নাটোরের গুরুদাসপুরে ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে এক ঘণ্টা পর বাবাও চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ঘটনাটি ঘটেছে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের দাদুয়া এলাকায়। রোববার উপজেলার দাদুয়া গ্রামের কবরস্থানে বাবা-ছেলেকে পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ শুনে শোক সইতে না পেরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবা এক ঘণ্টা পর মারা যান বলে জানা গেছে। তারা হলেন দাদুয়া গ্রামের ছাবেদ আলী (৫৮) ও তাঁর ছেলে রাব্বানী হোসেন (৩৫)।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, এক বছর ধরে রক্তশূন্যতা রোগে ভুগছিলেন রাব্বানী। নাটোর, রাজশাহী ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে প্রায় ৯ মাস চিকিৎসাও নিয়েছেন। সুস্থ হয়ে তিন মাস বাড়িতেই ছিলেন। কিছুদিন আগে ফের শরীরে জটিলতা বাড়তে থাকে। শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

পরিবারের সদস্যরা রাব্বানীকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে রাজশাহী নিয়ে যাওয়ার পথে নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কে তিনি মারা যান। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে শোক সইতে না পেরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাবা ছাবেদ আলীও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বলে পরিবারের সদস্যরা জানান। রাব্বানীর মা গোলেনুর বেগম বলেন, তাঁর ছেলে রসুনের ব্যবসা করত। লোকসান হওয়ায় দু’বছর আগে ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছিল। এক বছর পর তার শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। নিজেদের অর্থ-সম্পদ বিক্রি করে প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ করে তার চিকিৎসা করিয়েছেন। আশা ছিল, ছেলে সুস্থ হলে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবেন তারা।

মা জানান, তাদের ছেলে রাব্বানী ছাড়াও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে অনেক আগে। রাব্বানীর আয়ে সংসার চলত। স্বামী-সন্তানের মৃত্যুর পর রাব্বানীর স্ত্রী ফিরতি বেগম (৩০), মেয়ে রিমি (৭), ছেলে সিয়াম (৪) ও তিনি অভিভাবকহীন হয়ে গেলেন। বাড়ির ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছু নেই। কীভাবে তারা জীবনযাপন করবেন, তা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন।

রাব্বানীর স্ত্রী ফিরতি বেগম বলেন, স্বামী-শ্বশুরকে হারিয়ে দিশেহারা তিনি। ছোট ছোট দুই সন্তান রেখে গেছেন রাব্বানী। জমানো সব টাকা চিকিৎসায় খরচ হয়ে গেছে। শাশুড়ি-সন্তান নিয়ে তিনিও দুশ্চিন্তায় আছেন।


 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

স্বামী-সন্তানের সঙ্গে বান্দরবানে বেড়াতে যাচ্ছিলেন, মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে বাসের চাকায় মৃত্যু নারীর

চট্টগ্রামের পটিয়ায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ার পর বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নারীর নাম ফজিলাতুন নেসা (২৮)। তিনি মাগুরা জেলার মহম্মদপুর থানার মহেশপুর গ্রামের আলিমুজ্জামান সুজনের স্ত্রী।

পুলিশ জানায়, স্বামীর সঙ্গে মোটরসাইকেলে গতকাল রোববার চট্টগ্রামে বেড়াতে আসেন ফজিলাতুন নেসা। তাঁদের ছয় বছর বয়সী সন্তানও সঙ্গে ছিল। গতকাল চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটের একটি বাসায় তাঁরা রাত্রিযাপন করেন। সকালে সেখান থেকে মোটরসাইকেলে করে তাঁরা বান্দরবানের উদ্দেশে রওনা দেন। আলিমুজ্জামান মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন এবং তাঁর পেছনে ছয় বছর বয়সী সন্তান হুমায়ের হাম্মাদ, এরপর ফজিলাতুন নেসা বসে ছিলেন।

সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ার নয়াহাট এলাকায় পৌঁছায় মোটরসাইকেলটি। সেখানে সামনে থাকা একটি লেগুনা হঠাৎ সড়কে থেমে গেলে তাৎক্ষণিক মোটরসাইকেলটির ব্রেক কষেন আলিমুজ্জামান। এ সময় ফজিলাতুননেসা মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়েন। এর পরপরই পেছন থেকে একটি যাত্রীবাহী বাস ফজিলাতুন নেসাকে পিষ্ট করে। তাঁকে উদ্ধার করে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

গতকাল রাতে চট্টগ্রাম নগরের যে বাসাটিতে ফজিলাতুন নেসা ছিলেন, সেটি তাঁর স্বামী আলিমুজ্জামানের বন্ধু রবিউল ইসলামের। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রবিউল ইসলামের বোন আশরিফা আহমদ ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ফজিলাতুন নেসার স্বামী নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির কনিষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক। পরিবার নিয়ে পাহাড় দেখতে বান্দরবানে বেড়াতে যাচ্ছিলেন তিনি। বেড়াতে যাওয়ার পথেই স্বামী-সন্তানের সামনে দুর্ঘটনায় তাঁর প্রাণহানি হয়েছে।

পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট ওয়াসিম আরাফাত দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নিহত নারীর লাশ আইনি–প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। লেগুনা ও বাসের চালককে আটক করা সম্ভব হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ