স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করতে চায় সংস্কার কমিশন
Published: 1st, March 2025 GMT
‘স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়’–এর নাম পরিবর্তন করে ‘জনপ্রতিষ্ঠান ও জনপ্রকৌশল মন্ত্রণালয়’ করার সুপারিশ করতে চান বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশে স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় নারী: চ্যালেঞ্জ, সুযোগ এবং করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তোফায়েল আহমেদ এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) ও জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারের আলোচনায় উঠে আসে, জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন নারীর ক্ষমতায়ন করে না; বরং এ কারণে সাধারণ আসনে নারীর অংশগ্রহণ কমছে। একইভাবে স্থানীয় সরকারেও নারীরা অনেকাংশে ‘আলংকরিক’, যেখানে তাঁদের সমসুযোগ, সমক্ষমতা, সমদায়িত্ব থাকে না।
বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের নামের সঙ্গে ‘পল্লী উন্নয়ন’ থাকলেও এর কাজ নেই বলে উল্লেখ করেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় পর্যায়ে কিছু সংস্কার দরকার হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, সব কো–অপারেটিভস ও এনজিওগুলো একসঙ্গে থাকলে কাজ করতে পারবে। চলতি মাসের মাঝামাঝি নাগাদ স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন খসড়া প্রতিবেদন জমা দেবে বলেও জানান তিনি।
এক শিডিউলে (তফসিল) স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে চান বলেও জানান তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, তাহলে স্থানীয় সরকারে পাঁচটা–সাতটা নির্বাচন করতে হবে না। এতে সরকারের নির্বাচনের ব্যয় অনেক কমবে। প্রার্থীর খরচও কমবে।
সংস্কার এত সহজ কাজ নয় বলেও মনে করেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, সংস্কার যাঁরা করতে চান, তাঁদের মধ্যে কোনো ঐকমত্য নেই।
‘সংরক্ষিত আসন নারীর ক্ষমতায়ন করে না’
জাতীয় সংসদে নারীর জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসন কোনোভাবেই নারীর ক্ষমতায়ন করে না বলে মনে করেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, এই পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ। এই পদ্ধতি সত্যিকার অর্থে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন করে না। নারীকে আলংকরিক অর্থে রাখা হয়। এর কারণে সাধারণ আসনে নারীর অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে।
স্থানীয় সরকারেও নারীরা বহুলাংশে আলংকরিক উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে ১২ জনের মধ্যে ৩ জন নারী। এখানে সরাসরি নির্বাচন আছে, জনগণের কাছে দায়বদ্ধতাও আছে। কিন্তু এখানেও বহুলাংশেও আলংকারিক। কারণ তাঁদের সমসুযোগ, সমক্ষমতা, সমদায়িত্ব থাকে না।
ঘূর্ণমান পদ্ধতিতে নির্বাচন প্রসঙ্গে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এই পদ্ধতিতে অনেক ক্ষেত্রে পুরুষেরা বাধার সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, নারীর জন্য যখন আসনটি সংরক্ষিত হবে, তখন সেখানে পুরুষেরা নির্বাচন করতে পারবে না। তবে এখন এই পদ্ধতি প্রয়োগের সুবর্ণ সুযোগ।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য মাসুদা খাতুন মনে করেন, স্থানীয় সরকারে নারী প্রতিনিধিরা মূলধারার নন। ইউনিয়ন পরিষদে ৯টি ওয়ার্ড আছে, সেখানে ১২টা (৩টি ওয়ার্ডের জন্য একজন নারী সদস্য) করা হয়। সেই তিনটি ওয়ার্ড তো ওয়ার্ড না, শূন্যস্থান। সে কারণে তাঁদের জন্য নির্ধারিত কোনো কার্যাবলি থাকে না।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবির। প্রবন্ধে তিনি বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারে নারীদের ৮টি চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন। সেগুলো হলো সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধা, পুরুষতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ, রাজনৈতিক সহিংসতা ও হুমকি, আর্থিক সীমাবদ্ধতা, দলীয় রাজনীতিতে প্রভাবহীনতা, পারিবারিক ও গৃহস্থালির দায়িত্ব, শিক্ষা ও দক্ষতার ঘাটতি এবং প্রশাসনিক ও কাঠামোগত দুর্বলতা।
লাসনা কবির বলেন, স্থানীয় সরকারের নারীরা অদৃশ্য বাধার সম্মুখীন, যার কারণে তাঁরা সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেন না।
অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বার্ডের পরিচালক (পল্লী উন্নয়ন ও স্থানীয় সরকার) ফৌজিয়া নাসরিন সুলতানা ও জাইকা বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কো–অর্ডিনেটর (স্থানীয় সরকার) কাশফিয়া তাবাসসুম। গবেষণা প্রবন্ধে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও ক্ষমতায়নের জন্য গঠন করা ‘নারী উন্নয়ন ফোরাম’–এর (ডব্লিউডিএফ) ওপর সমীক্ষা করা হয়। ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে একই বছরের মে মাস পর্যন্ত দুই শ উপজেলায় এই জরিপ করা হয়। ফলাফলে দেখা যায়, ১৭৬টি উপজেলায় এই ডব্লিউডিএফ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং ২৩টিতে করা হয়নি।
আজ এই সেমিনার বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারে কীভাবে লৈঙ্গিক সমতা নিশ্চিত করা যায়, তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন জাইকা বাংলাদেশের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইচিগুচি তোমোহিদে। স্থানীয় সরকার আইনের সংস্কার করার সুপারিশ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন জাইকা সব সময় পাশে ছিল, আছে ও থাকবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বার্ডের মহাপরিচালক সাইফ উদ্দিন আহমেদ, জাইকার স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আকিরা মুনাকাত প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বার্ডের উপপরিচালক রাখি নন্দী ও সহকারী সেমিনার পরিচালক মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত ফ য় ল আহম দ প রবন ধ র জন য র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
মে মাসে বিজিবির অভিযানে ১৩৩ কোটি টাকার চোরাচালান জব্দ
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) গত মে মাসে দেশের সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সর্বমোট ১৩৩ কোটি ১১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে।
সোমবার (১৬ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বিজিবি।
বিজিবি জানায়, জব্দ করা চোরাচালান দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ১ কেজি ৫১২ গ্রাম স্বর্ণ, ১০ হাজার ৫৪৪টি শাড়ি, ৫ হাজার ১৪০টি কাপড়, ৩ হাজার ৪৭২টি তৈরি পোশাক, ১৯ হাজার ৩১৪ মিটার থান কাপড়, ২ লাখ ৫২ হাজার ২৯টি কসমেটিকস সামগ্রী, ৫ হাজার ৪৪৩টি ইমিটেশন সামগ্রী, ২৪ লাখ ৭১ হাজার ৫৫১টি আতশবাজি, ১৭ হাজার ৫২৩ ঘনফুট কাঠ, ৩ হাজার ১৫১ কেজি চা পাতা, ৯২ হাজার ৪৮৭ কেজি সুপারি, ৫৩ হাজার ৪০ কেজি চিনি, ২০ হাজার ৪৪২ কেজি সার, ২৯ হাজার ৯৮৫ কেজি কয়লা, ১০০ কেজি সুতা/কারেন্ট জাল, ৩৪১টি মোবাইল, ১৭ হাজার ৬৫টি মোবাইল ডিসপ্লে, ৬ হাজার ৫৪০টি ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, ১৫,১১২টি চশমা, ৬ হাজার ৫৪৩ কেজি বিভিন্ন প্রকার ফল, ৫ হাজার ৯৬০ কেজি ভোজ্য তেল, ১০১০ লিটার ডিজেল/অকটেন, ১ হাজার ৫২৬ কেজি পিঁয়াজ, ৮ হাজার ৮২৬ কেজি রসুন, ২০ হাজার ৬৪২ কেজি জিরা, ১১ হাজার ২৩৬ প্যাকেট বিভিন্ন প্রকার বীজ, ৫০ হাজার ১৯১ কেজি ফুচকা, ৯ হাজার ১৭৯ কেজি মাছ, ৫০ হাজার ৬০৩ পিস চিংড়ি মাছের পোনা, ৯৩৪ কেজি কফি, ২ লাখ ২৫ হাজার ৩৪৩ পিস চকোলেট, ১ হাজার ১৩১টি গরু/মহিষ, ৪টি কষ্টি পাথরের মূর্তি, ১৩টি ট্রাক/কাভার্ডভ্যান, ১৫টি পিকআপ, ৪টি প্রাইভেটকার/মাইক্রোবাস, ৯২টি নৌকা, ২৬টি সিএনজি/ইজিবাইক, ৭২টি মোটরসাইকেল এবং ২২টি বাইসাইকেল।
আরো পড়ুন:
ঘাস খেতে খেতে সীমান্তের ওপারে ১০ গরু, ফেরত দিল বিএসএফ
ঠাকুরগাঁও সীমান্ত দিয়ে আরো ২৩ জনেকে ঠেলে দিল বিএসএফ
উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ২টি দেশীয় পিস্তল, ৫টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ৯মি.মি. পিস্তল, ২টি শট/পাইপ গান, ৫টি ম্যাগাজিন, ৪টি ককটেল, ২৪টি গুলি এবং ১টি হ্যান্ড গ্রেনেড।
এছাড়া গত মাসে বিজিবি বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করেছে। জব্দ করা মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার ৯৬৬ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১০ কেজি ৯৩৫ গ্রাম হেরোইন, ২৩ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস, ১ কেজি ৪১০ গ্রাম কোকেন, ১০ হাজার ৫২১ বোতল ফেনসিডিল, ৮ হাজার ৯৮৩ বোতল বিদেশি মদ, ৭১.২৫ লিটার বাংলা মদ, ৮১৩ বোতল ক্যান বিয়ার, ১ হাজার ৯১৩ কেজি ৬৩০ গ্রাম গাঁজা, ২ লাখ ২৯ হাজার ৬০২ প্যাকেট বিড়ি ও সিগারেট, ৩০ হাজার ১১৫টি নেশাজাতীয় ট্যাবলেট/ইনজেকশন, ৫৪ ঞাজার ৩৪৭ বোতল ইস্কাফ সিরাপ, ৫ বোতল এলএসডি, ২০ হাজার ৪৯৩টি এ্যানেগ্রা/সেনেগ্রা ট্যাবলেট, ৭৩৭টি এমকেডিল/কফিডিল এবং ৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬০৪ পিস বিভিন্ন প্রকার ওষুধ ও ট্যাবলেট।
সীমান্তে বিজিবির অভিযানে ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক পাচার ও অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৪৫ জন চোরাকারবারি এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ৭১৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক ও ১০ জন ভারতীয় নাগরিককে আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ৩৯০ জন মিয়ানমার নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা/এমআর/এসবি