সরকারি লেনদেন ‘ক্যাশলেস’ করার উদ্যোগ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রাহক হিসাবের সঠিকতা যাচাইয়ে অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম (এভিএস) পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছে সরকার। আগামী জুনে দেশব্যাপী এর প্রয়োগ হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তারা আরও বলেন, নতুন এ ব্যবস্থা সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। একই সঙ্গে জালিয়াতি রোধ ও অর্থ অপচয় রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

গতকাল শনিবার মিরপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমিতে অর্থ বিভাগের স্ট্রেনদেনিং পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল প্রোগ্রাম টু অ্যানাবেল সার্ভিস ডেলিভারি (এসপিএফএমএস) আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমের সঙ্গে সমন্বিত বাজেট ও হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি বা ‘আইবাস প্লাস প্লাস’ সফটওয়্যারের ইন্ট্রিগেশন এবং গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম পাইলটিং পরে সব পর্যায়ে বাস্তবায়ন রূপরেখা প্রণয়নকে সামনে রেখে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এসপিএফএমএস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
কর্মশালায় জানানো হয়, গত ২৬ জানুয়ারি থেকে চারটি চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স অফিসে পরীক্ষামূলকভাবে এভিএস সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী জুনের মধ্যে দেশের প্রতিটি হিসাবরক্ষণ অফিসে এভিএস সিস্টেম বাস্তবায়ন করা হবে।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড.

মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এভিএস চালুর ফলে সরকারি লেনদেন আরও সহজ ও সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে। এর মাধ্যমে সরকারি অর্থ সঠিক প্রাপকের হিসাবে পৌঁছানো নিশ্চিত হবে। কমবে গ্রাহক ভোগান্তি। এ ছাড়া সরকারি ব্যাংক হিসাবের তথ্য যাচাই করা সম্ভব হবে, যা অর্থ ব্যবস্থাপনার নিরাপত্তা বাড়াবে। 
অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বিলকিস জাহান বলেন, এভিএস সিস্টেম বাস্তবায়নের মূল উদ্দেশ্য সরকারি সব পেমেন্ট ক্যাশলেস করার মাধ্যমে ব্যয় ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে এ পদ্ধতিতে জালিয়াতি ও অর্থের অপচয় রোধ হবে। গ্রাহকদের ভোগান্তি কমবে এবং  সঠিক প্রাপকের ব্যাংক হিসাবে অর্থ প্রেরণ নিশ্চিত হবে। তিনি আরও বলেন, এই সিস্টেম সরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের তথ্য যাচাই করা এবং চেক ছাপানোর জন্য সরকারের ব্যয় বাবদ ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা সাশ্রয়ে ভূমিকা রাখবে।
সব পর্যায়ে এ উদ্যোগের বাস্তবায়ন রূপরেখা প্রণয়ন বিষয়ে কর্মশালায় উপস্থাপনা তুলে ধরেন বাংলাদেশ ব্যাংক আইসিটি বিভাগের নির্বাহী পরিচালক দেবদুলাল রায়। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল নদ ন অ য প ব যবস থ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ