অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও চিত্রশিল্পী রফিকুন নবীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের বার্ষিক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে যোগদান করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে তাকে চারুকলা থেকেই ফিরে যেতে হয় বলে জানা গেছে।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে এ ঘটনা ঘটেছে।

অনুষদের পেইন্টিং বিভাগের বার্ষিক প্রদর্শনীর পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন একুশে পদকজয়ী চিত্রশিল্পী এবং ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুন নবী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অসম্মতি থাকায় অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে চিত্রশিল্পী কামাল পাশা চৌধুরী ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। ওই পোস্টে তিনি বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, “অনুষদের পেইন্টিং বিভাগের বার্ষিকীর প্রদর্শনীর ওই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন দেশের প্রবীনতম প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী, যিনি কার্টুন শিল্পে রনবী নামে বিখ্যাত টোকাই চরিত্রের স্রষ্টা, এমিরেটাস অধ্যাপক রফিকুন্নবী। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বেই চারুকলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে বলা হয় মঞ্চে না যাওয়ার জন্য। যদিও এখনও তিনি চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক পদে আসীন।”

তিনি লেখেন, “অনুষ্ঠানে নিয়মিত পুরস্কার তালিকার বাইরেও শিল্পী রফিকুন্নবী এবার ব্যক্তিগতভাবে ২০ হাজার টাকা মূল্যমানের একটি পুরস্কার একজন সেরা ছাত্রকে প্রদান করবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই অনুষ্ঠানে আরও অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড.

সায়েমা হক বিদিশা এবং শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের পুত্র প্রকৌশলী ময়নুল আবেদিন। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বেই শিল্পী রফিকুন্নবীকে মঞ্চে উঠতে বাধা দেয়া হয়। তাঁকে বলা হয়, প্রোভিসি জানিয়েছেন শিল্পী রফিকুন নবী মঞ্চে থাকলে তিনি থাকবেন না, এ জন্য তাঁর মঞ্চে না উঠাই শ্রেয়।”

তিনি আরো লেখেন, “এ সময় অনুষ্ঠানস্থলে চারুকলার বাইরের কিছু ছাত্রকেও এই বরেণ্য শিল্পীর বিরুদ্ধে নানা কটু বাক্য বলতে দেখা যায়। যে চারুকলায় সেই প্রথম বর্ষের ছাত্র হিসাবে ঢুকে পরে শিক্ষক হয়ে গোটা জীবন অতিবাহিত করেছে, যেখানে থেকে তিনি হয়ে উঠেছেন জাতীয় পর্যায়ের এক যুগান্তরকারি চিত্রশিল্পী, সেখান থেকেই প্রচণ্ড এক অভিমান বুকে নিয়ে তিনি চলে গেলেন। আজীবন গণ-মানুষের অধিকার আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ছবি আঁকাই হয়তো তার বড় অপরাধ। রফিকুন্নবীকে মঞ্চে না উঠতে দেয়ার প্রতিবাদে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের পুত্র ময়নুল আবেদিনও মঞ্চে না উঠেই অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করে চলে যান।”

অতীতে চিত্রশিল্পী রফিকুন নবীর সংশ্লিষ্টতার কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া চলছে বলে নিশ্চিত করেছেন অনুষ্ঠানে পুরস্কার পাওয়া বিভাগটির ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী রাকিব নাওয়ার।

তিনি বলেন, “পুরস্কারটা মূলত ছিল রফিকুন নবী স্যারের নামেই। যারা পুরস্কার পেয়েছিলেন, তারা চেয়েছিলেন, যেহেতু পুরস্কারটা স্যারের নামে, সেহেতু স্যারের হাত থেকেই নেবেন। আর যারা রাজনৈতিকভাবে চিন্তা করবে তাদের বিষয়টা তো ভিন্ন।”

এ বিষয়ে এমিরেটাস অধ্যাপক রফিকুন নবী বলেন, “ব্যাপারটা একটু অতিরঞ্জিত করে প্রচার করা হচ্ছে। আমাকে মঞ্চে তোলা যাবে না, এটা শোনার পর আমি সেখান থেকে চলে আসি। তারা কেন এটা করলেন, তা তো জানি না।”

তিনি বলেন, “কেউ কেউ বলছেন, আমাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে; তেমটা নয়। আমি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। আয়োজকরা জানালেন, আমি মঞ্চে উঠলে এখানে একটু গোলমাল হতে পারে। এজন্য আমিই চলে এসেছি।”

চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আজাহারুল ইসলাম বলেন, “এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। ফেসবুকে কেউ কেউ বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য ঘটনাটা অতিরঞ্জিত করে প্রচার করছে।”

তিনি বলেন, “অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগে থেকে আয়োজিত চিত্রকর্ম প্রদর্শনীতে কারা অতিথি থাকবেন, তারাই এটা ঠিক করেছেন। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোন হস্তক্ষেপ নেই। বিভাগের শিক্ষক হিসেবে অধ্যাপক রফিকুন নবী নিজেও আয়োজক কমিটির সদস্য। শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাকে নিয়ে অসন্তোষের কথা চিন্তা করে তিনি নিজেই স্বাভাবিকভাবে চলে গেছেন। তিনি চাননি কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটুক।”

এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. ইকবাল আলীকে কল দেওয়া হয়। তিনি ফোনে চার্জ না থাকার অজুহাত দিয়ে কল কেটে দেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের নাম্বারে কল দেওয়া হয়। রিসিভ করে উপ-উপাচার্য ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেওয়া হয়।

অধ্যাপক রফিকুন নবী চলে যাওয়ার পর দুপুরে ঢাবি ওসমান জামাল মিলনায়তনে শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। উপ-উপাচার্য মামুন আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।

আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে এ প্রদর্শনী চলবে। ঢাবি শিক্ষার্থীদের আঁকা শিল্পকর্ম এ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ষ ঠ ন চ র কল

এছাড়াও পড়ুন:

ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ক্ষমা চাওয়ার পরই খেলতে রাজি হয়েছিল পাকিস্তান

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে টসের আগ পর্যন্ত দারুণ নাটকীয়তায় ঘেরা ছিল পাকিস্তানের ড্রেসিং রুম। ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টকে দায়িত্ব থেকে সরানোর দাবি তোলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে আইসিসি সে দাবি আমলে নেয়নি। শেষ পর্যন্ত নিজের ভুল স্বীকার করে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগা ও দলের ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান পাইক্রফ্ট। এরপরই মাঠে নামতে রাজি হয় পাকিস্তান দল।

ঘটনার সূত্রপাত ১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে। টসের সময় দুই অধিনায়কের করমর্দন হয়নি। আরও বড় বিতর্ক তৈরি হয় ম্যাচ শেষে। জয়ী ভারতের ক্রিকেটাররা করমর্দন এড়িয়ে দ্রুত ড্রেসিং রুমে ফিরে যান। সালমান আলী আগার নেতৃত্বে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও সূর্যকুমার যাদব, শিভাম দুবেসহ পুরো ভারতীয় দল সেই শিষ্টাচার মানেনি।

আরো পড়ুন:

আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, যে ম্যাচে ঝুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য

আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

এমন ঘটনার প্রতিবাদে পাকিস্তান অধিনায়ক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বর্জন করেন। পরে আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানায় পিসিবি। তাদের দাবি ছিল, ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ইচ্ছাকৃতভাবেই দুই অধিনায়কের হাত মেলানো আটকান, যা আইসিসির আচরণবিধি ও ক্রিকেটের স্পিরিটের পরিপন্থী।

যদিও আইসিসির ব্যাখ্যা ছিল ভিন্ন। তারা জানায়, এসিসির কর্মকর্তাদের নির্দেশেই কাজ করেছেন পাইক্রফ্ট। কিন্তু পাকিস্তান নড়েচড়ে বসে। এমনকি জানিয়ে দেয়, পাইক্রফ্ট দায়িত্বে থাকলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামবে না তারা। এই হুমকির কারণে ম্যাচের শুরুর সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় আয়োজকরা।

লাহোরে রমিজ রাজা, নাজাম শেঠিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। পরে সমঝোতার পথ খোঁজা হয়। অবশেষে পাইক্রফ্ট স্বীকার করেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণেই পরিস্থিতি এতদূর গড়ায়, এবং তিনি পাকিস্তান অধিনায়ক ও ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান। তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান দল।

বুধবার রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের সেই শেষ ম্যাচে আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে সুপার ফোরে ভারতের সঙ্গী হয় সালমান-শাহীনরা। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভারে ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় আরব আমিরাত।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ