ঐতিহাসিক লালকুঠি (নর্থব্রুক হল) ভবনের সংস্কারকাজ থামিয়ে দিয়েছে ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব। তারা সেখানে আড়ত ও আটতলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে আবদার করেছে। 
১৮৭৪ সালে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে লালকুঠি নির্মাণ করা হয়। মোগল ও ইংরেজ স্থাপত্যশৈলীর এ ভবন ঢাকার সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম কেন্দ্র ছিল। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে পরিণত হয় জীর্ণ ভবনে। গত জুনে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ঢাকা সিটি নেইবারহুড আপগ্রেডিং প্রজেক্টের (ডিসিএনইউপি) অধীনে শুরু হয় সংস্কারকাজ।
জানা যায়, নির্মাণশৈলী অক্ষুণ্ন রেখে লালকুঠি ভবনে একটি টাউন হল, প্রদর্শনী হল, ব্যাংকুয়েট হল, সেমিনার হল ও ফটোশুটের স্থান নির্মাণ করা হবে। জনসন হল অংশে একটি পাবলিক লাইব্রেরি, আর্কাইভ, বুক ক্যাফে ও স্যুভেনির সেলস বুথ করা হবে। করিডোর অংশকে ছোট প্রদর্শনী স্থান হিসেবে ব্যবহার করা হবে। লালকুঠির বহিরাংশেও করা হবে নানা কাজ। হবে একটি কমিউনিটি সেন্টার।
ঢাকার ঐতিহাসিক এ নিদর্শনে আবারও প্রাণ ফেরানোর জন্য যাবতীয় পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষে লালকুঠি থেকে বুড়িগঙ্গা নদী ৪৫ ডিগ্রি কোণে সরাসরি দেখার আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা রয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগ জানায়, লালকুঠি সংস্কারের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নর্থব্রুক ও জনসন হলের কাজ প্রায় শেষ। বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে বেঞ্চ সাইটের অর্ধেক কাজ হয়েছে। বাকি কাজের জন্য সরানো হয়েছে ওয়াসার পানির পাম্প। ভবনের উত্তর পাশের সামনে মার্বেল পাথরে তৈরি করা হয়েছে ফোয়ারা।
প্রকল্প অনুযায়ী, লালকুঠির ফরাশগঞ্জ ক্লাব ঘেঁষে একটি কার পার্কিং ও দুটি ফটক থাকবে। কিন্তু ভবনের দক্ষিণ পাশে বুড়িগঙ্গার বেঞ্চ সাইটের জায়গায় একটি আটতলা বাণিজ্যিক ভবন ও উত্তর পাশে কার পার্কিংয়ের জায়গায় আড়ত করার দাবিতে গত ডিসেম্বরে কাজ বন্ধ করে দেয় ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া পাশে চারতলা কমিউনিটি সেন্টারের নির্মাণকাজ একই সময় থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে।
লালকুঠি সংস্কারকাজের ঠিকাদার ঢালী কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মেজবাহউদ্দিন ভূঁইয়া মুরাদ সমকালকে জানান, গত ২০ ডিসেম্বর ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের লোকজন এসে সংস্কারকাজ বন্ধ করে দেয়। এর পর থেকে মূল ভবনের টুকটাক ছাড়া বাইরের কাজ বন্ধ। সিটি করপোরেশনও নকশা সংস্কার করে না দেওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে বলেছে। সম্প্রতি ভারত থেকে আনা দেড় লাখ টাকার মার্বেল পাথর চুরি হয়ে গেছে। নিরাপত্তা সংকটে দামি লাইট স্থাপন করা যাচ্ছে না। নিয়মিত কাজ করা গেলে আগামী ৩০ মার্চের মধ্যেই সংস্কারকাজ শেষ হতো বলে মনে করেন তিনি।
ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও ডিসিএনইউপির প্রকল্প পরিচালক রাজীব খাদেম বলেন, ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের আয় বৃদ্ধির জন্য কর্তৃপক্ষ আড়ত, আটতলা ভবন ও ক্লাব সংস্কারের দাবি জানায়। কিন্তু হেরিটেজ ভবনের ৯ মিটারের মধ্যে স্থাপনা করার সুযোগ নেই। বড় কথা, প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন হবে। নকশা পরিবর্তন করা হবে না। সমঝোতা অনুযায়ী সিটি করপোরেশন ক্লাব সংস্কার করে দেবে।

সংস্কারকাজের মূল দায়িত্বে থাকা স্থপতি ও স্থাপত্য সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু সাঈদ বলেন, ‘ক্লাবের আয় সেখানকার কমিউনিটি সেন্টার ও প্লাজাগুলো পরিচালনা করেই হতে পারে। কিন্তু আইন অমান্য করে হেরিটেজের ৯ মিটারের মধ্যে স্থাপনা করা ঠিক হবে না।’
ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের সদস্য সচিব ও সূত্রাপুর থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ আজিজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে দায়িত্ব পেয়েছি। তহবিল ফাঁকা; আয়ের সব উৎস বন্ধ। লালকুঠির মধ্যে ক্লাব ঘেঁষে আমাদের যে আড়ত ছিল, তা ভেঙে দিয়েছে। এটি আবারও করপোরেশনকে করে দিতে বলেছি। ক্লাবের তিনতলা ভবনটি আটতলা পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবি জানালে করপোরেশন ছয়তলা পর্যন্ত রাজি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে পূর্ব ও পশ্চিমের দু’দিকে সীমানা নির্ধারণ করে সেখানে ৮-১০ তলা ভবন এবং সিটি করপোরেশনের মার্কেট ভেঙে পুনরায় কমিউনিটি সেন্টার করে দিতে বলেছি।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক জ বন ধ প রকল প ভবন র

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে দুই ট্রেনের সময় বদলে যাচ্ছে

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলা সৈকত এক্সপ্রেস ও প্রবাল এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচি পরীক্ষামূলকভাবে নতুন করে নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। নতুন সময়সূচি আগামী ১০ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী সৈকত এক্সপ্রেস (৮২১ নম্বর ট্রেন) ট্রেনটি এখন সকাল সোয়া ৬টায় চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে যায়। নতুন সূচি অনুযায়ী, পরীক্ষামূলকভাবে এ ট্রেন চলাচল করবে ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে।

আর কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামগামী প্রবাল এক্সপ্রেস (৮২২ নম্বর ট্রেন) ট্রেনটি কক্সবাজার স্টেশন ছাড়বে সকাল ১০টায়। এখন এ ট্রেন ছাড়ে ১০টা ২০ মিনিটে। গত মঙ্গলবার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচলরত সৈকত এক্সপ্রেস ও প্রবাল এক্সপ্রেসের সময়সূচি পরীক্ষামূলকভাবে পরিবর্তনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের উপপ্রধান পরিচালন কর্মকর্তা তারেক মুহাম্মদ ইমরান।

রেলওয়ের সহকারী প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিকীকের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়েছে, যাত্রীদের চাহিদা ও সময়ানুবর্তিতা রক্ষায় সুষ্ঠুভাবে ট্রেন পরিচালনার জন্য কক্সবাজারগামী সৈকত এক্সপ্রেস এবং চট্টগ্রামমুখী প্রবাল এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রুটে এখন দুই জোড়া আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চলাচল করে আরও দুই জোড়া আন্তনগর ট্রেন।

কক্সবাজার রেললাইনে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর। প্রথমে ঢাকা থেকে কক্সবাজার এক্সপ্রেস নামে আন্তনগর বিরতিহীন ট্রেন দেওয়া হয়। এরপর গত বছরের জানুয়ারিতে চলাচল শুরু করে পর্যটক এক্সপ্রেস। এটাও দেওয়া হয় ঢাকা থেকে। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন না দেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।

গত বছরের ৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এক জোড়া বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়। দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই ট্রেন। এরপর ইঞ্জিন ও কোচের সংকটের কথা বলে গত বছরের ৩০ মে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের চাপে সেই অবস্থান থেকে সরে আসে রেলওয়ে। গত বছরের ১২ জুন থেকে আবার চালু হয় ট্রেন। আর নিয়মিত ট্রেন চলাচল শুরু হয় চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে।

সৈকত এক্সপ্রেস ট্রেনটি যাত্রী ওঠানামার জন্য ষোলশহর, জানালী হাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজরা ও রামু স্টেশনে থামবে।

আর প্রবাল এক্সপ্রেস যাত্রাপথে থামবে ষোলশহর, গোমদণ্ডী, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলহাজারা, ইসলামাবাদ ও রামু স্টেশনে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ