আলী (রা.), মসজিদে ফাতিমা (রা.)।

রাসুল করিম (সা.) প্রথম জুমা বনি ছালেমের মহল্লায় এই মসজিদে পড়েন। এই মসজিদকে ‘মাসজিদে জুমুআ’ বলা হয়।

মাসজিদে গামামা: গামামা অর্থ মেঘ। রাসুলুল্লাহ (সা.) এই মসজিদে ঈদের জামাতে ইমামতি করতেন এবং একসময় বৃষ্টির জন্য ‘ইসতিসকার’ নামাজ পড়েছিলেন।

বদর প্রান্তর: এখানে ইসলামের বিজয়সূচক প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১৪ জন সাহাবি এতে শাহাদাতবরণ করেন। এখানে শহীদদের কবর রয়েছে।

মসজিদে সাকিয়া: বদরের যুদ্ধের সময় রাসুল (সা.) এই মসজিদে নামাজ পড়েছিলেন এবং মদিনাবাসীর জন্য দোয়া করেছিলেন।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মদিনায় রয়েছে বেহেশতের বাগান