তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি আমাদের অস্তিত্বের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। মঙ্গলবার বিকেলে কুড়িগ্রামের উলিপুরে ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের থেতরাই পাকার মাথায় তিস্তাপারে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির উলিপুর উপজেলার আহ্বায়ক ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হায়দার আলী মিয়ার সভাপতিত্বে এ কর্মসূচি হয়। উলিপুরসহ রংপুর বিভাগের পাঁচটি জেলার ১১টি স্থানে গতকাল সোমবার ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়েছিল।

আজ দ্বিতীয় দিনের অবস্থান কর্মসূচিতে জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এই বাংলাদেশ একা কোনো দলের নয়, কোনো গোষ্ঠীর নয়। আগামী দিনে তারেক রহমানের নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ হবে সবার বাংলাদেশ। আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে এ দেশের নদীপারের মানুষ ও বাংলাদেশের সব জনগণের বাংলাদেশ।’

আমীর খসরু আরও বলেন, ‘এই তিস্তাতীরবর্তী অঞ্চলের মানুষ পানির অভাবে হাহাকার করছে। তিস্তা নদী থেকে ভারত একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে প্রতিবছর ১৫ লাখ টন চাল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এই তিস্তা অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে এখানকার জলবায়ু, জীববৈচিত্র্য, পশুপাখি পানির জন্য হাহাকার করছে। তাই তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি আমাদের তিস্তাপারের মানুষের প্রাণের দাবি। আমাদের অস্তিত্বের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচিতে আজ সকালে কুড়িগ্রামের চিলমারী, উলিপুর উপজেলার তিস্তাপারের বাসিন্দারা যোগ দিতে শুরু করেন। আজকের কর্মসূচিতে নদীপারের কয়েক হাজার মানুষ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের কুড়িগ্রাম জেলার সমন্বয়ক ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হাসিবুর রহমান, শফিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র আম দ র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ