‘আম্মা, আমারে মাফ করছোনি? আম্মা, আমি আর আধাঘণ্টা বাঁচুম। আমারে শরীরে কিতা য্যান দিছে গো। আমি মইরা যাইতেছি।’ এই আর্তনাদ কণ্ঠ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার রাসেল মিয়ার, যাকে দু’দিন আগে দালালরা লিবিয়ায় বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে হত্যা করেছে। রোববার সমকাল এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপিয়েছে।
ভালো জীবনযাপনের আশায় অনেক মানুষ বিদেশ গমন করেন। রাসেল মিয়াও পরিবারের মোড় ঘুরিয়ে দিতে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ইতালি যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দালাল চক্র তাঁর সেই স্বপ্ন শুধু মাটিচাপাই দেয়নি; তাঁকে নিষ্ঠুরতম উপায়ে হত্যাও করেছে। দুই দফায় ৩০ লাখ টাকা দিয়েও বেচারা রেহায় পাননি!
বাংলাদেশে এ ধরনের নিষ্ঠুর, পাশবিক ঘটনা নতুন নয়। দেশে পাচার চক্র গড়ে উঠেছে; সেটিও বিদ্যমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ। পাচার চক্রের সঙ্গে বিভিন্ন সিন্ডিকেট ও রাজনৈতিক মহলের সরাসরি যোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশের বেশির ভাগ অবৈধ এজেন্সি রাজনীতিবিদদের মালিকানায়। তাদের কারসাজিতে পাচার চক্রগুলো দিব্যি কাজ করে। যেখানে রাজনীতিবিদরা সরাসরি অপরাধের সঙ্গে যুক্ত, সেখানে সমস্যা নিরসনের ব্যাপারটি অলীক ছাড়া আর কী!
গত বছর সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়ায় দেশের সিন্ডিকেট নিয়ে ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছিল, যেখানে স্বয়ং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। একটি সংবাদমাধ্যমের প্রধান শিরোনাম ছিল ‘হাসিনার ইচ্ছায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট’। প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শ্রমিক পাঠাতেন। এর পেছনে রয়েছে অন্তত ২০০টি রিক্রুটিং এজেন্সি। এসব ঘটনায় বাংলাদেশিদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি ড.
মূলত রাসেল মিয়ার সঙ্গে যে পাশবিক ঘটনা ঘটেছে, তার বন্দোবস্ত আমাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতেই বিদ্যমান। দেশের ভেতরে-বাইরে যে পাচার চক্র সক্রিয়, তার গোড়ার সমাধান করতে হবে রাজনৈতিকভাবেই। ইতোমধ্যে পত্রপত্রিকায় অবৈধ এজেন্সিগুলোর ব্যাপারে বহু প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। এখন দরকার এজেন্সিগুলোর মালিকদের বিচারের মুখোমুখি করে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিদেশযাত্রায় সহজ প্রক্রিয়ার বন্দোবস্ত করা।
অন্তর্বর্তী সরকার প্রবাসীদের ব্যাপারে ইতোমধ্যে কিছু প্রশংসনীয় পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। যেমন বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জন্য ভিআইপি সেবা চালু। আমাদের এখন দরকার বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার পাশাপাশি খরচ সামর্থ্যের মধ্যে নিয়ে আসা এবং সরকারি-বেসরকারি এজেন্সিগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য দেশে শ্রমিক পাঠিয়ে দেশের অর্থনৈতিক সংকট স্থায়ীভাবে নিরসন করা সম্ভব নয়। টেকসই সমাধানের জন্য দেশের মধ্যেই মৌলিক পুনর্গঠন আবশ্যক। বিপুলসংখ্যক তরুণকে দক্ষ করে গড়ে তোলা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা গেলে তাদের বিদেশ পাড়ি দিতে হতো না। গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে সেই সম্ভাবনা কিছুটা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু স্রেফ নির্বাচনের কথা বলে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার ধারক-বাহকরা সেই পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাই রাসেলের মতো অসংখ্য মানুষের বিদেশ গমন নিরাপদ ও নিশ্চিত করতে হলে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ ১৭/১৮ কোটি মানুষের দেশ। কিন্তু কর্মসংস্থানের অভাবে এই বিপুলসংখ্যক মানুষের শক্তি যথাযথভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ফলে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক হিসেবে পাড়ি জমান। রাষ্ট্রের দিক থেকে এটা আমাদের জন্য যেমন লজ্জাজনক, তেমনি তা অক্ষমতা ও ব্যর্থতা হিসেবেই তুলে ধরে। নিঃসন্দেহে প্রবাসীদের রক্ত ও ঘামের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও ধসে পড়েনি। কেবল এ খাত বন্ধ হলেই দেশের অর্থনীতি ভয়াবহ সংকটে পড়বে।
ইফতেখারুল ইসলাম: সহসম্পাদক, সমকাল
iftekarulbd@gmail.com
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত ক র জন য ন র জন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার একটি বাড়িতে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার মশিপুর ইউনিয়নের ছোট ইতালি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
বিস্ফোরণে আতাউর রহমান (৩৫) নামের একজন গুরুতর আহত হন। তাঁকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আতাউর কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রামপ্রসাদের চর গ্রামের বাসিন্দা। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।।
গতকালের ওই ঘটনার পরপরই ছোট ইতালি গ্রামের বিস্ফোরণস্থল ঘিরে ফেলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও ডিবি সদস্যরা। উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েকটি তাজা হাতবোমা। বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা এসে উদ্ধার হওয়া হাতবোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করেন। পরে বাড়িটি সিলগালা করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগে আতাউর রহমানসহ কুমিল্লা থেকে আসা চার ব্যক্তি ছোট ইতালি গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেনের বাড়িতে ওঠেন। মুক্তারের স্ত্রী নাছিমা আক্তার (৪৫) মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মুক্তারের বাড়ির ভেতরে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হন। পরে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে রক্তাক্ত অবস্থায় আতাউর রহমানকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশকে খবর দেওয়ার পর মুক্তার হোসেনের তিন সহযোগী দ্রুত পালিয়ে যান। স্থানীয় লোকজন আহত আতাউরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেরাজুল হক বলেন, ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত হাতবোমা ও কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। বাগবাড়ি তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল সাদিক বাদী হয়ে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছেন। মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ঘটনার সঙ্গে আগামী নির্বাচনে নাশকতার পরিকল্পনার যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।