Samakal:
2025-11-03@07:19:56 GMT

‘উদ্যমে, উত্তরণে শতকোটি’

Published: 15th, February 2025 GMT

‘উদ্যমে, উত্তরণে শতকোটি’

জাতিসংঘের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী আটশ কোটি জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। দেখা গেছে, প্রতি তিনজনের একজন নারী জীবদ্দশায় নির্যাতন, ধর্ষণ ও শারীরিক হেনস্তার শিকার হন। সে হিসাবে সংখ্যাটা দাঁড়ায় একশ কোটির বেশি। এ হিসাব থেকেই আন্দোলনটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং’। বাংলায় যেটি হয়েছে– ‘উদ্যমে, উত্তরণে শতকোটি’। এ বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি ওবিআর দিবস উপলক্ষে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে মানববন্ধন ও ক্রিয়েটিভ পারফরম্যান্স ‘হিম্মতি মাই’ অনুষ্ঠিত হয়। নারী সংস্কারবিষয়ক কমিশনের সদস্য নীরূপা দেওয়ান, নিজেরা করির সমন্বয়কারী এবং সাংগাতের উপদেষ্টা খুশী কবির, নারীপক্ষের সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুন নাহারসহ অনেক নারী অধিকারকর্মী এ আয়োজনে যুক্ত হন। নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা দেশের প্রায় সব সংগঠনই এবারের অনুষ্ঠানে যুক্ত থেকেছে।
প্রশ্ন আসতে পারে এত দিন ধরে বিশ্বে যে নারীবাদী আন্দোলন চলছে, এর পরও কেন এ আন্দোলনের প্রয়োজন হলো। আমরা জানি, নারীর প্রতি বৈষম্য, বঞ্চনা ও নির্যাতনের ইতিহাস অনেক পুরোনো। আদিকাল থেকেই এটি চলে আসছে। যখন মাতৃতান্ত্রিক থেকে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ হয়ে গেল, তখন থেকেই নারী আসলে ঘরে বন্দি এবং নারীকে ব্যবহার করা শুরু হলো পুরুষের সুবিধার্থে। ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিষয়টি যখন এলো, তখন থেকেই রীতিমতো নারীকে ঘরবন্দি করা হলো।
মুক্তিযুদ্ধের অনেক আগে থেকেই এ ভূখণ্ডে নারীবাদী আন্দোলন হয়েছে। এর আগে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের সব লেখাতেই নারী বঞ্চনার বিষয়টি উঠে এসেছে। পিতৃতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে তিনি আওয়াজ তুলেছিলেন লেখনীতে।
আবার শুধু পুরুষেরাই পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা ধারণ করেন, তা নয়। নারীর অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতি সত্ত্বেও মানসিকতায় পরিবর্তন হয়নি। আমরা চারদিকে দেখতে পাচ্ছি, ধর্মের নামে, সামাজিকতার নামে নারীকে ঘরে আটকে রাখার নিত্যনতুন উপায় বের করা হয়। এটি যেমন পুরুষরা করে থাকে তাদের তৈরি বিভিন্ন ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় বিধিমালার মাধ্যমে; নারীরাও কোনো না কোনোভাবে এই পুরুষতন্ত্রকেই প্রতিনিধিত্ব করে। এ কারণেই নারীবিষয়ক আন্দোলন কখনও চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছায় না। 
নারীবাদী আন্দোলন নিয়েও একটি ভুল ধারণা আছে, নারীবাদ হয়তো পুরুষের বিরোধী। নারীবাদ হলো একটি ব্যবস্থার বিরোধী, যে ব্যবস্থাটা নারীবিদ্বেষী। নারী সম্প্রদায়সহ অন্যান্য লিঙ্গ বৈশিষ্ট্যের মানুষসহ সব বৈচিত্র্যের মানুষের অধিকার নিয়ে আওয়াজ তোলা, সব লিঙ্গীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধেও নারীবাদ কাজ করে।
নারীর একটি মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের লড়াই হলো নারীবাদের লড়াই। এই লড়াই হয়তো চিরকাল চালিয়ে যেতে হবে। আমরা হয়তো অল্প অল্প করে এগোব ও পেছাব। আন্দোলনটা কখনোই থেমে থাকবে না। বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশ হয়তো অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আমাদের অনেক বাধা রয়েছে। যেমন– সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকারের প্রশ্ন এখনও অর্জিত হয়নি। কিছু আইনি ধারায় নারীকে সমান অধিকার না দেওয়ার বিধানও রয়েছে। এমনকি সন্তানের অভিভাবকত্ব বা তালাকের ক্ষেত্রেও নারীকে সীমিত অধিকার দেওয়া হয়েছে।
লিঙ্গীয় বৈষম্য রয়েছে বলেই আমাদের আন্দোলনটা চালিয়ে যেতে হয়। নারীপক্ষ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, ব্লাস্টসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন নারী অধিকার সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। 
একদিকে যেমন কাজ হচ্ছে, অন্যদিকে নারীরা নিজেরাই নিজেদের পেছন থেকে টেনে ধরে রাখছে। কিছুদিন আগে যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেগম রোকেয়ার ছবির ওপর কালি দেওয়া হয়। যে নারী শিক্ষার্থী কালি দিয়েছে, তিনি বুঝলেন না দেড়শ বছর আগে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন তাঁর শিক্ষার জন্যই কাজ করে গেছেন। নারীশিক্ষার বিষয়ে রাস্তা তিনিই দেখিয়েছেন। বলা হয়ে থাকে, রোকেয়া শুধু মুসলিম নারীদের ক্ষেত্রেই কাজ করেছেন। মোটেও তা নয়। সেই সময়ে হিন্দু, মুসলিম কোনো ধর্ম বিভাজনে শিক্ষার জায়গাটা ছিল না। সেই বিষয়টি নিয়ে বেগম রোকেয়া আন্দোলন করেছেন বলেই আজ নারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আসতে পেরেছেন। 
কোটা নিয়ে কিছু কথা বলা দরকার। জুলাই গণআন্দোলনের সূচনা হয় কোটা সংস্কারের দাবিতে। নারী কোটা আমাদের সমাজের ক্ষেত্রে খুবই জরুরি। নারী এমনিতেই বঞ্চিত এক জনগোষ্ঠী। একটি বড় অংশকে বঞ্চিত রেখে সেই সমাজ কখনও এগোতে পারে না। নারীকে পিছিয়ে রেখে গোটা জনগোষ্ঠীর মঙ্গল সাধন সম্ভব নয়।
একেবারে সাধারণ নারী, পিছিয়ে পড়া নারীকে কোটা দিতেই হবে। এ ছাড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভাষা-সংস্কৃতি সংরক্ষণ করা ও বাঁচিয়ে রাখার জন্য তাদের ক্ষেত্রে কোটা জরুরি। সমতা বলতে, সবাইকে সমানভাগে ভাগ করে দিতে হবে, বিষয়টা তা নয়। বরং এগিয়ে আসার জন্য যাঁর একটু সহযোগিতা দরকার, তাঁকে অবশ্যই সেই পথ তৈরি করতে হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। 
লেখক: সমন্বয়ক, সাংগাত বাংলাদেশ
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক জ কর ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না, মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন: সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, 'আমাদের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে একটা নেতিবাচক সংবাদ দেখলেই যাচাই-বাছাই না করে শেয়ার করে দেওয়া হয়। অত্যন্ত ভিত্তিহীন সংবাদও আমরা শেয়ার করে দেই।'

সিইসি বলেন, 'দয়া করে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না। এই মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন। তথ্যটা যেন আগে যাচাই করে তারপরে শেয়ার করেন।'

আজ সোমবার রাজধানীর ভাটারায় আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নে (এজিবি) এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন সিইসি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভুয়া সংবাদের প্রচার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপপ্রয়োগ রোধে করণীয় সম্পর্কে তিনি এসব কথা বলেন।

থানা আনসার কোম্পানি/প্লাটুন সদস্যদের আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণের (৪র্থ ধাপ) সমাপনী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিইসি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো সংবাদ দেখা মাত্রই নাগরিকদের যাচাইবাছাই করতে আহ্বান জানান সিইসি। নিশ্চিত হওয়ার আগে শেয়ার না করতে বলেন তিনি।

জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে আনসার ভিডিপির ভূমিকাকে মূল শক্তি বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, 'এনারাই অধিক সংখ্যায় নিয়োজিত থাকেন। এবং আমাদের হিসেব করতে গেলে প্রথম এদেরকেই হিসেব করতে হয় যে, কতজন আনসার ভিডিপি সদস্য আমরা মোতায়েন করতে পারব। মূল কাজটা আঞ্জাম (সম্পাদন) দিতে হয় কিন্তু আনসার এবং ভিডিপির সদস্যদের।'

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। নির্বাচনকালীন জনগণের নিরাপত্তা, ভোট কেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণে আনসার বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি। নির্বাচনে দেশজুড়ে প্রায় ৬ লাখ আনসার ও ভিডিপি সদস্য দায়িত্বপালন করবেন বলেন মহাপরিচালক।

অনুষ্ঠানে মহড়ায় ঢাকা মহানগর আনসারের চারটি জোনের অধীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩২০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য অংশ নেন।  আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা টহল, দায়িত্ব বণ্টন ও জরুরি প্রতিক্রিয়া অনুশীলনে অংশ নেন।

মহড়ায় ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া, ভোটারদের শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ভোট প্রদানে সহায়তা, জাল ভোট প্রতিরোধ, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা এবং সেনা, বিজিবি, র‍্যাব ও পুলিশের সঙ্গে দ্রুত সমন্বয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন জোনের অধিনায়ক এবং প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ