ছেলের মৃত্যুর এক ঘণ্টা পর মারা গেলেন বাবা
Published: 16th, February 2025 GMT
নাটোরের গুরুদাসপুরে ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে এক ঘণ্টা পর বাবাও চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ঘটনাটি ঘটেছে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের দাদুয়া এলাকায়। রোববার উপজেলার দাদুয়া গ্রামের কবরস্থানে বাবা-ছেলেকে পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ শুনে শোক সইতে না পেরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবা এক ঘণ্টা পর মারা যান বলে জানা গেছে। তারা হলেন দাদুয়া গ্রামের ছাবেদ আলী (৫৮) ও তাঁর ছেলে রাব্বানী হোসেন (৩৫)।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, এক বছর ধরে রক্তশূন্যতা রোগে ভুগছিলেন রাব্বানী। নাটোর, রাজশাহী ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে প্রায় ৯ মাস চিকিৎসাও নিয়েছেন। সুস্থ হয়ে তিন মাস বাড়িতেই ছিলেন। কিছুদিন আগে ফের শরীরে জটিলতা বাড়তে থাকে। শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পরিবারের সদস্যরা রাব্বানীকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে রাজশাহী নিয়ে যাওয়ার পথে নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কে তিনি মারা যান। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে শোক সইতে না পেরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাবা ছাবেদ আলীও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বলে পরিবারের সদস্যরা জানান। রাব্বানীর মা গোলেনুর বেগম বলেন, তাঁর ছেলে রসুনের ব্যবসা করত। লোকসান হওয়ায় দু’বছর আগে ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছিল। এক বছর পর তার শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। নিজেদের অর্থ-সম্পদ বিক্রি করে প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ করে তার চিকিৎসা করিয়েছেন। আশা ছিল, ছেলে সুস্থ হলে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবেন তারা।
মা জানান, তাদের ছেলে রাব্বানী ছাড়াও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে অনেক আগে। রাব্বানীর আয়ে সংসার চলত। স্বামী-সন্তানের মৃত্যুর পর রাব্বানীর স্ত্রী ফিরতি বেগম (৩০), মেয়ে রিমি (৭), ছেলে সিয়াম (৪) ও তিনি অভিভাবকহীন হয়ে গেলেন। বাড়ির ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছু নেই। কীভাবে তারা জীবনযাপন করবেন, তা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন।
রাব্বানীর স্ত্রী ফিরতি বেগম বলেন, স্বামী-শ্বশুরকে হারিয়ে দিশেহারা তিনি। ছোট ছোট দুই সন্তান রেখে গেছেন রাব্বানী। জমানো সব টাকা চিকিৎসায় খরচ হয়ে গেছে। শাশুড়ি-সন্তান নিয়ে তিনিও দুশ্চিন্তায় আছেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শিশু শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত, থানায় অভিযোগ করায় নানাকে কুপিয়ে হত্যা
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনায় কয়েক বখাটের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন তার স্বজন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ছাত্রীর নানা আজগর আলীকে (৬০) কুপিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয়ভাবে বখাটে হিসেবে পরিচিত আল-আমিন নামে এক যুবক ও তার সহযোগীরা। গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার জয়মন্টপ ইউনিয়নের রায়দক্ষিণ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আজগর আলী রায়দক্ষিণ গ্রামে একটি চায়ের দোকান চালাতেন। অভিযুক্ত আল-আমিন একই গ্রামের মৃত কালু প্রামাণিকের ছেলে।
পুলিশ, নিহতের পরিবার এবং স্থানীয় সূত্র জানায়, যে শিশুটিকে উত্ত্যক্ত করত বখাটেরা, তার মা পাঁচ বছর আগে মারা যান। মেয়েটি নানা আজগর আলীর বাড়িতে থেকে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে পড়ত। বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে শিশুটিকে প্রায় উত্ত্যক্ত এবং অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করত আল-আমিন। এ নিয়ে আজগর আলীসহ মেয়েটির স্বজন বেশ কয়েকবার প্রতিবাদ করলেও কোনো কাজ হয়নি। গত সোমবার মেয়েটির নানা আজগর আলী সিংগাইর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। মঙ্গলবার অভিযোগটি তদন্ত করার পর তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয় আল-আমিন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আল-আমিন চার থেকে পাঁচটি মোটরসাইকেলে করে সহযোগীদের নিয়ে আজগর আলীর চায়ের দোকানে যায়। তারা বৃদ্ধ আজগর আলীকে দোকান থেকে বের করে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও লাটিসোঠা দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। হামলাকারীরা চলে গেলে স্বজন ও প্রতিবেশীরা আজগর আলীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে রাতেই তাঁকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা আজগর আলীকে মৃত ঘোষণা করেন।
আজগর আলীর শ্যালক নজরুল ইসলাম জানান, মাদক সেবন, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িত বখাটে আল-আমিন।
সিংগাইর থানার ওসি তৌফিক আজম বলেন, নিহতের বড় ছেলে আইয়ুব খান বুধবার আল-আমিনকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। ঘটনার পর থেকে আল-আমিন ও তার সহযোগীরা পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।