নবাবদের ২০০ বছরের পুরোনো সেই পুকুরে মানুষ আজও সাঁতরায়
Published: 20th, October 2025 GMT
টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন পর্যন্ত ‘বাংলা চ্যানেল’ সাঁতরে পার হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাঁতারু ফয়সাল আহমদ। তিনি থাকেন কেরানীগঞ্জে। সাগরের লম্বা পথ সাঁতরে পাড়ি দেওয়ার জন্য তিনি রোজ প্রায় দুই ঘণ্টা সাঁতারের চর্চা করেন ‘গোল তালাব’ পুকুরে।
গোলাম মোস্তফার বাড়ি গোপালগঞ্জে। তিনি পুরান ঢাকার ইসলামপুরের মার্কেট প্লাজার চাকুরে। এখানেই থাকেন। প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি গোসল করছেন তাঁর মার্কেটের পাশের এই পুকুরে।
সঞ্জয় ঘোষের বাড়ি পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার। তিনি রোজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাঠা বিক্রি করেন ‘গোল তালাব’ পুকুরের প্রবেশপথের পাশে বসে।
এই গোল তালাব পুকুরটি পুরান ঢাকার আহসান উল্লাহ রোডের পাশে। ইট-কংক্রিটে আকীর্ণ, কোলাহলময় পুরান ঢাকায় আজও টিকে থাকা এই পুকুর যেন সবুজে সলিলে একটুখানি নীরব কোমল স্নিগ্ধতা। তবে সহজেই পুকুরটি চোখে পড়ে না। এর চারপাশে তৈরি হয়েছে অসংখ্য বহুতল ভবন। এসব ভবনের আড়ালে পড়ে গেছে ঢাকার এই প্রাচীন জলাশয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এটি ‘নবাববাড়ির পুষ্করিণী’ নামেই পরিচিত।
পুকুরের ঘাটের ফটকে তাদের নাম লেখা রয়েছে। এখনো গোল তালাব পুকুর পুরান ঢাকা ও আশপাশের মানুষের জীবনযপনের অংশ হয়ে আছে। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পুকুরের ঘাট সবার জন্য খোলা থাকে।গোল তালাব পুকুর আহসান মঞ্জিলের পশ্চিম পাশে। ইসলামপুর রোড দিয়ে এখানে আসা যায়। আবার বাকল্যান্ড বাঁধ হয়ে নবাববাড়ির সামনে দিয়ে ঘুরে, আহসান উল্লাহ রোড হয়েও আসা যাবে এই পুকুরঘাটে। পুকুরের চারপাশ লোহার গ্রিল দিয়ে ঘেরা। একটিই প্রবেশপথ, পূর্ব পাশে। প্রবেশ করলেই সিঁড়িবাঁধা ঘাট। এই এলাকার অনেক মানুষ এই পুকুরে নিয়মিত গোসল করেন। গোসল করতে খরচ আগে ৫ টাকা ছিল, এখন ১০ টাকা।
পুরান ঢাকার গোল তালাব পুকুরকে ঢাকার সবচেয়ে পুরোনো পুকুরও বলা যায়। ‘গোল’ বলা হলোও পুকুরটি পুরোপুরি গোলাকার নয়। উত্তর–দক্ষিণে লম্বাটে, ডিম্বাকৃতির। ‘তালাব’ হলো উর্দু শব্দ। বাংলায় অর্থ ‘পানি’। এই পুকুরটি প্রথম কবে খনন করা হয়েছিল, তার নিশ্চিত তথ্য নেই। তবে মনে করা হয়, নবাব আবদুল বারী এটি খনন করেছিলেন। পরে নবাব খাজা আলিমুল্লা ১৮৩০ সালে পুকুরটি কিনে নিয়ে সংস্কার করেন। এরপর দ্বিতীয় দফায় ১৮৮৬ সালে পুনরায় খনন ও সংস্কারের মাধ্যমে এর বর্তমান রূপ দেওয়া হয়। পুকুরটি নবাববাড়ির ঐশ্বর্যের অংশ হয়ে ওঠে। সেই থেকে এটি ‘নবাববাড়ি পুষ্করিণী’ হিসেবেই লোকমুখে পরিচিতি পায়। এই পুকুর তখন থেকেই সামাজিক মিলন ও নানা ধরেনের আচার অনুষ্ঠানের স্থান হিসেবে ঢাকার বিনোদন কেন্দ্র হিসেবেও গণ্য হয়ে ওঠে।
সম্প্রতি গোল তালাব পুকুরে গিয়ে দেখা গেল, কেরানীগঞ্জের সাঁতারু ফয়সাল আহমদ পুকুরের ঘাটে দাঁড়িয়ে সাঁতারের পোশাক পরে পুকুরে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি জানালেন, এত বড় পুকুর আশপাশে আর নেই। বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিতে লম্বা সাঁতারের প্রস্তুতির জন্য ছয় মাস ধরে তিনি এই পুকুরে রোজ দুই ঘণ্টা করে সাঁতারের অনুশীলন করছেন।গোল তালাব পুকুরের মালিকানা নিয়ে ওয়ারিশানদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মামলা–মোকদ্দমা চলছিল। সংস্কারের অভাবে পুকুরটি সৌন্দর্য হারাচ্ছিল। শেষে সুপ্রিম কোর্টর নির্দেশে ২০০৭ সালে মৌলভি খাজা আবদুল্লাহ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট পুকুরটির মালিকানা পায়। এর পর থেকে ‘মৌলভি খাজা আব্দুল্লাহ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের বেনিফিসিয়ারিগণের পক্ষ থেকে নবাববাড়ি অ্যাংলিং’ কমিটি পুকুরটির পরিচর্যা করছে। পুকুরের ঘাটের ফটকে তাদের নাম লেখা রয়েছে। এখনো গোল তালাব পুকুর পুরান ঢাকা ও আশপাশের মানুষের জীবনযপনের অংশ হয়ে আছে। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পুকুরের ঘাট সবার জন্য খোলা থাকে।
সম্প্রতি গোল তালাব পুকুরে গিয়ে দেখা গেল, কেরানীগঞ্জের সাঁতারু ফয়সাল আহমদ পুকুরের ঘাটে দাঁড়িয়ে সাঁতারের পোশাক পরে পুকুরে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি জানালেন, এত বড় পুকুর আশপাশে আর নেই। বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিতে লম্বা সাঁতারের প্রস্তুতির জন্য ছয় মাস ধরে তিনি এই পুকুরে রোজ দুই ঘণ্টা করে সাঁতারের অনুশীলন করছেন।
পানি বিশুদ্ধ রাখার জন্য পুকুরের ভেতরে সাবান-শ্যাম্পু ব্যবহার করে গোসল করা নিষেধ। সাবান-শ্যাম্পু ব্যবহার করে গোসলের জন্য পুকুরঘাটের সঙ্গে আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে।পুকুরে প্রতিদিনের মতোই গোসল করতে এসেছিলেন অনেকে। তাঁদের একজন ছিলেন গোপালগঞ্জের গোলাম মোস্তফা।
পুকুরের ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের সদস্য খাজা গোলাম হোসেনের সঙ্গে কথা হলো। তিনি জানালেন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জাতীয় পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই পুকুরের রক্ষণাবেক্ষণে যুক্ত রয়েছে। পুকুরের পানি নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। প্রয়োজনে ওয়াসার পানি দিয়ে ভরাট করে এর পানির স্তর বজায় রাখা হয়। এই পুকুরের সঙ্গে বাইরের কোনো নালার সংযোগ বা পয়োনিষ্কাশন নর্দমার সংযোগ না থাকায় পানি সব সময় পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ থাকে। এ ছাড়া পানি বিশুদ্ধ রাখার জন্য পুকুরের ভেতরে সাবান-শ্যাম্পু ব্যবহার করে গোসল করা নিষেধ। সাবান-শ্যাম্পু ব্যবহার করে গোসলের জন্য পুকুরঘাটের সঙ্গে আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গোল তালাব পুকুরের আয়তন ২ দশমিক ২৩ একর। এর গভীরতা ২৩ ফুট। কিনার দিয়ে নারকেলগাছের সারি। আরও রয়েছে আম, নিম, আতা, খেজুরসহ নানা ধরনের গাছগাছালির সামারোহ। এই নিবিড় সবুজের সমারোহ স্বচ্ছ পানির পুকুরের দৃশ্য নয়নাভিরাম করে তুলেছে।
পুরান ঢাকার ভয়ানক যানজট আর শোরগোল পেরিয়ে গোল তালাব পুকুরের পাড়ে এসে দাঁড়ালে একটা অন্য রকম অনুভূতি হয়। এটি কেবল একটি জলাশয় নয়। মনে হয় পুকুরটি যেন পুরান ঢাকার হৃৎস্পন্দন।গোল তালাব পুকুরে মাছ চাষও করা হয়। বছরের বিভিন্ন সময় এখানে টিকিট কেটে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার ব্যবস্থা থাকে।
পুরান ঢাকার ভয়ানক যানজট আর শোরগোল পেরিয়ে গোল তালাব পুকুরের পাড়ে এসে দাঁড়ালে একটা অন্য রকম অনুভূতি হয়। এটি কেবল একটি জলাশয় নয়। মনে হয় পুকুরটি যেন পুরান ঢাকার হৃৎস্পন্দন। শহুরে মানুষের জীবন, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের অংশীদার। এই সবুজ-সলিল স্নিগ্ধতা শহরের অমূল্য স্মৃতিময় সম্পদ হয়ে এখনো বেঁচে আছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য প ক র ব যবহ র কর র প রস ত ত এই প ক র ব যবস থ আশপ শ
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেটে পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে অপহরণ, পরে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে এক তরুণকে অপহরণের পর হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার রাতে আহত অবস্থায় উদ্ধারের পর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
নিহত তরুণের নাম সাইফুল ইসলাম (২০)। তিনি উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের রাতাছড়া গ্রামের বাসিন্দা। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম শাকিল আহমদ (২৫)। তিনিও একই গ্রামের বাসিন্দা। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাইফুল ইসলামের সঙ্গে টাকার লেনদেন নিয়ে শাকিল আহমদের বিরোধ ছিল। গতকাল সন্ধ্যায় সাইফুল বাড়ি থেকে দনা বাজারে দিকে যাচ্ছিলেন। পথে সাইফুলকে একা পেয়ে মোটরসাইকেলে তুলে নেন শাকিল ও তাঁর এক সঙ্গী। এরপর বাড়িতে নিয়ে সাইফুলকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে সাইফুলের চিৎকারে আশপাশের লোকজন সেখানে এগিয়ে গেলে শাকিল ও তাঁর সঙ্গীরা পালিয়ে যান। পরে সাইফুলকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাতেই কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
পুলিশ জানায়, সাইফুলের শরীর ও মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত পাওয়া গেছে। ধারালো কিছুর আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
সিলেট সহকারী পুলিশ সুপার (কানাইঘাট সার্কেল) সালমান নূর আলম প্রথম আলোকে বলেন, সাইফুলের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে মামলা করা হয়নি। পুলিশ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আটকের চেষ্টা করছে।