চট্টগ্রামে ছিনতাইকারীদের আস্তানায় অভিযানে গিয়ে ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন পুলিশের দুই উপপরিদর্শক (এসআই)। আজ মঙ্গলবার দুপুরে নগরের ডবলমুরিং থানার বারিকবিল্ডিং মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আহতরা হলেন- আহলাদ ইবনে জামিল ও মো. নজরুল ইসলাম। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।  

গ্রেপ্তার হলেন- জাহিদুল ইসলাম (২৪), মো.

জুয়েল (৪৫) ও মো. তারেক (২৫)। তাদের কাছ থেকে ছিনতাই ও ডাকাতির বিভিন্ন সরঞ্জাম ও ২ লাখ ১২ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, নগরের বারিকবিল্ডিং মোড়ে সীমানা দেয়াল ঘেরা একটি শিল্পগ্রুপের পরিত্যক্ত জায়গায় আস্তানা গাড়ে ছিনতাইকারীরা। নগরের বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই করে সেখানে গিয়ে ভাগবাটোয়ারা করে তারা। এছাড়া সেখানে মাদকও সেবন করে। ছিনতাইকারীরা আস্তানায় অবস্থান করছে এমন তথ্য পেয়ে অভিযানে যায় ডবলমুরিং থানা-পুলিশের একটি টিম। এ সময় সেখানে ছয়জন ছিনতাইকারী ছিল। দু’জনকে ধরতে পারলেও বাকিরা পুলিশকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে অভিযান চালিয়ে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ছুরিকাঘাতে এসআই আহলাদ ইবনে জামিল ও মো. নজরুল ইসলাম আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার আসামি তারেকও আহত হয়েছে। 

পুলিশের দাবি, অভিযানের আগেই ছিনতাইয়ের টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে মারামারিতে তারেক আহত হয়েছে। তাকে পুলিশি প্রহরায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

জায়গাটির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রহরী মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘ছিনতাইকারীরা ছুরি, কিরিচ, ধামা নিয়ে আমাদের ভয় দেখিয়ে এখানে ঢুকে যেত। বাধা দিলে খুন করার হুমকি দিত। আমরা বিষয়টি থানা-পুলিশকে জানিয়েছিলাম। কখন থেকে তারা এখানে আছে তা জানি না। আমি কাজ করি মাসখানেক। তাদের আমি সবসময় দেখি। তারা এখানে মদ-গাঁজা সেবন করত।’

ডবলমুরিং থানার ওসি কাজী মো. রফিক আহমেদ বলেন, ‘দেশিয় অস্ত্র নিয়ে কয়েকজন ছিনতাইকারী ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে খবর পেয়ে অভিযান চালানো হয়। এ সময় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার জুয়েল ও জাহিদ জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, ছিনতাইয়ের টাকা ভাগবাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে মারামারি হয়। এ সময় তারেক আহত হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এসআই আহত এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে যুবদল–ছাত্রদলের চাঁদাবাজির মামলার এজাহার ফাঁস, এসআইকে বদলি

রাজশাহীতে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা রুজুর আগে এজাহার ফাঁসের ঘটনায় এবার এক উপপরিদর্শককে (এসআই) বদলি করা হয়েছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে ছাত্রদলের এক নেতার ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে রাজশাহীতে তুমুল আলোচনা চলছে।

নগরের বোয়ালিয়া থানা থেকে বদলি হওয়া ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম এস এম রকিবুল ইসলাম। চাঁদাবাজির মামলার এজাহার থানায় রেকর্ড হওয়ার আগেই তিনি সেটি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেন ছাত্রদল নেতা এমদাদুল হক ওরফে লিমনের কাছে। এমদাদুল হক রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব। ২৩ জুলাই রাতে আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর বিরুদ্ধে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় এমদাদুল হকসহ ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

এজাহার ফাঁসের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গতকাল সোমবার এসআই রকিবুলকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাজশাহী পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।

এসআই রকিবুলের সঙ্গে সেই রাতে হওয়া কথোপকথনের রেকর্ড ফাঁস করে দেন এমদাদুল হক নিজেই। হোয়াটসঅ্যাপের ওই কথোপকথন ভিডিও করে রেখেছিলেন তিনি। ভিডিওতে দেখা যায়, এমদাদুল হক সালাম দিয়ে কথা শুরু করেন। এসআই রকিবুল তাঁর উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘মামলা রেকর্ড হচ্ছে, হচ্ছে...রেকর্ডটা করতে দে।’ এমদাদুল জানতে চান, ‘আচ্ছা, ওর (মোস্তাফিজুর রহমানের) মামলাডা হলো, কে কে ভাই বলেন তো একটু। বলা যাবে?’ এসআই বলেন, ‘তুই ফোন দিছিস তোর পরে আমি গেছি। যায়ে এজাহার নিসি, তোরে দিসি। আমি জানি? কমিশনার অফিস থেকে এজাহার লিখিসে।’ এমদাদুল প্রশ্ন করেন, ‘ওখানেই এজাহার লিখেছে? কমিশনার অফিসে?’ এসআই বলেন, ‘হ্যাঁ, ওখান থাইকা অফিসে থেকে এজাহার পাঠায়ে দিসে। অপারেটর তাই কলো যে স্যার, পেনড্রাইভে করে এজাহার পাঠায় দিসে ফোর্স দিয়ে।’

ভিডিওতে আরও দেখা যায়, এমদাদুল বলেন, ‘ও, কমিশনার নিজেই লিখেছে?’ এসআই বলেন, ‘তা জানি না। সে (পুলিশ কমিশনার) তো আর নিজে লেখে না। ওই অফিস (আরএমপি সদর দপ্তর) থেকে পাঠায়ছে। আমি কাজ করতেছি, ফ্রি হয়ে ফোন দিচ্ছি। রাখো।’

পরে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি ও বাদীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন করেন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা। সেখানে মাইকে বাজিয়ে শোনানো হয় এসআই রকিবুল ও এমদাদুলের এই কল রেকর্ড।

এরপর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে পুলিশ। বিষয়টি বোয়ালিয়া জোনের উপকমিশনারকে তদন্ত করতে বলা হয়। প্রাথমিক তদন্ত শেষে এসআই রকিবুল ইসলামকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে গতকাল পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার গাজিউর রহমান বলেন, ‘রকিবুল ইসলামের গত তিন মাসের চাকরির পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ায় তাকে থানা থেকে বদলি করা হয়েছে। এর সঙ্গে ওই কল রেকর্ডের কোনো সম্পর্ক নেই। আর কল রেকর্ডে সে যা বলেছে, তার ব্যাপারে অবশ্য ডিপার্টমেন্ট তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।’

পুলিশ কমিশনার কার্যালয় থেকে কোনো মামলার এজাহার পাঠানোর প্রসঙ্গে গাজিউর রহমান বলেন, ‘এটা কখনো হয় না। মামলার বাদী থানায় এসে লিখিত এজাহার ওসির কাছে জমা দেন অথবা লিখতে না পারলে অন্য কাউকে দিয়ে লিখে তা বাদীকে পড়ে শোনানো হয়। তিনি তাতে সায় দিলে টিপসই নেওয়া হয়।’ কমিশনার কার্যালয় থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা পাঠানো হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নে গাজিউর রহমান বলেন, ‘এটা কখনোই সম্ভব নয়। রাতে কমিশনার অফিসে কেউ থাকে না। তা ছাড়া আমি রেকর্ডটি শুনেছি। বলেছে, কমিশনার অফিস থেকে। এখন কমিশনার তো আরও আছে। সেটা ঠিক নয়।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কর্মক্ষেত্রে বুলিং: শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব
  • পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনে এসআইদের প্রতি ডিএমপি কমিশনারের আহ্বান
  • রাজশাহীতে যুবদল–ছাত্রদলের চাঁদাবাজির মামলার এজাহার ফাঁস, এসআইকে বদলি