আ’লীগ নেতাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে বিএনপি নেতাদের তদবির
Published: 26th, February 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে গ্রেপ্তার এক আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে বিএনপি নেতারা তদবির করেছেন বলে জানা গেছে।
উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিল্পপতি লাক মিয়াকে হামলা, ভাঙচুর ও নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বুধবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে আড়াইহাজার থেকে ঢাকার গুলশানের বাসায় যাওয়ার সময় রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন সেতু এলাকা থেকে তাঁকে আটক করা হয়। লাক মিয়াকে আড়াইহাজার থানায় আনার পর থেকে স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় নেতাকর্মীদের একাংশ তাঁকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য তদবির করেছেন বলে পুলিশের একটি সূত্র থেকে খবর পাওয়া যায়।
গ্রেপ্তার লাক মিয়া ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের উজান গোবিন্দী এলাকার মৃত ছাবেদ আলীর ছেলে ও ভাই ভাই স্পিনিং মিলের স্বত্ত্বাধিকারী।
আড়াইহাজার থানার ওসি এনায়েত হোসেন জানান, ইউপি চেয়ারম্যান লাক মিয়ার বিরুদ্ধে আড়াইহাজার থানায় হামলা, ভাঙচুর ও নাশকতার অভিযোগে দু’টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাঁকে নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত রিমান্ড শুনানির জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেছেন।
স্থানীয়রা জানায়, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে লাক মিয়া পর পর তিন বার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। উপজেলায় একজন প্রভাবশালী শিল্পপতি ও আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গত বছর ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে গেলেও ইউপি চেয়ারম্যান লাক মিয়া এলাকায় অবস্থান করেছিলেন। নিয়মিত ইউনিয়ন পরিষদে তাঁর স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে এলাকা থেকে তার গুলশানের বাসায় যাওয়ার জন্য রওয়ানা হন। পথে কাঞ্চন সেতু এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, লাক মিয়াকে রূপগঞ্জ থেকে আড়াইহাজার থানায় নিয়ে যাওয়ার পর থেকে মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত ও বুধবারও তাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে মধ্যম সারির অনেক নেতা থানায় তদবির করেন। তারা লাক মিয়ার পছন্দের খাবারও সরবারাহ করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহমেদ জানান, আওয়ামী লীগ নেতা বিনাভোটের ইউপি চেয়ারম্যান লাক মিয়ার পক্ষে দলীয় কিছু লোকের তদবির করার বিষয়টি লোকমুখে শুনেছেন। এ বিষয়টি পরবর্তী দলীয় সভায় আলোচনা করা হবে। তদবিরে কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আড়াইহাজার থানার ওসি এনায়েত হোসেন বলেন, লাক মিয়া আড়াইহাজার থানার দু’টি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। কেউ তদবির করলেও আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ আওয় ম ল গ ব এনপ তদব র ক র জন য উপজ ল আওয় ম ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ পাকিংয়ে তীব্র যানজট, জনদুর্ভোগ চরমে
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যানজট। এ যানজটের কারণে মাত্র ৫ মিনিটের রাস্তা পেরুতে সময় লেগে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। ফলে প্রতিনিয়ত চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জবাসীকে।
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগ কিংবা সিটি কর্পোরেশন এ যানজট থেকে জেলাবাসীকে পরিত্রাণ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে দিন যতই বড়ছে ততই বাড়ছে নারায়ণগঞ্জবাসীর দুর্ভোগ।
নারায়ণগঞ্জে এমন কোন সড়ক নাই সেই সড়কে যানজট নাই। মূল সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলি সব জায়গায়ই যানজট আর যানজট। তবে এ যানজটের পেছনে মূল সড়কের যানজটকেই দায়ি করছেন অনেকে।
তারা বলছেন, মূল সড়ক যদি যানজট মুক্ত থাকতো তাহলে এর আশেপাশের সড়কগুলো যানজটের সুষ্টি হতো না। মূল সড়কে তীব্র যানজটের কারণেই এর প্রভাব পড়ছে অন্য সড়কগুলোতেও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে শহরের চাইতে চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণে করেছে। এ সড়ক দিয়ে চলাচলের কথা শুনলেই মানুষ আতকে উঠে। কারণ, যানজটের মাত্র পনেরো মিনিটের রাস্তা পাড় হতে সময় লাগে ঘন্টার পর ঘন্টা।
এ রাস্তায় এ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ীকেও যানজটে আটতে থাকতে দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। একবার যানজটে আটকা পড়লেই দিন শেষ। কখন বাড়ী কিংবা অফিসে যাবেন তার কোন ঠিক নেই।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, এ যানজটের প্রধান কারণ হচ্ছে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ। ফ্লাইওভারের কর্মযজ্ঞের ফলে যানবাহনগুলোকে একটু ধীর গতিতে যেতে হয়। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়।
তবে এ যানজটের আরও একটি বড় কারণ চোঁখে পড়ে, আর তা হলো পঞ্চবটি এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে এবং চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কের দু’পাশে ট্রাক ও কভার্ডভ্যানগুলো অবৈধভাবে পাকিং করে রাখা।
এসব যানবাহনগুলো সড়কের দু’পাশে পার্কিং করে রাখার কারণে মূল সড়ক অনেকটাই সরো হয়ে যায়। ফলে এ সড়ক দিয়ে অন্যসব যানবাহনগুলো ঠিকমত চলাচল করতে পারে না। ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
অথচ, পঞ্চবটির খুব কাছেই রয়েছে ট্রাক ও কভার্ডভ্যান স্ট্যান্ড। যানবাহনের চালকরা ওই স্ট্যান্ডে গাড়ী না রেখে সড়কের পাশে অবৈধভাবে বাঁকাত্যাঁড়া গাড়ীগুলো রাখছেন। এর ফলে যে, ওই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং যানজটের কবলে পড়ে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে, এ বিষয়ে যেন তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই।
তাদের ভাব-নমুনা দেখা মনে হয় যে, তারাই যেন এ সড়কটির মূল মালিক। না পুলিশে তাদের কিছু বলে, না তারা জনগণের কোন কথা শোনে। তারা তাদের ইচ্ছেমত গাড়ীগুলো রেখে যানজটের সৃষ্টি করছেন।
চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে চলাচল করা ভুক্তভোগী পথচারিরা বলছেন, এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করাটা বর্তমানে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এত ভয়াবহ যানজট আমরা কখনোই চোঁখে দেখিনি। পঞ্চবটি ফ্লাইওভারের নিচে যেভাবে ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো রাখা হয় পুরো সড়কটা তারা কিনে নিয়েছে। পুলিশও কিছু বলে না।
এছাড়া চাষাঢ়া থকে পঞ্চবটি পর্যন্ত পুরো সড়কে দু’পাশেই তারা গাড়ীগুলো রাখছেন। রাস্তাটি পাশে এমনিতেই জায়গা কম, আবার যদি তারা এভাবে গাড়ী রাখেন তাহলে যানজটের সৃষ্টিতো হবেই। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল বলেন, আসলে নিতাইগঞ্জ এলাকা থেকে ট্রাক স্ট্যান্ডটি সরিয়ে নেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আইভী একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। তিনি শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে পঞ্চবটি এলাকাতে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে একটি ট্রাক স্ট্যান্ড গড়ে তোলেন এবং সেখানে এ স্ট্যান্ডকে স্থানান্তর করেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
এখন তারা কিছু গাড়ী ওই স্ট্যান্ডে রাখে বাকি গাড়ীগুলো সড়ক দখল করে এলোপাথারিভাবে রাখে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলেও যেন কারো কোন কিছু বলার নেই। কারণ, এ সমস্যা নিয়ে বহুবার ডিসি-এসপির সাথে বসা হয়েছে, আলোচনা হয়েছে কিন্তু সুরাহা হয় নাই।
তবে, ৫ আগস্টে দেশে একটি বড় পরিবর্তনের পর আশা করছিলাম এবার হয়তো এর একটা সুরাহা হবে। কিন্তু না। সড়ক দখল করে রাখা ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে মানুষকে বাধ্য হয়েই যানজটের মত দুর্ভোগ দুর্দশাময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পথ চলতে হচ্ছে।
তারা বলেন, আসলে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য সেদিন ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এতবড় একটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু দেশের মানুষ যদি সেই শান্তি শৃঙ্খলা ভোগই করতে না পারে, তাহলে এত প্রাণ দিয়ে কি লাভ হলো?
আমরা জানিন না, প্রশাসন আসলে কাদেরকে খুশি করাতে চাচ্ছেন? মুষ্টিম কিছু চালকদের জন্য হাজার হাজার মানুষের এ কষ্ট কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি করবো, তারা যেন খুব শীঘ্রই এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়। নারায়ণগঞ্জবাসীকে যেন কিছুটা স্বস্তি দেয়।
এ বিষয়ে টিআই করিম বলেন, ৫ আগস্টের পর নারায়ণগঞ্জে যানজটের যে ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়েছিলো বর্তমানে তা কমে আসছে। আশাকরছি, আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে। পঞ্চবটি সড়কে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এজন্য এ রুটে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এমতাবস্তায় যদি কোন চালক রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে গাড়ী পার্কিং করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।