রাজধানীর বনশ্রীতে গতকাল রোববার রাতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে ‘স্বর্ণালংকার ছিনিয়ের’ ঘটনার একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটির যথার্থতা নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়ানো ভিডিওটি ৩২ সেকেন্ডের। ভিডিওটি ঘটনাস্থলের কোনো ভবনের ওপরের দিক থেকে তোলা বলে মনে হয়।

ব্যাপক চিৎকার-চেঁচামেচি দিয়ে ভিডিওটি শুরু হয়। ভিডিওর পুরোটা সময়জুড়ে চিৎকার-চেঁচামেচি শোনা যায়। ভিডিওর শুরুর দিকে যাঁর চিৎকার বেশি শোনা যাচ্ছিল, তিনি সম্ভবত ‘ভুক্তভোগী’ ব্যক্তি। তিনি ‘ও আম্মা গো’ বলে বারবার চিৎকার করছিলেন।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, রাতের বেলা একটি বাসার সামনে এক ব্যক্তির সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছেন একজন। তাঁদের একজন নিচে, অপরজন ওপরে। তাঁদের পাশে দাঁড়ানো ছিলেন দুই ব্যক্তি। দুজনেরই মাথায় হেলমেট। একজনের মাথায় কালো রঙের হেলমেট, অপরজনের লাল রঙের হেলমেট। তিনটি মোটরসাইকেল কাছে এসে দাঁড়ায়। তখন তিনটি মোটরসাইকেলে মোট চারজন আরোহী ছিলেন। একটিতে চালকসহ দুজন আরোহী ছিলেন। দুটি মোটরসাইকেল কাছেই দাঁড়িয়ে থাকে। অপরটি একটু সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

ধস্তাধস্তিতে নিচে পড়া ব্যক্তির হাত থেকে ব্যাগের মতো দেখতে কিছু একটা ছিনিয়ে নেন কালো হেলমেট পড়া ব্যক্তি। একজনের সঙ্গে ধস্তাধস্তির মধ্যে ‘ভুক্তভোগী’ ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে কিছুটা দূর থেকে গুলি করেন লাল হেলমেট পরা ব্যক্তি। তখনো একজনের সঙ্গে ভুক্তভোগীর ধস্তাধস্তি চলছি। গুলির পর ভুক্তভোগী ব্যক্তি তাঁর হাতে ছাড়িয়ে পেছনের দিকে দ্রুত সরতে থাকেন।

ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়া ব্যক্তি কিছু দৌড়ে গিয়ে একদম সামনে থাকা মোটরসাইকেলটির পেছনে চেপে বসেন।

লাল হেলমেট ধারীসহ অন্য দুজন আরেকটি মোটরসাইকেলের পেছনে বসেন। পরে মোটরসাইকেল তিনটি দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।

মোটরসাইকেল তিনটি চলে যাওয়ার পর ভিডিওতে কাউকে প্রশ্ন করতে শোনা যায়, ছিনতাইকারী.

..ছিনতাইকারী? তখন আরেকজন বলেন, হ্যাঁ, ছিনতাইকারী।

রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান আকন্দ বলেন, ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম মো. আনোয়ার। তিনি স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তাঁর দোকান বনশ্রী ডি ব্লকে। গতকাল রাতে দোকান থেকে বাসায় ফেরার সময় তিনি ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। একই ব্লকে তাঁর বাসার সামনেই এই ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারীরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে, ছুরিকাঘাত করে। তাঁর কাছে থাকা স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়েছেন ছিনতাইকারীরা।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, ছিনতাইকারীরা তাঁর কাছ থেকে ২০০ ভরি স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়েছে।

আহত অবস্থায় আনোয়ারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। হাসপাতাল সূত্র জানায়, আনোয়ারের শরীরে গুলি ও কোপের চিহ্ন রয়েছে।

ওসি আতাউর রহমান আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বলে মনে করছেন তাঁরা। এই ঘটনায় মোট সাতজন সরাসরি জড়িত। তাঁদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁদের ধরার চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুনবনশ্রীতে বাসার সামনে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি, ‘২০০ ভরি স্বর্ণালংকার’ ছিনতাই১১ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বর ণ ল ক র ছ ন য় ধস ত ধস ত ব যবস য়

এছাড়াও পড়ুন:

স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি দগ্ধ রোগীকেও বাঁচানো যায়

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে হতাহত হওয়ার ঘটনার পর দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংকের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এ ব্যাংকের অবস্থান। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মাইলস্টোনের ঘটনার পর অনেকেই স্কিন (চামড়া বা ত্বক) দান করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে ইনস্টিটিউটে যোগাযোগ করছেন। স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি পুড়ে যাওয়া রোগীকেও বাঁচানো সম্ভব।

২১ জুলাই দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। গত সোমবার রাত ১০টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ৩৪ জন মারা গেছে। আর সোমবার বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৪৫ জন। তাদের মধ্যে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৩৩ জন।

দেশে স্কিন ব্যাংকের যাত্রা শুরুর পর দান করা ত্বক ব্যবহার করে ১০ জন দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯ জনই বেঁচে গেছেন। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় একজন মারা গেছেন।

জীবিত ব্যক্তির শরীর থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করা ত্বক মারাত্মকভাবে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া যে কেউ চাইলে মরণোত্তর ত্বক দান করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দাতার মৃত্যুর পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মরদেহ থেকে ত্বক সংগ্রহ করা হয়। পরে সেই ত্বক দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।

ওজন কমানোসহ কিছু প্লাস্টিক সার্জারির পর বেঁচে যাওয়া ত্বক সংরক্ষণ করার মধ্য দিয়ে দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংকটি যাত্রা শুরু করে। আগে এ ধরনের অস্ত্রোপচারের পর বাড়তি ত্বক ফেলে দেওয়া হতো।

স্কিন ব্যাংকের সমন্বয়কারী ও জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুব হাসান প্রথম আলোকে বলেন, মাইলস্টোনের ঘটনার পর ত্বকদানের বিষয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে; বিশেষত অনেক নারী আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে যোগাযোগ করেছেন।

তবে সমস্যা হলো, আগ্রহী ব্যক্তিদের বেশির ভাগ চাইছেন, মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ শিক্ষার্থীদের শরীরে যাতে তাঁদের দান করা ত্বক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে প্রক্রিয়া শেষে কার দান করা ত্বক কার শরীরে ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়া ত্বক দান করার ক্ষেত্রে স্ক্রিনিংসহ পুরো প্রক্রিয়া শুনে অনেকে আর আগ্রহ দেখাননি। এখন পর্যন্ত যাঁরা যোগাযোগ করেছেন, তাঁদের মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ জন ত্বক দান করতে চেয়েছেন বলে জানান চিকিৎসক মাহবুব হাসান।

ভবিষ্যতে দগ্ধ রোগীর চিকিৎসায় ত্বক সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। ত্বক সংগ্রহের পর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। তাহলে সেই ত্বক পাঁচ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে।মাহবুব হাসান, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক।

৩ জুলাই মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম আন্তর্জাতিক দগ্ধ ও আঘাতপ্রাপ্তদের সম্মেলন। এই সম্মেলনে ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ফার্স্ট স্কিন ব্যাংক ইন বাংলাদেশ: দ্য ওয়ে অব ওভার কামিং দ্য চ্যালেঞ্জেস’ শিরোনামের বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাহবুব হাসান। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, দেশে স্কিন ব্যাংকের যাত্রা শুরুর পর দান করা ত্বক ব্যবহার করে ১০ জন দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯ জনই বেঁচে গেছেন। আর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় একজন মারা গেছেন।

আপাতত রেজিস্ট্রেশন ও স্ক্রিনিং

দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংক উদ্বোধন করা হয় গত ৯ জানুয়ারি। তবে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়। ব্যাংকটিতে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল। বর্তমানে এই ব্যাংকে দুজন চিকিৎসক ও একজন নার্স দায়িত্ব পালন করছেন।

স্কিন ব্যাংক যাত্রা শুরুর পর মোট ১৪ হাজার ৫০০ সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মাইলস্টোনের ঘটনার আগপর্যন্ত ৯ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যাংকে ছিল। মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গত রোববার পর্যন্ত এ ব্যাংক থেকে সাড়ে ৩ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যবহার করা হয়েছে।

স্কিন ব্যাংক যাত্রা শুরুর পর মোট ১৪ হাজার ৫০০ সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মাইলস্টোনের ঘটনার আগপর্যন্ত ৯ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ছিল। মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গত রোববার পর্যন্ত এ ব্যাংক থেকে সাড়ে তিন হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যবহার করা হয়েছে।

মাইলস্টোনের ঘটনার পর ত্বকদানের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ত্বকদানের আহ্বান জানিয়ে অনেকেই পোস্ট দিচ্ছেন। তবে কিছু কিছু ভুল তথ্যও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে।

আরও পড়ুনস্কিন ব্যাংক চালু হলো বাংলাদেশে, দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত২৫ জুলাই ২০২৫

মাইলস্টোনের ঘটনার পর জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অনেকেই ত্বক দান করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্বক সংরক্ষিত আছে।

এ বিষয়ে চিকিৎসক মাহবুব হাসান বলেন, এ মুহূর্তে ত্বকদানে আগ্রহী ব্যক্তিদের রেজিস্ট্রেশন আর স্ক্রিনিং করে রাখার বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে, যাতে জরুরি প্রয়োজনে তাঁদের কাছ থেকে ত্বক সংগ্রহ করা যায়।

সংগ্রহ করা ত্বক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখলে পাঁচ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আ.লীগ নেতা–কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে গ্রেপ্তার ২২, সেনা হেফাজতে মেজর
  • দেশের চারজনের একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার
  • ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে
  • ডেঙ্গুতে দুজনের, করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু
  • জাওয়াইদেহ বেদুইনদের মৌখিক সাহিত্য
  • রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর
  • ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
  • সিরিজের শেষ ম্যাচে নেই স্টোকস, দায়িত্বে পোপ
  • সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
  • স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি দগ্ধ রোগীকেও বাঁচানো যায়