যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের ঘটনা বৈশ্বিক গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়েছে। একই চিত্র দেখা গেছে ইউরোপের গণমাধ্যমেও।

স্থানীয় সময় গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই ইউরোপীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রধান সংবাদ এখন হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বৈঠক। জেলেনস্কির প্রতি ট্রাম্পের আচরণের সমালোচনা করে ইউরোপের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ট্রাম্প ও তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ওভাল অফিসে রাষ্ট্রনায়কের মতো আচরণ করেননি, বরং ‘মাফিয়া বসদের’ মতো আচরণ করেছেন।

ফরাসি দৈনিক লে ফিগারো ট্রাম্পকে একজন রুশ শাসকের সঙ্গে তুলনা করেছে। পত্রিকাটি লিখেছে, ‘আমেরিকাতে এখন একজন জারের খেলা খেলছেন, যিনি গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ভুলেছেন এবং পশ্চিমাদের পতন চান।’ ফরাসি দৈনিকটি আরও বলেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগামী শাসনামল সম্পর্কে এখান থেকে ধারণা পাওয়া যায়।

যুক্তরাজে্যর সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ বলেছে, ‘পশ্চিমা ঐক্য অপরিহার্য বলেই মনে হচ্ছে।’ পত্রিকাটি আরও লিখেছে, এই উত্তপ্ত বাগ্‌বিতণ্ডার ভয়াবহ দৃশ্য দেখে ব্রিটেন এবং ইউরোপের যে কেউ তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হবে।

ইতালির সংবাদপত্র কোরিয়ের ডেলা বলেছে, ‘ইউরোপ এখন নিজেদের সবচেয়ে খারাপ আশঙ্কাকে সত্য হতে দেখছে। কিয়েভকে তার ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। আটলান্টিকের অপর পারে যাদের বন্ধু ভাবা হতো, তারা আদতে বন্ধু নয়।’

স্প্যানিশ সংবাদপত্র এল পাইস লিখেছে, ‘ওভাল অফিস থেকে একটি স্পষ্ট বার্তা এসেছে, তা হলো যদি আমাদের জরুরি প্রয়োজন ও নিরাপত্তা সম্পর্কে কোনো সংশয় থাকে, তাহলে বিশ্বে আমাদের বন্ধু কারা, সেই বিষয় পুনর্বিবেচনা করতে হবে।’

সুইজারল্যান্ডের সংবাদপত্র নিউ জুরচার জেইতুং পরামর্শ দিয়ে লিখেছে, ‘যদি ইউরোপীয়রা সত্যিই ইউক্রেনে টেকসই শান্তি চায়, তাহলে সম্ভবত তাদের নিজেদেরই নেতৃত্ব নিতে হবে, আমেরিকান আশ্বাসে ভরসায় থেকে নয়।’

জার্মানির ডের স্পিগেল পত্রিকা লিখেছে, ‘ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আলোচনা দেখে মনে হয়েছে, আমরা একটি নতুন বিশ্বে বাস করছি। পশ্চিমা বিশ্বে এখন তার পুরোনো শীর্ষ বন্ধুর কবল থেকে বের হয়ে আসার সময় হয়েছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

টিনএজ সিনড্রোম: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এক নীরব সংকট

এক সময় ছিল, যখন সন্তানের আবেগ, দুষ্টুমি বা হঠাৎ রাগ দেখে বাবা-মা মুচকি হেসে বলতেন—“বয়স হয়েছে, ঠিক হয়ে যাবে।” কিন্তু আজ, সেই দুষ্টুমি পরিণত হয়েছে এমন আচরণে, যা অনেক সময় বাবা-মা পর্যন্ত চেনেন না। সন্তান চোখে চোখ রাখে না, ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়, কথা বললে রাগে ফেটে পড়ে। এই চিত্র এখন বিশ্বব্যাপী। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন—আমরা এক ‘Adolescent Syndrome’ বা ‘Teenage Behavioral Crisis’-এর মুখোমুখি, যা বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে।

আচরণগত বিপর্যয়ের পেছনে বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিনএজ সিনড্রোমের প্রধান কারণ তিনটি:

হরমোনের দোলাচল: ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরনের ওঠানামা টিনএজারদের আচরণে গভীর প্রভাব ফেলে। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই হরমোনাল পরিবর্তন দীর্ঘস্থায়ী ও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, যা আচরণে অতিরিক্ত আবেগ ও বিদ্রোহের জন্ম দেয়।

মস্তিষ্কের অসম্পূর্ণ বিকাশ: ১৩-১৯ বছর বয়সে মস্তিষ্কের যুক্তিবোধ ও নিয়ন্ত্রণ-সম্পর্কিত অংশ (prefrontal cortex) এখনও গঠনের পর্যায়ে থাকে। ফলে তারা আবেগে সিদ্ধান্ত নেয়, ঝুঁকি নেয়, এবং কখন কী বলতে হবে—তা বোঝে না।

প্রযুক্তির নীরব আগ্রাসন: TikTok, Instagram, Snapchat—এসব প্ল্যাটফর্মে মেয়েরা দিনে গড়ে ৬–৮ ঘণ্টা সময় কাটায়। সোশ্যাল মিডিয়ার ভুয়া সৌন্দর্য ধারণা, জনপ্রিয়তার চাপ, ফিল্টার সংস্কৃতি তাদের আত্মপরিচয়কে বিকৃত করে তুলছে।

কেন বেশি দেখা যায় মেয়েদের মধ্যে?

Emotional Sensitivity: মেয়েরা আত্মপরিচয় ও আত্মমূল্যায়নে বেশি স্পর্শকাতর।
Beauty Pressure: সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীদের শরীর, ত্বক, স্টাইল—সবকিছু নিয়েই এক অনিয়ন্ত্রিত চাপ কাজ করে।
Hormonal Impact: মাসিক চক্র ও হরমোন ওঠানামা তাদের মুড, আবেগ ও আচরণে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

বাবা-মা কি আগের তুলনায় বেশি সমস্যায়?

হ্যাঁ, এবং এর পেছনে রয়েছে পরিবারে সংলাপের ঘাটতি। অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সারদের আধিপত্য। পিতামাতার নিজের মানসিক চাপ। বিকৃত প্রতিযোগিতামূলক সমাজব্যবস্থা। আজ অনেক অভিভাবক জানেন না—কীভাবে সন্তানের কাছে পৌঁছাতে হয়। তারা নিজেরাই কর্মব্যস্ত, ক্লান্ত, মানসিকভাবে নিঃশেষ।

বিশ্বের অবস্থা কী বলছে?

জাপানে টিনএজ আত্মহত্যার হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে। সুইডেনে, গত ১০ বছরে কিশোরীদের বিষণ্ণতা বেড়েছে ৪৭%। যুক্তরাষ্ট্রে, CDC বলছে—“Teenage girls are experiencing record levels of sadness, violence, and suicidal thoughts.” বাংলাদেশে, শহরাঞ্চলে স্কুলগামী কিশোরীদের মধ্যে বিষণ্ণতা বেড়েছে প্রায় ৫০% (মনোরোগ ইনস্টিটিউট, ২০২৩)।

তাহলে বাবা-মা কী করবেন?

শুনুন, শাসন নয় – সন্তানকে সময় দিন, তার কথার পেছনে আবেগ বুঝুন।
প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ করুন – নিজেরাও মডেল হোন প্রযুক্তি ব্যবহারে।
কাউন্সেলিংয়ে ভীতি নয় – প্রয়োজনে পেশাদার সহায়তা নিন।
নিজের মানসিক স্বাস্থ্যও রক্ষা করুন – সন্তানকে বোঝাতে গেলে নিজের ভেতরে শান্তি থাকা জরুরি।

একটি প্রজন্ম যেন না হারিয়ে যায়। এই সংকট নিছক পারিবারিক নয়—এটি এক সামাজিক দায়। টিনএজারদের অভ্যন্তরীণ যন্ত্রণা বোঝা না গেলে, আমরা এক ‘চুপ করে থাকা বিষণ্ণ প্রজন্ম’ হারিয়ে ফেলব। সন্তান যখন বিদ্রোহ করে, সে আসলে জানিয়ে দেয়— ‘আমি ভালোবাসা চাই, বোঝার মানুষ চাই।’ আমাদের দায়িত্ব তাদের ভাষা বুঝে নেওয়া।

তারা//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • থানা হোক ন্যায়বিচারের প্রথম ঠিকানা: আইজিপি
  • থানায় হয়রানিমুক্ত সেবা দেওয়ার আহ্বান আইজিপির
  • ট্রাম্পবিরোধী স্লোগান দিয়ে উড়োজাহাজে গ্রেপ্তার ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক
  • শিক্ষার গতিপথ ও উন্নয়ন নিয়ে ঢাবিতে সেমিনার
  • শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা 
  • ‘আমি কী অপরাধ করেছি’— সবাই জানেন শিরোনামটা...
  • নারীদের নিয়ে বারে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আচরণ, আমিরাতের ক্ষোভে রাষ্ট্রদূতকে ফেরত নিচ্ছে ইসরায়েল
  • অফিসে প্রেম করার আগে জেনে রাখুন
  • টিনএজ সিনড্রোম: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এক নীরব সংকট
  • যে ৬টি সীমারেখা একজন পুরুষকে নারীর কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে