দিন দিন বাংলা ফন্ট বর্ণিল হয়ে উঠছে। দেশের তরুণরা বাংলা টাইপোগ্রাফির জগতে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। তারা বাংলা টাইপ ডিজাইন ও ফন্ট অর্থের বিনিময়ে কেনার মতো মূল্যবান করে তুলছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে বাংলা লিপির নান্দনিক উৎকর্ষে কাজ করা এমনই দুই তরুণের সৃজনশীল জগৎ লিপিকলা ও বেঙ্গল ফন্টস-এর কথা তুলে ধরছেন আশিক মুস্তাফা  

একটি ফন্ট সেট তৈরিতে বহুদিন চিন্তাভাবনা, ডিজাইনে পরিবর্তন ও বেটা টেস্টিংয়ের প্রয়োজন। বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় একাধিক স্টাইল এবং ওয়েট ডিজাইন করতে ৩০ থেকে ৪৫ দিন নিরন্তর প্রচেষ্টার প্রয়োজন। এই সময়টা দিয়েই তরুণরা ফন্ট তৈরি করেন। দেশে কয়েকটি উদীয়মান ফন্ট তৈরির প্রতিষ্ঠান থাকলেও সাধারণভাবে ফন্ট তৈরি থেকে আর্থিক লাভ কম। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্র্যান্ডগুলোয় নিজস্ব ফন্ট তৈরির প্রবণতা বেড়েছে। এ ছাড়া সহজলভ্য ফন্টের চাহিদাও বাড়ছে। টাইপফেস ডিজাইনার তৌহিদুল ইসলাম হিমেল বলেন, ‘কাস্টমাইজ ফন্ট একটি ব্র্যান্ডকে প্রকাশে অথেনটিসিটি যোগ করে। এটি ব্র্যান্ডের স্বতন্ত্রতাও প্রকাশ করে। আসলে যখন একটি বৈশ্বিক ব্র্যান্ড কোনো অঞ্চল বা দেশে ব্যবসা শুরু করে, তখন এটি সেই অঞ্চলের সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিয়ে তার পরিচয়কে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরার চেষ্টা করে। এই প্রক্রিয়ার একটি অংশ হচ্ছে যোগাযোগের অনন্য উপায় তৈরি করা। সে ক্ষেত্রে কাস্টম টাইপফেস ওই পথ তৈরি করে দেয়।’
আবির্ভাব দিয়ে শুরু
তৌহিদুল ইসলাম হিমেলের তৈরি করা প্রথম বাংলা ফন্টের নাম ‘আবির্ভাব’। ড্যাফোডিল 
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি বিভাগের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি পড়ালেখার অংশ হিসেবে 
‘টাইপোগ্রাফি’ কোর্স করেছিলেন। তাও প্রথম বর্ষে। কোর্সের শিক্ষক মিজানুর রহমানের কাছ থেকে হাতেখড়ি নিয়ে ‘আবির্ভাব’ ফন্টটি তৈরি করেন হিমেল। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ফন্টটি অনলাইনে দেওয়ার পর এক মাসের মধ্যে সেটি প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ডাউনলোড করে। শুধু তাই নয়, শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণার ব্যানারে ফন্টটি ব্যবহৃত হতে থাকে। 
বেঙ্গল ফন্টসের ১৭টি ফন্ট 
পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী যুক্ত হন তৌহিদুলের সঙ্গে। একসঙ্গে তারা তৈরি করেছেন বেশ কয়েকটি ফন্ট। বর্তমানে তাদের বেঙ্গল ফন্টসের ওয়েবসাইটে ১৭টি বাংলা ফন্ট আছে। নামগুলোও বেশ সুন্দর। যেমন– মৃদুল রেট্রো, শুদ্ধ, নির্ভীক, চিলেকোঠা, শরৎ, অপরাহ্ণ, বসন্ত, অনির্বাণ ইত্যাদি। এসব নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানান গল্প। অনলাইনে নামমাত্র ৭৫ থেকে ২৩০ টাকার মধ্যে বেঙ্গল ফন্টসের ফন্টগুলো ডাউনলোড করা যাবে https://www.

bengalfonts.com ওয়েবসাইট থেকে।
আরও উন্মুক্ত, আরও দৃষ্টিনন্দন…
কাস্টমাইজ ফন্টগুলো সহজলভ্য ফন্টগুলোর থেকেও কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করে। কেননা সহজলভ্য ফন্টগুলো সবসময় ব্র্যান্ডের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলতে পারে না। গ্লোবাল ব্র্যান্ডগুলোকে একাধিক ভাষা নিয়ে কাজ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সব ভাষায় একটি অভিন্ন ধরনের নকশা তৈরি করা আবশ্যক। ফন্ট ভাষায় বৈচিত্র্য আনে। ছাপা নকশায় যে স্বাধীনতা আছে, ইন্টারনেট বা ডিজিটাল মাধ্যমে তা নেই। ফন্টে বৈচিত্র্য বা সৃজনশীলতা আনতে আরও নান্দনিক ফন্ট বানাতে হবে। তরুণরা সেই কাজটি ভালোভাবেই করছে। আগামীর ভাষা হবে আরও উন্মুক্ত। আরও দৃষ্টিনন্দন! 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড জ ইন

এছাড়াও পড়ুন:

দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হলে সরকার নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেবে

জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিক-নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, তাহলে সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।

আজ সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের ‘জরুরি সভায়’ এই সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান খান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে।

তবে গণভোট কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে। এসব সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে আজ জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ