বদরের যুদ্ধে তুমুল লড়াই চলছে। চারদিকে শত্রু খুঁজছে সবাই। হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) এক জায়গায় দাঁড়িয়ে লক্ষ করেছিলেন, শত্রুকে কীভাবে ঘায়েল করা যায়। তাঁর দুই পাশে এসে দাঁড়াল দুটি বালক।

আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.)-কে তারা বলল, চাচা, আপনি আবু জাহেলকে চেনেন? আমাদের দেখিয়ে দিন। তিনি দূর থেকে আবু জাহেলকে দেখিয়ে দিলেন।

ছুটতে ছুটতে আবু জাহেলের সামনে গিয়ে হাজির হলো দুই বালক। আবু জাহেল তখন ঘোড়ায় চড়ে ছুটছিলেন। বালক দুজনের পক্ষে ঘোড়ায় চড়ে থাকা আবু জাহেলের শরীরে সরাসরি আঘাত করা অসম্ভব ছিল।

আরও পড়ুনবদর যুদ্ধের ইতিহাস: বদর যুদ্ধক্ষেত্রে একটি দিন০৯ এপ্রিল ২০২৩

একজন আক্রমণ করল আবু জাহেলের ঘোড়ায়। আরেকজন তলোয়ার দিয়ে আবু জাহেলের পায়ে।  মুহূর্তের মধ্যেই আবু জাহেল মাটিতে গড়িয়ে পড়লেন। পড়ে ছটফট করতে লাগলেন। বালক দুজন সমানতালে তাঁকে আঘাত করে চলল। তখনো আবু জাহেল মারা যাননি।

দূর থেকে বালকদের অভাবনীয় আক্রমণে আবু জাহেলের মরণদশা দেখে আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.

) এগিয়ে এলেন এবং আবু জাহেলের মৃত্যু নিশ্চিত করেন। সাহসী কিশোর দুজনের একজনের নাম মাআজ। অপরজনের নাম মুআ ওয়াজ।

বদরের যুদ্ধ মুসলিম উম্মাহর জন্য এক নিদর্শন ও অনুপ্রেরণা লাভের অন্যতম শিক্ষা। এ যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় প্রমাণ করে যে সত্যনিষ্ঠ কাজে বিজয়ের জন্য আল্লাহর ওপর ভরসা করার পাশাপাশি কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ়তা, ধৈর্য ও সহনশীলতার বিকল্প নেই। 

আরও পড়ুনপাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যেভাবে এল০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

মুসলমানদের বাহিনীর সেনাসংখ্যা ছিল ৩১৩ জন। মুহাজির ছিলেন ৮২ জন, বাকি সবাই আনসার। আওস গোত্রের ৬১ জন এবং খাজরাজ গোত্রের ১৭০ জন। মুসলিমদের উট ও ঘোড়ার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৭০টি ও ২টি। যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর ১৪ জন শহীদ হন।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মানুষের ‘দ্বিতীয় ঘুম’এর যুগ সম্পর্কে কতটা জানেন

তেলের বাতি, গ্যাসের বাতি এবং বৈদ্যুতিক বাতি ক্রমে সভ্যতায় যোগ হয়েছে। এর আগে মানুষ প্রাকৃতিক আলোর সঙ্গে মানিয়ে জীবন যাপন করতো। প্রাক-শিল্প যুগের সমাজে ‘দ্বিতীয় ঘুম’-এর অভ্যাস ছিলো মানুষের। 

দ্বিতীয় ঘুম বলতে ঐতিহাসিকভাবে প্রচলিত এমন এক ধরনের ঘুমের ধরণকে বোঝায়, যেখানে মানুষ রাতে একটানা আট ঘণ্টা না ঘুমিয়ে ঘুমকে দুটি ভাগে ভাগ করে নিত। একে দ্বি-পর্যায়ের ঘুম বা খণ্ডিত ঘুম বলা হয়। দেখা যেত যে— সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পর মানুষজন বিছানায় যেত এবং প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত। 

আরো পড়ুন:

রক্তস্বল্পতা দূর করতে এই শাক খেতে পারেন

টানা ৬ মাস রাতের খাবার দেরিতে খেলে যা হয়

প্রথম ঘুমের পর তারা প্রায় এক ঘণ্টা জেগে থাকত। এই সময়ে বাড়ির হালকা কাজ করা, প্রার্থনা করা, পড়াশোনা করা, প্রতিবেশীদের সাথে গল্প করা বা অন্তরঙ্গ কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার মতো কাজগুলো করতো।

তারা আবার বিছানায় ফিরে যেত এবং ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত আরও ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত, যাকে ‘দ্বিতীয় ঘুম’ বা ‘ভোরের ঘুম’ বলা হত।

গত দুই শতাব্দী ধরে সামাজিক জীবনে আসা পরিবর্তনের কারণে মানুষের দ্বিতীয় ঘুমের অদৃশ্য হয়ে গেছে। যেসব কারণে মানুষ দ্বিতীয় ঘুমের অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছে, তার একটি হলো ‘কৃত্রিম আলো ব্যবহার।’
১৭০০ এবং ১৮০০ এর দশকে, প্রথমে তেলের বাতি, তারপর গ্যাসের আলো এবং অবশেষে বৈদ্যুতিক আলো রাতকে আরও ব্যবহারযোগ্য করে তুলেছে। ফলে রাতও মানুষের কাছে জাগ্রত সময়ে পরিণত হতে শুরু করে। 

সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পরে ঘুমাতে যাওয়ার পরিবর্তে, মানুষ প্রদীপের আলোতে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেগে থাকতে শুরু করে। জৈবিকভাবে, রাতে উজ্জ্বল আলো আমাদের অভ্যন্তরীণ ঘড়িগুলোকে (আমাদের সার্কাডিয়ান ছন্দ) পরিবর্তন করে এবং কয়েক ঘণ্টা ঘুমের পরে আমাদের শরীরকে জাগ্রত করার প্রবণতা কমিয়ে দেয়। 

ঘুমানোর আগে সাধারণ ‘ঘরের’ আলো মেলাটোনিনকে দমন করে এবং বিলম্বিত করে। শিল্প বিপ্লব কেবল মানুষের কাজ করার পদ্ধতিই নয় বরং তারা কীভাবে ঘুমায় তাও বদলে দিয়েছে। 

২০১৭ সালে বিদ্যুৎবিহীন মাদাগাস্কান কৃষি সম্প্রদায়ের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে লোকেরা এখনও বেশিরভাগ সময় দুই ভাগে ঘুমায়, প্রায় মধ্যরাতে ঘুম থেকে ওঠে।

সূত্র: ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস অবলম্বনে

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ