Samakal:
2025-08-01@21:56:50 GMT

সে আগুন ছড়িয়ে গেল

Published: 1st, March 2025 GMT

সে আগুন ছড়িয়ে গেল

১ মার্চ, ১৯৭১। জেনারেল ইয়াহিয়া সদ্যগঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্ধারিত প্রথম অধিবেশন স্থগিত করার পরপরই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ২ ও ৩ মার্চ দেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করেন। প্রথম দিনের হরতালটি অভূতপূর্ব সাড়া পায়। শহীদজননী জাহানারা ইমাম তাঁর ‘একাত্তরের দিনগুলি’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘হরতালের দিনে ফাঁকা রাস্তার মাঝখান দিয়ে.

.. হাঁটতে হাঁটতে নিউমার্কেটের দিকে চলে গেলাম। কী আশ্চর্য! আজকে কাঁচাবাজারও বসেনি। চিরকাল দেখে আসছি হরতাল হলেও কাঁচাবাজারটা অন্তত বসে। আজ তা-ও বসেনি। শেখ মুজিবসহ সবগুলো ছাত্র, শ্রমিক ও রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে যে সর্বত্র যানবাহন, হাটবাজার, অফিস-আদালত ও কলকারখানায় পূর্ণ হরতাল পালনের ডাক দেওয়া হয়েছে, সবাই সেটা মনে-প্রাণে মেনে নিয়েই আজ হরতাল করছে।’
বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্রলীগ ও ডাকসুর আহ্বানে ডাকা ছাত্র সমাবেশ হয়। ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সে সভায় বক্তব্য দেন ডাকসুর ভিপি আ স ম আবদুর রব, জিএস আবদুল কুদ্দুস মাখন, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজসহ অন্য ছাত্রনেতারা। আ স ম রব বক্তব্য রাখার সময় একটি অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে। তখন ছাত্রলীগের নেতা শেখ জাহিদ হোসেন একটি বাঁশের মাথায় পতাকা বেঁধে মঞ্চে আসেন। পতাকাটি ছিল বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত লাল, সবুজ, সোনালি– এই তিন রঙের। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস এটিই বাংলাদেশের জাতীয় পতাকারূপে ব্যবহৃত হয়।

এ বিষয়ে কিছু কথা না বললেই নয়। মূলত ১৯৬২ সাল থেকে একদিকে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনের কাজ করছিলেন, অন্যদিকে সিরাজুল আলম খান ছাত্রলীগের মধ্যে একই লক্ষ্যে ‘নিউক্লিয়াস’ গঠন করে একপ্রকার গোপন তৎপরতা চালাচ্ছিলেন। সিরাজুল আলম খানের সঙ্গে শেখ মুজিবের যোগাযোগ তখন থেকেই ক্রমশ নিবিড় হলেও প্রথম পক্ষের সব কাজ দ্বিতীয় পক্ষের জ্ঞাতসারে হতো, এমন প্রমাণ বিরল। বাংলাদেশের পতাকা বানানোর কাজটিও ছিল নিউক্লিয়াসের একক সিদ্ধান্ত। এটিও বলা দরকার, স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের চিন্তা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বড় অংশের মধ্যে অনুপস্থিত ছিল। ফলে দলকে স্বাধীনতার ধারায় রাখার জন্য নিউক্লিয়াসের কর্মকাণ্ড জরুরি ছিল।

এ বিষয়ে একসময়কার আওয়ামী লীগ নেতা, লেখক ও সুদক্ষ কূটনীতিক কামরুদ্দীন আহমদ তাঁর ‘স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয় এবং অতঃপর’ বইয়ে লিখেছেন, ‘গান্ধীর কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করে শেখ মুজিব নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন অসহযোগ আন্দোলনের। অন্যদিকে ছাত্র ও যুব সম্প্রদায় নেতাজির (সুভাষ বসু) আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রস্তুত হলো সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য। সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্ব চাচ্ছিল একই পদ্ধতিতে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠন করে পশ্চিমা (পাকিস্তানি) শক্তির সঙ্গে যুদ্ধ করতে এবং স্বাধীনতা অর্জন করতে। এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলই ছিল স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন।’ (পৃ. ১৩৩) 
তিনি আরও লিখেছেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের এ দুটো ধারার খবর সংগ্রহের জন্য বিদেশি সাংবাদিকদের একবার জহুরুল হক হলে, আরেকবার শেখ সাহেবের বাড়িতে ছোটাছুটি করতে হতো। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা প্রথম ওড়ানো হলো সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে। অন্যদিকে তখন আরেক মহড়া। মিছিলে মিছিলে জনতা ছুটে আসতে থাকল শেখ সাহেবের বাসভবনে।’ (পৃ. ১৩৩)

২ মার্চ সচিবালয়েও পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়েছিল। বিকেলে বায়তুল মোকাররম ও পল্টনেও অনুষ্ঠিত হয় জনসভা। সন্ধ্যার পর হঠাৎ ঢাকা শহরে কারফিউ জারির ঘোষণা আসে। সামরিক জান্তা সেদিন কারফিউ জারি করেছিল রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত। জনতার বিক্ষোভ দেখে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত দেওয়া হয়। কিন্তু ওই ঘোষণা শুনে বিভিন্ন এলাকায় জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে এসে ব্যারিকেড দেয়। রাত পৌনে ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হলেও ছাত্ররা দমে যাননি। সারারাত বিক্ষোভ চলতে থাকে পাড়া-মহল্লায়। বিভিন্ন স্থানে টহলদার সামরিক বাহিনী মিছিলে গুলিবর্ষণ করে।

এদিন আট ব্যক্তি প্রাণ হারান। আহত হন কয়েকশ মানুষ। রাতে বঙ্গবন্ধু এক বিবৃতিতে নিরস্ত্র জনতার ওপর গুলিবর্ষণের কঠোর নিন্দা করে ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সমগ্র প্রদেশে হরতালের আহ্বান জানান। ৩ মার্চ জাতীয় শোক দিবস পালনের ডাক দেন। একই সঙ্গে ৭ মার্চ জনসভার কর্মসূচিও বহাল রাখেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য প রথম হরত ল

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ