পৃথিবীর এক অন্যতম জনঘনত্বপূর্ণ নগর ঢাকা প্রতিদিন একটি অস্বস্তিকর ও অভূতপূর্ব স্বাস্থ্যগত সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ২৩০ টন মানববর্জ্য, যা খোলামেলা ও অপরিকল্পিতভাবে নিষ্কাশিত হয়, তা সরাসরি নগরীর উন্মুক্ত জলাশয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই চরম অব্যবস্থাপনা শুধু পরিবেশের জন্য নয়, মানবস্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্যের জন্যও এক অতি গভীর ও মারাত্মক বিপদ হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক টয়লেট সম্মেলন ২০২৫-এ ভয়াবহ এই সত্য উঠে এসেছে।

ঢাকার বহু অঞ্চলে যেখানে পর্যাপ্ত শৌচাগার বা সুসজ্জিত পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা সুস্পষ্টভাবে অনুপস্থিত, সেখানে নাগরিকেরা বাধ্য হয়ে মানববর্জ্য নিষ্কাশন করতে উন্মুক্ত স্থান, বিশেষত নদী ও খালের তীরবর্তী এলাকা নির্বাচন করেন। এর ফলে প্রতিদিন অসংখ্য গৃহস্থালি বর্জ্য, বৃষ্টির পানি ও অন্যান্য দূষণকারীর সঙ্গে মিশে মানববর্জ্য জলাশয়ে জমা হয়। এটি জলাশয়গুলোকে বিষাক্ত ও অস্বাস্থ্যকর করে তোলে।

এই অস্বাস্থ্যকর অবস্থার অপ্রত্যাশিত পরিণতি হিসেবে মহানগরের খাল, নদী ও অন্য জলাশয়গুলোর পচনশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা জলবাহিত রোগের বাড়বাড়ন্তের আঁতুড়ভূমি তৈরি করছে। বিশেষভাবে কলেরা, টাইফয়েড, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এটি শহরের জনস্বাস্থ্যের জন্য এক অভূতপূর্ব বিপদময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।

এ ছাড়া পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকেও জলাশয়ে জমে থাকা মানববর্জ্য বিভিন্ন জীববৈচিত্র্য, মৎস্যসম্পদ এবং সামগ্রিক পরিবেশের ওপর ব্যাপক ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। উন্মুক্ত জলাশয়ের পানি দূষিত হয়ে যাওয়ার ফলে তা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে অন্তরায় সৃষ্টি করছে এবং নগরের জলভাগে গভীর সংকট তৈরি করছে। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতিসাধন তো ঘটছেই, পাশাপাশি শহরের সৌন্দর্য ও বাসযোগ্যতাও হ্রাস পাচ্ছে।

এই সংকটের টেকসই মীমাংসা জরুরি। ঢাকায় আধুনিক, সুষ্ঠু ও পরিবেশবান্ধব পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার দ্রুত বাস্তবায়ন অতি জরুরি হয়ে উঠেছে। পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা উন্নত করার পাশাপাশি শহরব্যাপী জনসচেতনতা গড়ে তোলাও অত্যন্ত অপরিহার্য, যাতে নাগরিকেরা শৌচাগারের ব্যবহার ও পরিবেশগত সুরক্ষা বিষয়ে দায়িত্বশীল ও সচেতন হয়ে ওঠেন।

এই সংকটের সমাধান তথা একটি সুষ্ঠু, নিরাপদ ও সুস্থ নগর গঠনের জন্য আন্তর্জাতিক টয়লেট সম্মেলন ২০২৫ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হতে পারে। এখানে বিশ্বনেতারা, উন্নয়ন সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো একত্র হয়ে একটি টেকসই ও কার্যকর সমাধান নির্ধারণের মাধ্যমে এই অব্যবস্থাপনার প্রতিকার করতে পারেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম নববর জ য পর ব শ র ব যবস থ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে কিছু কিছু জায়গায়: আইন উপদেষ্টা

‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সরকার গঠিত কমিটির প্রধান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, তাঁর কাছে মনে হয়েছে, অবশ্যই কিছু কিছু জায়গায় অধ্যাদেশটির পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। এ নিয়ে আজ বিকেলে পর্যালোচনা কমিটি বৈঠকে বসবে।

আজ সোমবার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি তখন (অধ্যাদেশটি অনুমোদনের সময়) বিদেশে ছিলাম। আমি আইনটি প্রণয়নের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলাম না। তো পরবর্তীকালে যখন আমি আইনটি দেখেছি, তারপর আমার কাছে মনে হয় যে, অবশ্যই এটা পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে কিছু কিছু জায়গায়।’

আরও পড়ুনসচিবালয়ে আবারও বিক্ষোভ কর্মচারীদের৩৪ মিনিট আগে

সরকার কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে অধ্যাদেশটি করেনি বলে উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, তিনি শুধু একটা কথা বলতে পারেন, সরকার কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে আইনটি করেনি। অসৎ উদ্দেশ্যে করা না হলেও কোনো আইনে এমন বিধান থাকতে পারে, যেটা যাঁরা আইনের সাবজেক্ট, তাঁদের কাছে মনে হতে পারে, তাঁরা বিড়ম্বনা ও হয়রানির শিকার হতে পারেন।

এ প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, ‘সেটি আমরা স্বীকার করি যে, এ রকম সম্ভাবনা এই আইনে থাকতে পারে।’

পর্যালোচনা কমিটির প্রধান আইন উপদেষ্টা জানান, কমিটি আজ বিকেল চারটায় বৈঠকে বসে সরকারি কর্মচারীরা যেসব দাবি দিয়েছেন, সেগুলোর কী কী বিবেচনা করা হবে, কীভাবে করা হবে, তা ঠিক করা হবে। ঠিক করার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কমিটি একটি প্রতিবেদন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তুলবে। কমিটি শুধু প্রতিবেদন দেবে। কমিটি সিদ্ধান্ত দেওয়ার মালিক না।

এ রকম পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরে কর্মসূচি দেওয়ার জন্য আন্দোলনরত সরকারি কর্মচারীদের প্রতি অনুরোধ জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, কমিটির কাজ যদি পছন্দ না হয়, তাহলে (কর্মসূচি) দেন। সরকারি কাজে যেন ব্যাঘাত না হয়, সেটি লক্ষ্য রাখার জন্য কর্মচারীদের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।

‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে পবিত্র ঈদুল আজহার আগে থেকে বেশ কিছু দিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন সচিবালয়ে কর্মরত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। তাঁরা বিক্ষোভ, কর্মবিরতি ও স্মারকলিপি দেওয়ার মতো কর্মসূচি পালন করেছেন।

ঈদের ছুটি শেষে অফিস খোলার এক দিন পর আজ সোমবার আবার সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারী কর্মচারীরা। বিক্ষোভ শেষে আজ সরকারের আরও তিন উপদেষ্টার কাছে তাঁদের স্মারকলিপি দেওয়ার কথা রয়েছে।

সরকার ঈদের ছুটি শুরু আগে আগে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে। অধ্যাদেশটি বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ের কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে এ কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে কিছু কিছু জায়গায়: আইন উপদেষ্টা
  • সচিবালয়ে আবারও বিক্ষোভ কর্মচারীদের
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাউন্টিংয়ে মাস্টার্স, সিজিপিএ ২.৫ হলেই আবেদন
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৬ জুন ২০২৫)
  • ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সেরা
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৫ জুন ২০২৫)
  • অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে আরও যাঁরা পেয়েছেন ‘দ্য কিংস ফাউন্ডেশন পুরস্কার ২০২৫’
  • সৌদি আরবের ৫০ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ, আবেদনের শেষ তারিখ আজ 
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৪ জুন ২০২৫)
  • মুহাম্মদ ইলিয়াসের তাবলিগি দর্শন