খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) সংঘর্ষের পর ‘কুয়েটের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই কর্মসূচি থেকে ছাত্রদলকে জালিম (অত্যাচারী) না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘গত ১৬ বছরে নির্যাতনের কথা ভুলে যাবেন না। চাপাতির রাজনীতি ক্যাম্পাসে আবার রিইনস্টল (পুনরায় প্রতিষ্ঠা) করতে চাইলে ছাত্রলীগ গেছে যে পথে, আপনারা যাবেন সে পথে।’

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা বিক্ষোভ করে। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বর ঘুরে পুনরায় রাজু ভাস্কর্যে আসে। মিছিলে ‘কুয়েটে রক্ত ঝরে, ওয়াসিম তোমায় মনে পড়ে’, ‘শিক্ষা–সন্ত্রাস একসাথে চলে না’ প্রভৃতি বলে স্লোগান দেওয়া হয়। মিছিল শেষে রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।

সমাবেশে ছাত্রদলের উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘গত ১৬ বছরে যে নির্যাতন হয়েছে, আপনারা মজলুম ছিলেন, আপনারা জালিম হবেন না। মজলুম জালিম হলে পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে যায়। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইকে সম্মান জানাই। একই সঙ্গে মনে করিয়ে দিতে চাই, আবার যারা ছাত্রলীগ হয়ে উঠতে চাইবে, শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নেবে, তাদের পরিণতি ছাত্রলীগের মতোই হবে।’

গণতন্ত্রে উত্তরণের লড়াই সমন্বিত লড়াই উল্লেখ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘শহীদদের রক্তের দায় আমাদের ওপরও রয়েছে। শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে মাদার পার্টির এজেন্ডা বাস্তবায়নের রাজনীতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রিইনস্টল করতে পারি না। শিক্ষার্থীদের জন্য রাজনীতি করতে চাইলে তাঁদের ভাষায় কথা বলতে হবে, তাঁদের মতো চলতে হবে। কিন্তু আপনারা যদি আবার ক্যাডার পলিটিকস করতে চান, হল দখল, সিট বাণিজ্য, চাঁদাবাজি করতে চান, আপনাদের পরিণতি হবে সাদ্দাম–ইনানের (নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) মতো।’

গেস্টরুম ও চাঁদাবাজির স্বপ্ন আর বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হবে না–মন্তব্য করে হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘আমরা চাই না কোনো ছাত্রসংগঠন শিক্ষার্থীদের টুঁটি চেপে ধরুক। হলগুলো হবে শিক্ষার্থীদের অবারিত বিচরণের ক্ষেত্র।’

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমম্বয়ক আবদুল কাদের বলেন, জুলাই–পরবর্তী বাংলাদেশে কোনো দখলদারত্বের ঠাঁই হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন ছাত্ররাজনীতির দরকার আছে, তেমনি শিক্ষার্থীদের উদ্বেগগুলো নিয়েও কাজ করতে হবে। জোরজবরদস্তি করে যারা রাজনীতি খাওয়ানোর চেষ্টা করে, তাদের পরিণতি ছাত্রলীগের মতো হবে।

আবদুল কাদের আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগ তো অনেক পরাক্রমশালী ছিল, তাদের আমরা ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছি। আমরা ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে নিয়ে এসেছি, তারা যদি আবার শিক্ষার্থীদের ওপর হাত দিতে চায়, আমরা তাদেরও প্রতিরোধ করব।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের বিক্ষোভ কর্মসূচির দিকে ইঙ্গিত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আরেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘যারা কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে, তারা এখানে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে) নাটক করতে এসেছে। আমরা এই নাটক দেখতে চাই না। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনুরোধ করছি, যারা হামলা করেছে, তাদের যেন গ্রেপ্তার করা হয়।’

জুলাইয় আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলা এবং কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ভিডিও চিত্র আগামীকাল বুধবার বিকেলে টিএসসিতে প্রদর্শনী করার ঘোষণা দেন আবু বাকের মজুমদার।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক রিফাত রশীদ, হাসিব আল ইসলাম, রাফিয়া রেহনুমা, নিশিতা জামানসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ক ষ র থ দ র ওপর ছ ত রদল র ভ স কর য র জন ত আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

শুধু ঘোষণা নয়, বাস্তবে প্রতিফলিত হোক

রাজধানী শহরসহ দেশের বড় শহরগুলোয় শব্দদূষণের অসহনীয় মাত্রার বিষয়টি কারও অজানা নয়। এটি এখন শুধু শব্দদূষণ নয়, শব্দসন্ত্রাস বলেও অভিহিত হচ্ছে। অতীতে ও বর্তমানে সরকারগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও কার্যকর হচ্ছে না। অতীতের ধারাবাহিকতায় রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এখন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।

শহরের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নীরব এলাকা ঘোষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি অবশ্যই সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ঘোষণা বাস্তবে কার্যকর হবে, নাকি এটিও অতীতের মতো কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে? এর আগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এর আশপাশের এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু তার ফল তেমন একটা ভালো পাওয়া
যায়নি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘোষণার পর কিছু এলাকায় শব্দ কিছুটা কমলেও সার্বিকভাবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এই অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, শুধু ঘোষণা যথেষ্ট নয়, বরং এর কঠোর বাস্তবায়ন অপরিহার্য।

শব্দদূষণের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলতেই হয়। যার কারণে সাউন্ডবক্স বা মাইক বাজানোর বিষয়গুলো তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। তবে গাড়ির হর্ন এতটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করছে, যা অকল্পনীয়। এটিই এখন রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর শব্দদূষণের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অতিরিক্ত শব্দ হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটিতে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়, মেজাজ খিটখিটে হয়, মানুষ অনিদ্রায় ভোগে এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটায়। তাই শুধু অভিজাত এলাকা নয়, পুরো শহরে ধাপে ধাপে কীভাবে নীরব এলাকা ঘোষণা করা যায়, সেই লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে।

তবে এ উদ্যোগ সফল করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর হতে হবে। হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে আইন আছে। তা যদি আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে প্রয়োগ না করা হয়, এ ঘোষণা কখনোই সফল হবে না। কেবল প্রশাসনের ওপর নির্ভর না করে নীরব এলাকা–ঘোষিত এলাকাগুলোর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যেমন মসজিদ, মন্দির এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও এখানে গণসচেতনতার কাজে যুক্ত করতে হবে।

গাড়ির হর্ন বাজানো সীমিত করতে পরিবহনের বিভিন্ন ধরনের সমিতি–সংগঠনগুলোর যুক্ততাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। গাড়ির চালকদের অভ্যাসগত পরিবর্তনের জন্য শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিকটি নিয়মিতভাবে তাঁদের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। হাইড্রোলিক হর্নসহ উচ্চমাত্রার যেকোনো হর্ন উৎপাদন, আমদানি ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ