জাতিসংঘের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী আটশ কোটি জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। দেখা গেছে, প্রতি তিনজনের একজন নারী জীবদ্দশায় নির্যাতন, ধর্ষণ ও শারীরিক হেনস্তার শিকার হন। সে হিসাবে সংখ্যাটা দাঁড়ায় একশ কোটির বেশি। এ হিসাব থেকেই আন্দোলনটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং’। বাংলায় যেটি হয়েছে– ‘উদ্যমে, উত্তরণে শতকোটি’। এ বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি ওবিআর দিবস উপলক্ষে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে মানববন্ধন ও ক্রিয়েটিভ পারফরম্যান্স ‘হিম্মতি মাই’ অনুষ্ঠিত হয়। নারী সংস্কারবিষয়ক কমিশনের সদস্য নীরূপা দেওয়ান, নিজেরা করির সমন্বয়কারী এবং সাংগাতের উপদেষ্টা খুশী কবির, নারীপক্ষের সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুন নাহারসহ অনেক নারী অধিকারকর্মী এ আয়োজনে যুক্ত হন। নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা দেশের প্রায় সব সংগঠনই এবারের অনুষ্ঠানে যুক্ত থেকেছে।
প্রশ্ন আসতে পারে এত দিন ধরে বিশ্বে যে নারীবাদী আন্দোলন চলছে, এর পরও কেন এ আন্দোলনের প্রয়োজন হলো। আমরা জানি, নারীর প্রতি বৈষম্য, বঞ্চনা ও নির্যাতনের ইতিহাস অনেক পুরোনো। আদিকাল থেকেই এটি চলে আসছে। যখন মাতৃতান্ত্রিক থেকে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ হয়ে গেল, তখন থেকেই নারী আসলে ঘরে বন্দি এবং নারীকে ব্যবহার করা শুরু হলো পুরুষের সুবিধার্থে। ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিষয়টি যখন এলো, তখন থেকেই রীতিমতো নারীকে ঘরবন্দি করা হলো।
মুক্তিযুদ্ধের অনেক আগে থেকেই এ ভূখণ্ডে নারীবাদী আন্দোলন হয়েছে। এর আগে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের সব লেখাতেই নারী বঞ্চনার বিষয়টি উঠে এসেছে। পিতৃতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে তিনি আওয়াজ তুলেছিলেন লেখনীতে।
আবার শুধু পুরুষেরাই পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা ধারণ করেন, তা নয়। নারীর অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতি সত্ত্বেও মানসিকতায় পরিবর্তন হয়নি। আমরা চারদিকে দেখতে পাচ্ছি, ধর্মের নামে, সামাজিকতার নামে নারীকে ঘরে আটকে রাখার নিত্যনতুন উপায় বের করা হয়। এটি যেমন পুরুষরা করে থাকে তাদের তৈরি বিভিন্ন ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় বিধিমালার মাধ্যমে; নারীরাও কোনো না কোনোভাবে এই পুরুষতন্ত্রকেই প্রতিনিধিত্ব করে। এ কারণেই নারীবিষয়ক আন্দোলন কখনও চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছায় না।
নারীবাদী আন্দোলন নিয়েও একটি ভুল ধারণা আছে, নারীবাদ হয়তো পুরুষের বিরোধী। নারীবাদ হলো একটি ব্যবস্থার বিরোধী, যে ব্যবস্থাটা নারীবিদ্বেষী। নারী সম্প্রদায়সহ অন্যান্য লিঙ্গ বৈশিষ্ট্যের মানুষসহ সব বৈচিত্র্যের মানুষের অধিকার নিয়ে আওয়াজ তোলা, সব লিঙ্গীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধেও নারীবাদ কাজ করে।
নারীর একটি মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের লড়াই হলো নারীবাদের লড়াই। এই লড়াই হয়তো চিরকাল চালিয়ে যেতে হবে। আমরা হয়তো অল্প অল্প করে এগোব ও পেছাব। আন্দোলনটা কখনোই থেমে থাকবে না। বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশ হয়তো অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আমাদের অনেক বাধা রয়েছে। যেমন– সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকারের প্রশ্ন এখনও অর্জিত হয়নি। কিছু আইনি ধারায় নারীকে সমান অধিকার না দেওয়ার বিধানও রয়েছে। এমনকি সন্তানের অভিভাবকত্ব বা তালাকের ক্ষেত্রেও নারীকে সীমিত অধিকার দেওয়া হয়েছে।
লিঙ্গীয় বৈষম্য রয়েছে বলেই আমাদের আন্দোলনটা চালিয়ে যেতে হয়। নারীপক্ষ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, ব্লাস্টসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন নারী অধিকার সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
একদিকে যেমন কাজ হচ্ছে, অন্যদিকে নারীরা নিজেরাই নিজেদের পেছন থেকে টেনে ধরে রাখছে। কিছুদিন আগে যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেগম রোকেয়ার ছবির ওপর কালি দেওয়া হয়। যে নারী শিক্ষার্থী কালি দিয়েছে, তিনি বুঝলেন না দেড়শ বছর আগে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন তাঁর শিক্ষার জন্যই কাজ করে গেছেন। নারীশিক্ষার বিষয়ে রাস্তা তিনিই দেখিয়েছেন। বলা হয়ে থাকে, রোকেয়া শুধু মুসলিম নারীদের ক্ষেত্রেই কাজ করেছেন। মোটেও তা নয়। সেই সময়ে হিন্দু, মুসলিম কোনো ধর্ম বিভাজনে শিক্ষার জায়গাটা ছিল না। সেই বিষয়টি নিয়ে বেগম রোকেয়া আন্দোলন করেছেন বলেই আজ নারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আসতে পেরেছেন।
কোটা নিয়ে কিছু কথা বলা দরকার। জুলাই গণআন্দোলনের সূচনা হয় কোটা সংস্কারের দাবিতে। নারী কোটা আমাদের সমাজের ক্ষেত্রে খুবই জরুরি। নারী এমনিতেই বঞ্চিত এক জনগোষ্ঠী। একটি বড় অংশকে বঞ্চিত রেখে সেই সমাজ কখনও এগোতে পারে না। নারীকে পিছিয়ে রেখে গোটা জনগোষ্ঠীর মঙ্গল সাধন সম্ভব নয়।
একেবারে সাধারণ নারী, পিছিয়ে পড়া নারীকে কোটা দিতেই হবে। এ ছাড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভাষা-সংস্কৃতি সংরক্ষণ করা ও বাঁচিয়ে রাখার জন্য তাদের ক্ষেত্রে কোটা জরুরি। সমতা বলতে, সবাইকে সমানভাগে ভাগ করে দিতে হবে, বিষয়টা তা নয়। বরং এগিয়ে আসার জন্য যাঁর একটু সহযোগিতা দরকার, তাঁকে অবশ্যই সেই পথ তৈরি করতে হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।
লেখক: সমন্বয়ক, সাংগাত বাংলাদেশ
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারে সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতি, অপহরণ ৩
কক্সবাজারের ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কে গাছ ফেলে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাছবাহী গাড়িতে ডাকাতির অভিযোগ উঠেছে। এসময় ডাকাতদল অস্ত্রের মুখে তিন জনকে অপহরণ করেছে বলেও অভিযোগ।
সোমবার (১৬ জুন) সকাল ৭টার দিকে সড়কের হিমছড়ি ঢালায় এ ঘটনা ঘটে।
অপহৃতরা হলেন- জেলার রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নের গুইন্যাপাড়া এলাকার শাহজাহানের ছেলে শাহেদ ও ফাতেমার ঘোনা এলাকার আলমের ছেলে আমির সোলতান। তারা পেশায় মাছ ব্যবসায়ী। অপর অপহৃত ব্যক্তির নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আরো পড়ুন:
রামুতে বাস-কাভার্ডভ্যান সংঘর্ষে নিহত ৩
শেরপুরে বাসচাপায় যুবক নিহত, বিক্ষুব্ধ জনতার অগ্নিসংযোগ
স্থানীয় নুর আহমদ মান্নান নামের একজন বলেন, ‘‘যাত্রীবাহী দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও একটি মাছবাহী গাড়ি হিমছড়ি ঢালায় পৌঁছালে মুখোশধারী সশস্ত্র ডাকাতরা সড়কে গাছ ফেলে যানবাহন আটকে দেয়। এসময় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা পালিয়ে যায়। এরপর অন্য দুই গাড়ির যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোনসহ সর্বস্ব লুট করে তারা। পরে তিন জনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে নিয়ে যায়।’’
ঈদগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মছিউর রহমান বলেন, ‘‘এ বিষয়ে এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। তবে, ঘটনাটি সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’’
ঢাকা/তারেকুর/রাজীব