বে টার্মিনাল প্রকল্পের উন্নয়নকাজ শুরু হবে শিগগিরই–বন্দর চেয়ারম্যান
Published: 27th, February 2025 GMT
চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল প্রকল্পে নতুন করে গতি এসেছে বলে জানিয়েছেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান। আজ বৃহস্পতিবার বন্দরের শহীদ ফজলুর রহমান মুন্সী মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, আগামী মাসে বে টার্মিনালের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সরকারি অনুমোদন পেতে যাচ্ছে। প্রকল্প উন্নয়ন প্রস্তাব অনুমোদনের পর বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তি সই হবে। এর মাধ্যমে প্রকল্পের মাঠপর্যায়ের কাজ শুরু হওয়ার পথ তৈরি হবে।
গত বছরের জুনে বে টার্মিনাল প্রকল্পের ব্রেক ওয়াটার বা স্রোত প্রতিরোধক তৈরি এবং জাহাজ চলাচলের পথ তৈরি তথা খননকাজের জন্য ৬৫ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছিল বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পর্ষদ। এখন সরকারি অনুমোদন পাওয়ার পর প্রায় এক যুগ আগে হাতে নেওয়া এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী টার্মিনাল নির্মাণ হবে।
বে টার্মিনালে মূলত জাহাজ থেকে কনটেইনার ও পণ্য ওঠানো-নামানো হবে। খোলা পণ্য সাগরে ওঠানো-নামানো গেলেও টার্মিনাল ছাড়া কনটেইনার ওঠানো-নামানো যায় না। রপ্তানি পণ্যের সিংহভাগ কনটেইনারে ভরে বিদেশে পাঠানো হয়। আবার শিল্পের কাঁচামালসহ মূল্যবান পণ্য কনটেইনারে করে আমদানি হয়।
এই প্রকল্প এলাকা চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান টার্মিনাল এলাকার চেয়ে বড়। বন্দর জলসীমার শেষ প্রান্তে চট্টগ্রাম ইপিজেডের পেছনের সাগরপার থেকে শুরু হবে বে টার্মিনাল প্রকল্পের সীমানা, যা গিয়ে শেষ হবে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের অদূরে রাসমণি ঘাটে। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা প্রকল্প এলাকাটি প্রায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার লম্বা।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, বে টার্মিনাল প্রকল্প দেশের অর্থনীতির জন্য একটি গেম চেঞ্জার। এই প্রকল্পের জন্য রেলপথ, সড়কপথ এবং নদী যোগাযোগব্যবস্থা নতুন করে নির্মাণের প্রয়োজন নেই। কারণ, সেগুলো ইতিমধ্যে বিদ্যমান।
এই প্রকল্পে মোট চারটি টার্মিনাল গড়ে তোলা হবে। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) আওতায় দুটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান দুটি টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা করবে। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো সিঙ্গাপুরের পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ডিপি ওয়ার্ল্ড। দুই প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে। তাদের বিনিয়োগের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।
বাকি দুটি টার্মিনাল নির্মাণের প্রক্রিয়াও এখন চলছে। আবুধাবি পোর্টস মাল্টিপারপাস একটি টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ হতে পারে। এ ছাড়া গ্যাস ও তেল খালাসের টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ইস্ট কোস্ট গ্রুপ। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে ইস্ট কোস্ট গ্রুপ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। তারা ৩৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট র ম ন ল প রকল প প রকল প র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে, দুই বন্ধু নিহত
রাজধানীতে অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে পড়ে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার বনশ্রীর এফ ব্লক সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিন মতিঝিলের ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেট কারের চাপায় আব্দুল মতিন (৩৬) নামে এক রিকশাচালক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া পাঁচ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন।
বনশ্রীতে নিহত দু’জন হলেন– আব্দুল্লাহ আল নোমান (২১) ও পাভেল মিয়া (২০)। নোমানের মামা আব্দুল হামিদ জানান, নিহতরা পরস্পর বন্ধু। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে ঢাকায় ঘুরতে যাওয়ার সময় দু’জন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। তারা রূপগঞ্জের নামারমুসুরি এলাকায় থাকতেন। নোমান মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। পাভেল তেমন কিছুই করতেন না। এ ঘটনায় নোমানের পরিবারের পক্ষ থেকে সড়ক নিরাপত্তা আইনে খিলগাঁও থানায় মামলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী মোটরসাইকেল চালক টিপু সুলতান বলেন, সড়কটি যানবাহনে ঠাসা ছিল। এ কারণে গাড়ি চলছিল ধীরগতিতে। হঠাৎ একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পাশ থেকে এসে নোমানের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে দু’জন সড়কের ওপর ছিটকে পড়েন। পরে মিয়ামি পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দেয়। নোমান ঘটনাস্থলেই মারা যান। মোটরসাইকেল আরোহী পাভেলকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফরাজী হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
খিলগাঁও থানার ওসি দাউদ হোসেন জানান, বাসটি জব্দ করা হয়েছে। চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেছে। অটোরিকশা চালককেও আটক করা যায়নি। মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেটকারের চাপায় প্রাণ হারান রিকশাচালক আব্দুল মতিন। তাঁর বাড়ি রংপুরে। তিনি মুগদার মাণ্ডা এলাকায় একটি রিকশার গ্যারেজে থাকতেন। মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাইমিনুল ইসলাম জানান, প্রাইভেটকারের চালক আল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। ময়নাতন্ত শেষে পরিবারের কাছে মতিনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর থানার সিভিল এভিয়েশন কোয়ার্টার গেটের (সি-টাইপ) সামনের ফুটপাত থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। বিমানবন্দর থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই যুবকের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে।
সড়কে ঝরল আরও ছয় প্রাণ
খুলনার ডুমুরিয়ায় তেলবাহী লরির চাপায় দুই নারী নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেলে উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের নরনিয়া মহিলা মাদ্রাসার কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন– রোকেয়া বেগম (৫৫) ও রশিদা বেগম (৪৫)।
গতকাল সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাছে সেলফি পরিবহনের বাসের ধাক্কায় শামসুল হক নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরে গণস্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন। সাভার থেকে অবসরের পাওনাদি নিয়ে ফেরার পথে তিনি প্রাণ হারান। শামসুলের বাড়ি চাঁদপুরে। ঘটনার পর গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মচারীরা সেলফি পরিবহনের পাঁচটি বাস আটক করেন।
এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অটোরিকশা ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে নয়ন মিয়া (৩৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন। গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের রতনদী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে শান্ত ইসলাম (১৮) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। গতকাল উপজেলার কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শান্ত মথুরাপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের রিপন মণ্ডলের ছেলে।
রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী বাজারে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে ছিটকে পড়ে স্বপন শীল নামে এক স্যালুন ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গতকাল ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্র বিলি করতে বেরিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি।