লালকুঠির সংস্কার আটকে দিয়েছে ফরাশগঞ্জ ক্লাব
Published: 24th, February 2025 GMT
ঐতিহাসিক লালকুঠি (নর্থব্রুক হল) ভবনের সংস্কারকাজ থামিয়ে দিয়েছে ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব। তারা সেখানে আড়ত ও আটতলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে আবদার করেছে।
১৮৭৪ সালে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে লালকুঠি নির্মাণ করা হয়। মোগল ও ইংরেজ স্থাপত্যশৈলীর এ ভবন ঢাকার সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম কেন্দ্র ছিল। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে পরিণত হয় জীর্ণ ভবনে। গত জুনে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ঢাকা সিটি নেইবারহুড আপগ্রেডিং প্রজেক্টের (ডিসিএনইউপি) অধীনে শুরু হয় সংস্কারকাজ।
জানা যায়, নির্মাণশৈলী অক্ষুণ্ন রেখে লালকুঠি ভবনে একটি টাউন হল, প্রদর্শনী হল, ব্যাংকুয়েট হল, সেমিনার হল ও ফটোশুটের স্থান নির্মাণ করা হবে। জনসন হল অংশে একটি পাবলিক লাইব্রেরি, আর্কাইভ, বুক ক্যাফে ও স্যুভেনির সেলস বুথ করা হবে। করিডোর অংশকে ছোট প্রদর্শনী স্থান হিসেবে ব্যবহার করা হবে। লালকুঠির বহিরাংশেও করা হবে নানা কাজ। হবে একটি কমিউনিটি সেন্টার।
ঢাকার ঐতিহাসিক এ নিদর্শনে আবারও প্রাণ ফেরানোর জন্য যাবতীয় পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষে লালকুঠি থেকে বুড়িগঙ্গা নদী ৪৫ ডিগ্রি কোণে সরাসরি দেখার আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা রয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগ জানায়, লালকুঠি সংস্কারের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নর্থব্রুক ও জনসন হলের কাজ প্রায় শেষ। বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে বেঞ্চ সাইটের অর্ধেক কাজ হয়েছে। বাকি কাজের জন্য সরানো হয়েছে ওয়াসার পানির পাম্প। ভবনের উত্তর পাশের সামনে মার্বেল পাথরে তৈরি করা হয়েছে ফোয়ারা।
প্রকল্প অনুযায়ী, লালকুঠির ফরাশগঞ্জ ক্লাব ঘেঁষে একটি কার পার্কিং ও দুটি ফটক থাকবে। কিন্তু ভবনের দক্ষিণ পাশে বুড়িগঙ্গার বেঞ্চ সাইটের জায়গায় একটি আটতলা বাণিজ্যিক ভবন ও উত্তর পাশে কার পার্কিংয়ের জায়গায় আড়ত করার দাবিতে গত ডিসেম্বরে কাজ বন্ধ করে দেয় ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া পাশে চারতলা কমিউনিটি সেন্টারের নির্মাণকাজ একই সময় থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে।
লালকুঠি সংস্কারকাজের ঠিকাদার ঢালী কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মেজবাহউদ্দিন ভূঁইয়া মুরাদ সমকালকে জানান, গত ২০ ডিসেম্বর ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের লোকজন এসে সংস্কারকাজ বন্ধ করে দেয়। এর পর থেকে মূল ভবনের টুকটাক ছাড়া বাইরের কাজ বন্ধ। সিটি করপোরেশনও নকশা সংস্কার করে না দেওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে বলেছে। সম্প্রতি ভারত থেকে আনা দেড় লাখ টাকার মার্বেল পাথর চুরি হয়ে গেছে। নিরাপত্তা সংকটে দামি লাইট স্থাপন করা যাচ্ছে না। নিয়মিত কাজ করা গেলে আগামী ৩০ মার্চের মধ্যেই সংস্কারকাজ শেষ হতো বলে মনে করেন তিনি।
ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও ডিসিএনইউপির প্রকল্প পরিচালক রাজীব খাদেম বলেন, ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের আয় বৃদ্ধির জন্য কর্তৃপক্ষ আড়ত, আটতলা ভবন ও ক্লাব সংস্কারের দাবি জানায়। কিন্তু হেরিটেজ ভবনের ৯ মিটারের মধ্যে স্থাপনা করার সুযোগ নেই। বড় কথা, প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন হবে। নকশা পরিবর্তন করা হবে না। সমঝোতা অনুযায়ী সিটি করপোরেশন ক্লাব সংস্কার করে দেবে।
সংস্কারকাজের মূল দায়িত্বে থাকা স্থপতি ও স্থাপত্য সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু সাঈদ বলেন, ‘ক্লাবের আয় সেখানকার কমিউনিটি সেন্টার ও প্লাজাগুলো পরিচালনা করেই হতে পারে। কিন্তু আইন অমান্য করে হেরিটেজের ৯ মিটারের মধ্যে স্থাপনা করা ঠিক হবে না।’
ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের সদস্য সচিব ও সূত্রাপুর থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ আজিজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে দায়িত্ব পেয়েছি। তহবিল ফাঁকা; আয়ের সব উৎস বন্ধ। লালকুঠির মধ্যে ক্লাব ঘেঁষে আমাদের যে আড়ত ছিল, তা ভেঙে দিয়েছে। এটি আবারও করপোরেশনকে করে দিতে বলেছি। ক্লাবের তিনতলা ভবনটি আটতলা পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবি জানালে করপোরেশন ছয়তলা পর্যন্ত রাজি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে পূর্ব ও পশ্চিমের দু’দিকে সীমানা নির্ধারণ করে সেখানে ৮-১০ তলা ভবন এবং সিটি করপোরেশনের মার্কেট ভেঙে পুনরায় কমিউনিটি সেন্টার করে দিতে বলেছি।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক জ বন ধ প রকল প ভবন র
এছাড়াও পড়ুন:
মঙ্গলবার কুয়াকাটায় রাস উৎসব, গঙ্গা স্নান বুধবার
প্রায় ২০০ বছর ধরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মদনমোহন সেবাশ্রম মন্দির ও কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরে পৃথক আয়োজনে রাস উৎসব পালন করে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এবছরও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে হবে এ উৎসব। রাস উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ায় বসছে ৫ দিনব্যাপী মেলা।
কলাপাড়ায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শেষ সময়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে মন্দিরের আঙ্গিনাসহ রাধা ও কৃষ্ণের ১৭ জোড়া প্রতিমা।
মঙ্গলবার পূর্ণিমা তিথিতে রাত ৯টা ২২ মিনিটে অধিবাসের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে রাস পূজার আনুষ্ঠানিকতা। পরের দিন বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৬ মিনিটে এ তিথি শেষ হবে। সেদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কুয়াকাটা সৈকতে গঙ্গা স্নান করবেন পুণ্যার্থীরা। এর পর মন্দিরের আঙ্গিনায় রাধা-কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন করবেন তারা। তাই, দুই মন্দিরেই ১৭ জোড়া প্রতিমা বানানো হয়েছে। প্যান্ডেল সাজানোর কাজ শেষ। চলছে লাইটিং ও সাজসজ্জার কাজ।
এ উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ার মন্দির প্রাঙ্গণ, কুয়াকাটার মন্দির প্রাঙ্গণ ও সৈকতে অস্থায়ীভাবে বসছে শতাধিক পোশাক, প্রসাধনী, খেলনা ও গৃহস্থালী সামগ্রীর দোকান। কুয়াকাটায় তিন দিনব্যাপী উৎসব হলেও কলাপাড়ায় এ উৎসব চলবে পাঁচ দিন। এসব দোকানে অন্তত ৩০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রির আশা করছেন আয়োজকরা।
কলাপাড়ার শ্রী শ্রী মদনমোহন সেবাশ্রমের রাস উদযাপন কমিটির সভাপতি দিলীপ কুমার হাওলাদার বলেছেন, আজকের মধ্যেই আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। হিন্দু ধর্মালম্বীদের এ উৎসব হলেও এখানে ৫ দিনব্যাপী মেলায় সব ধর্মের মানুষের আগমন ঘটে। আমাদের মন্দির প্রাঙ্গণে অন্তত ৭০টি দোকান বসেছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে রাস উৎসব সম্পন্ন হবে।
কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নীহার রঞ্জন মন্ডল বলেছেন, আগামীকাল রাতভর মন্দির প্রাঙ্গণে ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলবে। পরদিন সকালে গঙ্গা স্নান হবে। লাখো পুণ্যার্থীর আগমনের আশা করছি আমরা। বুধবারও গঙ্গা স্নান হবে। উৎসব উপলক্ষে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউসার হামিদ বলেছেন, রাস উৎসব উপলক্ষে কুয়াকাটায় ১ লাখ পুণ্যার্থী সমাগমের আশা করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে।
ঢাকা/ইমরান/রফিক