দীর্ঘ ১৬ বছর পর যশোর জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় স্থানীয় ঈদগা ময়দানে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন শেষে বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের।

প্রধান অতিথির বক্তব্যের পর কাউন্সিলরদের গোপন ভোটে জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা নির্বাচিত হবেন।

সম্মেলনে উপস্থিত আছেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, কেন্দ্রীয় সদস্য সাবেরুল হক সাবু, ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ূব, আবুল হোসেন আজাদ, ফিরোজা বুলবুল কলি প্রমুখ।

সম্মেলনে বিভিন্ন সময় আন্দোলন-সংগ্রামে নিহত দলের নেতা-কর্মীদের স্মরণে মঞ্চে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ছাত্র-জনতা, বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের প্রয়াত সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়। পরে সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু।

এদিকে, এ সম্মেলন ঘিরে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা বেশ উচ্ছ্বসিত। শহরজুড়ে সাজসজ্জার বাহার, প্রধান সড়কগুলোতে ব্যানার, ফেস্টুনের ছড়াছড়ি, জাতীয় নেতাদের নামে নির্মিত তোরণ বাড়িয়েছে উৎসবের আমেজ।

এর আগে সম্মেলন উপলক্ষ্যে সকাল ৯টা থেকেই ডেলিগেট, কাউন্সিলর ও আমন্ত্রিত অতিথিরা আসতে থাকেন। সকাল ১০টার মধ্যে সম্মেলনস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। জেলা উপজেলা ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মিছিলসহকারে উপস্থিত হন।

উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, দলের দুর্দিনে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তারা যেন সঠিক মূল্যায়ন পান। দলকে সুসংগঠিত করে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখবে এমন নেতৃত্ব চান নেতাকর্মীরা।

দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ যশোর জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে। সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের ১০ বছর পর ২০১৯ সালের ২০ এপ্রিল যশোর জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত তরিকুল ইসলামের সহধর্মিণী অধ্যাপক নার্গিস বেগম আহ্বায়ক এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু সদস্যসচিব হন। ওই কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে বলা হলেও পেরিয়ে যায় ৬ বছর।

শীর্ষ নেতারা বলছেন, এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করার কারণে আন্দোলন ও কমিটি গঠন ঝিমিয়ে পড়ে। গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে দলীয় বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নিতে থাকেন। সেই থেকে প্রায় প্রতিদিন ছোট-বড় বিভিন্ন কর্মসূচি চলমান রয়েছে দলটির। সম্মেলন সফল ও সার্থক করতে কয়েকদিন ধরেই দিনরাত কাজ করেছেন বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী।

১৬ বছর পর এই সম্মেলনে সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক এই দুটি পদে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে। সাধারণ সম্পাদক পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় দেলোয়ার হোসেন খোকনের জয় নিশ্চিত। অন্যদিকে সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন।

সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন দলের সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও যশোর চেম্বারের সভাপতি মিজানুর রহমান খান এবং যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মারুফুল ইসলাম মারুফ। সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্য লড়ছেন নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সদ্য বিদায়ী কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম, যশোর সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী আজম ও সাবেক ছাত্রনেতা শহিদুল বারী রবু।

বিএনপি নেতাকর্মীদের মতে, সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, তবে ত্যাগী ও যোগ্য নেতারাই জয়ী হবেন বলে প্রত্যাশা।

সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে দুপুর দুইটা থেকে বিকাল পাচটা পর্যন্ত যশোর মুন্সী মেহেরুল্লাহ ময়দানের আলমগীর সিদ্দিকী হলে নেতা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। আট উপজেলার ১৬টি ইউনিটে ১৬১৬ ভোটার ভোট প্রদান করবেন। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ স ব র ল হক স ব ন ত কর ম র ব এনপ র স বছর পর অন ষ ঠ সদস য ইসল ম উপস থ গঠন র

এছাড়াও পড়ুন:

মঙ্গলবার কুয়াকাটায় রাস উৎসব, গঙ্গা স্নান বুধবার

প্রায় ২০০ বছর ধরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মদনমোহন সেবাশ্রম মন্দির ও কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরে পৃথক আয়োজনে রাস উৎসব পালন করে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এবছরও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে হবে এ উৎসব। রাস উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ায় বসছে ৫ দিনব্যাপী মেলা। 

কলাপাড়ায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শেষ সময়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে মন্দিরের আঙ্গিনাসহ রাধা ও কৃষ্ণের ১৭ জোড়া প্রতিমা।

মঙ্গলবার পূর্ণিমা তিথিতে রাত ৯টা ২২ মিনিটে অধিবাসের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে রাস পূজার আনুষ্ঠানিকতা। পরের দিন বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৬ মিনিটে এ তিথি শেষ হবে। সেদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কুয়াকাটা সৈকতে গঙ্গা স্নান করবেন পুণ্যার্থীরা। এর পর মন্দিরের আঙ্গিনায় রাধা-কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন করবেন তারা। তাই, দুই মন্দিরেই ১৭ জোড়া প্রতিমা বানানো হয়েছে। প্যান্ডেল সাজানোর কাজ শেষ। চলছে লাইটিং ও সাজসজ্জার কাজ। 

এ উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ার মন্দির প্রাঙ্গণ, কুয়াকাটার মন্দির প্রাঙ্গণ ও সৈকতে অস্থায়ীভাবে বসছে শতাধিক পোশাক, প্রসাধনী, খেলনা ও গৃহস্থালী সামগ্রীর দোকান। কুয়াকাটায় তিন দিনব্যাপী উৎসব হলেও কলাপাড়ায় এ উৎসব চলবে পাঁচ দিন। এসব দোকানে অন্তত ৩০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রির আশা করছেন আয়োজকরা। 

কলাপাড়ার শ্রী শ্রী মদনমোহন সেবাশ্রমের রাস উদযাপন কমিটির সভাপতি দিলীপ কুমার হাওলাদার বলেছেন, আজকের মধ্যেই আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। হিন্দু ধর্মালম্বীদের এ উৎসব হলেও এখানে ৫ দিনব্যাপী মেলায় সব ধর্মের মানুষের আগমন ঘটে। আমাদের মন্দির প্রাঙ্গণে অন্তত ৭০টি দোকান বসেছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে রাস উৎসব সম্পন্ন হবে। 

কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নীহার রঞ্জন মন্ডল বলেছেন, আগামীকাল রাতভর মন্দির প্রাঙ্গণে ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলবে। পরদিন সকালে গঙ্গা স্নান হবে। লাখো পুণ্যার্থীর আগমনের আশা করছি আমরা। বুধবারও গঙ্গা স্নান হবে। উৎসব উপলক্ষে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউসার হামিদ বলেছেন, রাস উৎসব উপলক্ষে কুয়াকাটায় ১ লাখ পুণ্যার্থী সমাগমের আশা করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে। 

ঢাকা/ইমরান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ