চট্টগ্রামে মাঝপথে একুশের অনুষ্ঠান বন্ধ, শিল্পীকে হেনস্তার অভিযোগ
Published: 21st, February 2025 GMT
চট্টগ্রামে অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত একটি আবৃত্তি অনুষ্ঠান মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে চট্টগ্রাম আবৃত্তি সম্মিলন।
একটি কবিতায় বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণের পর জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) নেতা-কর্মীরা গিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেন। এ সময় এমন কবিতা পড়ার জন্য এক আবৃত্তিশিল্পীকে হেনস্তা করা হয় বলে অভিযোগ।
জাসাসের নগর সভাপতি মুসা বাবলু ও সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটে। মামুনুর রশিদ প্রথম আলোর কাছে বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘ওই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড চলছিল। তাই আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। প্রশাসন অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে।’
চট্টগ্রাম আবৃত্তি সম্মিলন প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি সকালে শহীদ মিনারের পাশে টিঅ্যান্ডটি কার্যালয়ের সামনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে আসছে। চট্টগ্রামের প্রায় ২০টি সংগঠন এতে যোগ দেয়। এবারও আজ সকাল সাড়ে ৯টায় ওই স্থানে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এতে বিভিন্ন সংগঠনের আবৃত্তিশিল্পীরা কবিতা আবৃত্তি করছিলেন। পাশাপাশি গান ও কথামালাও চলছিল।
আয়োজকদের মধ্যে কয়েকজন জানান, বেলা পৌনে ১১টার দিকে এক আবৃত্তিশিল্পী কবি রবিউল হুসাইনের ‘এক সেকেন্ডে মাত্র চার ফুট’ কবিতাটি পড়ছিলেন। এই কবিতার কয়েকটি লাইনে বঙ্গবন্ধু, জয় বাংলা, একাত্তর, সাতই মার্চ, মাওলানা ভাসানী ইত্যাদি শব্দ ছিল। এই লাইনগুলো পড়ার পর মঞ্চের উল্টো পাশে পুলিশ প্লাজার সামনে থেকে জাসাসের নেতা-কর্মীরা এসে প্রতিবাদ জানান। যিনি কবিতাটি পড়ছিলেন, তাঁকে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তাঁকে ক্ষমা চাইতেও বাধ্য করা হয়। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে আয়োজকদের অন্যতম নরেন আবৃত্তি একাডেমির মিশফাক রাসেল বলেন, ‘ওই শিল্পী এমন কবিতা পড়বেন, আমরা জানতাম না। ওই কবিতার কয়েকটি লাইনের কারণে কয়েকজন এসে প্রতিবাদ জানান। এরপর অনুষ্ঠান মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়।’
জানতে চাইলে জাসাসের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘তারা পতিত শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড করছিল। কবিতায় তারা বলছিল একাত্তর ভুলে গেছি, মুক্তিযুদ্ধ ভুলে গেছি। তাই আমরা প্রথমে তাদের নিষেধ করেছি। পরে প্রতিবাদ জানিয়েছি। এরপর যে ছেলেটি কবিতা পড়ছিল, সে ক্ষমা চেয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে মামুনুর রশিদ বলেন, ‘ছেলেটাকে হেনস্তা করা হয়েছে কি না, আমি দেখিনি। আমাদের পরে পুলিশ প্রশাসন অনুষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করে।’
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওখানে একটা অনুষ্ঠানে আবৃত্তির মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বলেছে বলে আমাদের জানানো হয়। পরে আমাদের ভ্রাম্যমাণ দল ওখানে গেছে। ততক্ষণে অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।’
উল্লেখ্য, এর আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সিআরবিতে বসন্ত উৎসবের অনুষ্ঠানের অনুমতি মাঝপথে বাতিল করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার একটি বাড়িতে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার মশিপুর ইউনিয়নের ছোট ইতালি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
বিস্ফোরণে আতাউর রহমান (৩৫) নামের একজন গুরুতর আহত হন। তাঁকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আতাউর কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রামপ্রসাদের চর গ্রামের বাসিন্দা। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।।
গতকালের ওই ঘটনার পরপরই ছোট ইতালি গ্রামের বিস্ফোরণস্থল ঘিরে ফেলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও ডিবি সদস্যরা। উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েকটি তাজা হাতবোমা। বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা এসে উদ্ধার হওয়া হাতবোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করেন। পরে বাড়িটি সিলগালা করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগে আতাউর রহমানসহ কুমিল্লা থেকে আসা চার ব্যক্তি ছোট ইতালি গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেনের বাড়িতে ওঠেন। মুক্তারের স্ত্রী নাছিমা আক্তার (৪৫) মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মুক্তারের বাড়ির ভেতরে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হন। পরে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে রক্তাক্ত অবস্থায় আতাউর রহমানকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশকে খবর দেওয়ার পর মুক্তার হোসেনের তিন সহযোগী দ্রুত পালিয়ে যান। স্থানীয় লোকজন আহত আতাউরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেরাজুল হক বলেন, ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত হাতবোমা ও কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। বাগবাড়ি তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল সাদিক বাদী হয়ে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছেন। মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ঘটনার সঙ্গে আগামী নির্বাচনে নাশকতার পরিকল্পনার যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।