সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি নিয়ে বাড়ছে বিভক্তি। দেখা দিয়েছে অস্থিরতাও। আন্দোলনে না থাকা ছাত্র এবং ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন– এমন শিক্ষার্থীদের কমিটিতে রাখা নিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে মিছিল-সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। কমিটি থেকে পদত্যাগও করেছেন এক সদস্য। অস্থিরতার কারণে সম্মিলিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও সম্মিলিত মেডিকেল কলেজ সিলেটের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া আটকে গেছে। তবে কমিটির নেতারা জানিয়েছেন, সুবিধা না পেয়ে কেউ কেউ অপপ্রচার করছেন। তাদের শোকজ করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেটের সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিবকে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি অবা‌ঞ্ছিত ঘোষণা করে সংবাদ সম্মেলন করেন পাঁচটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশ। তারা ১৬ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত সংগঠনের সিলেট মহানগর আহ্বায়ক গঠিত কমিটি প্রত্যাখ্যান করেন। নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হাসান আহমদ চৌধুরী মাজেদকে মুখ্য সংগঠকের পদ দেওয়া হয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন। 

এ নিয়ে বিভক্তি দেখা দিলে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মহানগর কমিটি স্থগিত ঘোষণা করেন সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব। তিনি ফেসবুক পোস্টে লিখেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর কমিটিতে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক ভুল থাকায় পেজ থেকে কমিটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সংশোধনের পর কমিটি প্রকাশ করা হবে। 
সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহিদ হাসান অভিযোগ করেন, আসাদুল্লাহ গালিব আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি ঘোষণা দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট মহানগরের কমিটির আহ্বায়ক পদ ছাত্রলীগ নেতাকে দেওয়া হয়েছে। এর আগেও জেলা কমিটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। সম্প্রতি নগর কমিটি নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসমন্বয়ক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক ফয়সাল হোসেন। পোস্টে তিনি জুলাই আন্দোলনের মূল যোদ্ধাদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠনের অভিযোগ করেন। 

গত ১৩ অক্টোবর গোলাম মর্তুজা নামে জেলা কমিটির এক সমন্বয়ককে সুযোগসন্ধানী আখ্যা দিয়ে তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বিবৃতি দেন ২৫ জন সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়ক। বিবৃতিতে তারা অভিযোগ করেন, গোলাম মর্তুজা ৫ আগস্টের আগের কর্মসূচিতে অংশ না নিয়েও নিজেকে প্রধান 
সমন্বয়ক দাবি করে সিলেটের আন্দোলন সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়েছেন। 

গত ৫ ডিসেম্বর সিলেট জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ২৭২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। জেলা পর্যায়ে এটি ছিল সংগঠনের ১৬তম কমিটি। সংগঠনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্য সচিব আরিফ সোহেল ছয় মাসের জন্য এ কমিটি অনুমোদন করেন। একইভাবে তারা গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মহানগর কমিটির অনুমোদন দেন। জেলার আহ্বায়ক কমিটিতে মদন মোহন কলেজের শিক্ষার্থী আকতার হোসেনকে আহ্বায়ক করা হয়। সদস্য সচিব করা হয় আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নুরুল ইসলামকে। কমিটিতে একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্মচারী ও একাধিক নিষ্ক্রিয় কর্মীকে রাখাসহ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত একাধিক ব্যক্তিকে রাখায় অসন্তোষ দেখা দেয়। একদিনের মাথায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেট জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জুয়েল আহমদ পদত্যাগ করেন। তিনি সমকালকে বলেন, কমিটিতে অছাত্র, ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ও আন্দোলনে ছিলেন না– এমন ব্যক্তি রাখায় তিনি পদত্যাগ করেছেন। 
এদিকে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান রিয়াদের কক্ষে ঢুকে এলোপাতাড়ি মারধরের প্রতিবাদে ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে নগরীতে বৈষম্যবিরোধী ব্যানারে মিছিল করেন কিছু শিক্ষার্থী। পরদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেট জেলার মুখপাত্র মালেকা খাতুন সারা দাবি করেন, তাদের কোনো মিছিল বের হয়নি। সংগঠনের নাম ভাঙানো হয়েছে।
জানতে চাইলে জেলা আহ্বায়ক আকতার হোসেন বলেন, একটি পক্ষ সুবিধা না পেয়ে এসব করছে। সবাইকে পছন্দমতো জায়গা দেওয়া অসম্ভব। 
সংগঠন নিয়ে কোনো বিভক্তি বা অস্থিরতা নেই বলে দাবি করেন আকতার। সিলেটের সমন্বয়ককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী নিয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণার এখতিয়ার কারও নেই। যিনি করেছেন, তাঁকে শোকজ করা হয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কম ট সমন বয়ক য গ কর ন ব সরক র স গঠন র কম ট ত কম ট র ক কম ট র কম ট সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৩৫ কিলোমিটারজুটে যানজট

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার নিমশার থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটারজুড়ে যানজট দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকেরা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি কাভার্ড ভ্যান উল্টে যাওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এ যানজট দেখা দেয়। 

হাইওয়ে পুলিশ  জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে মহাসড়কে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার নূরীতলা এলাকায় একটি কাভার্ড ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। ফেনী থেকে রেকার এনে কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধারের কাজ শুরু করে পুলিশ। 

সকাল সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কে যানজট দেখা গেছে। 

ঢাকাগামী রয়েল পরিবহনের চালক রমিজ উদ্দিন বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা করে বুড়িচংয়ের নিমশার বাজারে যানজটে এক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। ৫ মিনিট গাড়ি চললে ২০ মিনিট বসে থাকতে হয়। এভাবে ১০টা ৪০ মিনিটে চান্দিনায় পৌঁছেছি। এ সময়ে ঢাকার কাছাকাছি থাকার কথা ছিল। 

নিমশার বাজারে আটকে থাকা প্রাইভেট কারের যাত্রী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভোর থেকে যানজট অথচ সড়কে হাইওয়ে পুলিশ দেখছি না। 

ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন বলেন, মহাসড়কের নূরীতলা এলাকায় উল্টে কাভার্ড ভ্যানটি আড়াআড়িভাবে পড়ে ছিল। পরে ঢাকামুখী লেনের বেশ কিছু গাড়ি উল্টো পথে ঢোকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফেনী থেকে ক্রেন এনে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। 

হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিওনের পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খাইরুল আলম সমকালকে বলেন, দুর্ঘটনার কারণেই যানজট দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ