ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে আসা ছাত্রলীগের দুই নেতা–কর্মীকে পুলিশে সোপর্দ
Published: 2nd, March 2025 GMT
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে আসা নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের দুই নেতাকে মারধরের পর পুলিশে দেওয়া হয়েছে। রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনে এ ঘটনা ঘটে। পরে শিক্ষক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের উপস্থিতিতে তাঁদের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় সোপর্দ করা হয়।
মারধরের শিকার মাজাহারুল ইসলাম ওরফে নাঈম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপআপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক। অন্যজন মারুফ আহমেদ ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। তাঁরা দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁরা দুজন সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিতে ক্যাম্পাসে আসেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বেলা সাড়ে ১১টায় তাঁদের চতুর্থ বর্ষের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়। তাঁরা বিভাগকে না জানিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের ক্যাম্পাসে আসার খবর পেয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভাগের সামনে জড়ো হয়ে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। এতে পরীক্ষাস্থলে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরে তাঁদের পরীক্ষা হল থেকে বের করে বিভাগের শিক্ষক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে থানায় সোপর্দ করা হয়। কক্ষে ও কক্ষের বাইরে নেওয়ার সময় তাঁদের কয়েকজন মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
সমাজকল্যাণ বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক আসমা সাদিয়া রুনা বলেন, ‘তারা দুজন পরীক্ষা দিতে আসছিল। আমরা পূর্বে অবগত ছিলাম না। পরে তাদের থানায় সোপর্দ করা হয়।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিল, তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আর যারা এসব দোসরদের প্রশ্রয় দেবে, তাদেরও প্রতিহত করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক শাহিনুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওখানে একটা মব তৈরি হয়েছিল। বিভাগের শিক্ষকেরা প্রক্টরিয়াল বডির সহযোগিতায় দুজনকে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। মামলা আছে কি না জানা নেই।’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বেলা দুইটার দিকে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের দুজনকে থানায় নেওয়া হয়। আগের মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের তালিকায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আগামীকাল (সোমবার) সকালে তাঁদের আদালতে নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গুলশানে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলায় অপু গ্রেপ্তার
রাজধানীর গুলশানে সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির মামলায় এজাহারনামীয় আসামি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদ্য বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর ওয়ারী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে গুলশানে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে ওয়ারী থেকে ডিবির ওয়ারী বিভাগের সদস্যরা গ্রেপ্তার করেছেন। তাকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।
গত ১৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে একটি চক্র রাজধানীর গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন জানে আলম অপু ওরফে কাজী গৌরব অপু এবং আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ। এ সময় শাম্মী আহমেদ দেশের বাইরে থাকায় তার স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে জিম্মি করে ভয় দেখানো হয়।
চক্রটি বাসায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করে প্রথম ধাপে ১০ লাখ টাকা আদায় করে নেয়। এর মধ্যে ৫ লাখ টাকা ভাগ পান অপু এবং বাকি ৫ লাখ পান রিয়াদ। চাঁদার দ্বিতীয় কিস্তি আনতে ২৬ জুলাই সন্ধ্যায় আবারও গুলশানের ওই বাসায় গেলে চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করে পুলিশ। তারা হলেন- আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ, ইব্রাহীম হোসেন মুন্না, সাকদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব এবং আমিনুল ইসলাম। তাদের সবাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বিভিন্ন পদে ছিলেন। গ্রেপ্তারের পরপরই তাদেরকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে, চাঁদাবাজির এ ঘটনায় গুলশান থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এজাহারনামীয় ছয় আসামি ও অজ্ঞাত ১০-১২ জন সমন্বয়ক পরিচয়ে ১৭ জুলাই সকালে আমার গুলশান-২ নম্বরের বাসায় আসে। যার মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ ও কাজী গৌরব অপু আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার দাবি করে। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি দেখায়। একপর্যায়ে আমি বাধ্য হয়ে ১০ লাখ টাকা দিই। পরে ১৯ জুলাই রাতে রিয়াদ ও অপু আমার বাসায় এসে ধাক্কাধাক্কি করে, যা আমি পুলিশকে ফোন করে জানাই। এ সময় অভিযুক্তরা সেখান থেকে সটকে পড়ে।
এজাহারে আরো বলা হয়েছে, ২৬ জুলাই শনিবার বিকেলে রিয়াদের নেতৃত্বে আসামিরা আমার বাসার সামনে এসে আমাকে খুঁজতে থাকে। আমি বাসায় না থাকায় বাসার দারোয়ান আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। এ সময় আসামিরা তাদের দাবিকৃত আরো ৪০ লাখ টাকা না দিলে আমাকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হবে বলে হুমকি দিতে থাকে।
ঢাকা/এমআর/রফিক