কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ধর্ষণ, ছিনতাই, সন্ত্রাস প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্রশাসনকে ৭২ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীর’ ব্যানারে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ‘দুর্জয় ভৈরব’ চত্বরে এক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান উদ্যোগ চোখে না পড়লে প্রশাসনের বিভিন্ন কার্যালয় ও ভৈরব বাসস্ট্যান্ড ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।

কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ভৈরববাসীর মনের শান্তি কেড়ে নিয়েছে ছিনতাই। সব আলোচনা ছাপিয়ে ছিনতাই ও ধর্ষণ ভৈরববাসীর মূল আলোচনায়। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের ব্যর্থতা স্পষ্ট। এর দায় প্রশাসনকে নিতে হবে। কর্মসূচি থেকে ছিনতাই প্রতিরোধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এতে বক্তব্য দেন শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম, তাহসান আহমেদ, তৌহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ সামি, নূর মোহাম্মদ, নজরুল ইসলাম, সাইফুর রহমান প্রমুখ।

ভৈরবে দিন দিন ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। তাঁরা ছুরিকাঘাতে পথচারীদের জখমও করছে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। এমন ভীতিকর পরিবেশ থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয় বাসিন্দারা সামাজিক আন্দোলনে নেমেছেন। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা পৃথক কর্মসূচি দিয়ে লাগাতার আন্দোলন চলমান রেখেছেন। এর আগে গত বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে একই ইস্যুতে ভৈরবে মশালমিছিল করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য ‘দুর্জয় ভৈরব’ চত্বর থেকে বের হয়ে পৌর শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল থেকে ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয়। স্লোগান হয় সারা দেশে নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতা ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে। স্লোগান ওঠে এসব অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশের প্রশাসনের ব্যর্থতা নিয়েও।

আন্দোলনকারীরা জানায়, ভৈরব বাণিজ্য শহর ও নদীবন্দর। এ কারণে বিশেষ করে শহরের সড়কে গভীর রাত পর্যন্ত মানুষের যাতায়াত থাকে। সুযোগটি কাজে লাগায় ছিনতাইকারীরা। ভৈরবে অন্তত ১০টি পয়েন্টে এখন নিয়মিত ছিনতাই হয়। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু সরণি সড়কের নদী বাংলা সেন্টার পয়েন্ট, রেলওয়ে স্টেশন সড়ক, সুইপার কলোনী সড়ক, নাটাল মোড়, গাছতলাঘাট, হাজী আসমত কলেজ সড়ক ও স্টেডিয়াম সড়কে প্রতিনিয়ত ছিনতাই হচ্ছে। শহরে এখন একাধিক শক্তিশালী ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয় আছে। চক্রের সঙ্গে পরোক্ষভাবে প্রভাবশালী মহলের কারও কারও সম্পর্ক রয়েছে। পুলিশেরও হাত থাকতে পারে বলে ধারণা হয়।

কিশোরগঞ্জ জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক শরিফুল হক কর্মসূচির নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের একজন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি ভৈরবকে ছিনতাইমুক্ত করা আর সারা দেশের ধর্ষণকারীদের ধরে আইনের মুখোমুখি করা। অভিযুক্তরা যেন দ্রুত জামিন না পান, সেই বিষয়ে সতর্ক ও সচেতন থাকা।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শবনম শারমিন বলেন, ‘ভৈরবের ছিনতাই প্রতিরোধে প্রশাসন সমন্বিতভাবে কাজ করছে। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে ভৈরব ছিনতাইমুক্ত হবে।’

একই কথা জানিয়েছেন ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার ফুয়াদ রুহানী। তিনি বলেন, ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশ প্রশাসন দিনরাত কাজ করছে এবং প্রতিদিন ছিনতাইকারী ধরা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা বাড়ল

ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা ঘিরে আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে দুই দেশ। ইসরায়েলে গত শনিবার রাতভর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। একই রাতে ইরানের গ্যাসক্ষেত্র ও তেল শোধনাগারে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় ইরানের কতজন নিহত হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।

গতকাল রোববার ছিল দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলার তৃতীয় দিন। শনিবার রাতের পর রোববার দিনের বেলায়ও পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ও ইরান। এদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র

গোষ্ঠী হুতি। চলমান সংঘাতে এই প্রথম ইরানপন্থী কোনো গোষ্ঠী যোগ দিল। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশকে শান্ত করার জন্য প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ।

গতকাল রাত একটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছিল। এ রাতেও তেহরানের নিয়াভারান, ভালিয়াসর ও হাফতে তির স্কয়ার এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইরানের পূর্বাঞ্চলে মাশহাদ বিমানবন্দরে একটি ‘রিফুয়েলিং’ উড়োজাহাজে আঘাত হানার কথা জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই উড়োজাহাজগুলো আকাশে থাকা অবস্থায় অন্য উড়োজাহাজে জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম। ইরান থেকেও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে।

ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা ইরানের

ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ঠেকানোর কথা বলে গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশটিতে প্রথমে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই রাতে ইসরায়েলের দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান ইরানের ‘পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র’ স্থাপনায় আঘাত হানে। শুক্র ও শনিবারও ইরানে হামলা চলে। পাল্টা জবাব দিচ্ছে তেহরানও। তবে ইসরায়েলে শনিবার রাতভর ইরান যে হামলা চালিয়েছে, তা ছিল সবচেয়ে ব্যাপক।

ইসরায়েলে শনিবার প্রথম দফায় ইরানের হামলা শুরু হয় রাত ১১টার পরপর। এ সময় ইসরায়েলের জেরুজালেম ও হাইফা শহরে বেজে ওঠে সাইরেন। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাইফায় অবস্থিত তেল শোধনাগার। পরে রাত আড়াইটার দিকে দ্বিতীয় দফায় হামলা শুরু করে ইরান। তখন তেল আবিব ও জেরুজালেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শনিবার রাতে দুই দফায় ৭৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। প্রথম দফায় ছোড়া হয় ৪০টি। এতে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের তামরা শহরে চারজন নিহত হন। দ্বিতীয় দফায় ছোড়া হয় ৩৫টি ক্ষেপণাস্ত্র। এর একটি আঘাত হানে তেল আবিবের কাছে বাত ইয়াম এলাকায়। এতে অন্তত ছয়জন নিহত ও প্রায় ২০০ জন আহত হন। এ ছাড়া রেহভোত শহরে আহত হয়েছেন ৪০ জন।

ইসরায়েলি হামলায় জ্বলছে ইরানের শাহরান তেলের ডিপো। গতকাল দেশটির রাজধানী তেহরানের কাছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ