অপেক্ষার পর পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ
Published: 3rd, March 2025 GMT
২৫ মার্চের পর রংপুর ইপিআর উইংয়ের বাঙালি সদস্যরা অবস্থান নেন কাউনিয়ায়। ৩১ মার্চ রংপুর সেনানিবাস থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৬ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স কাউনিয়ার দিকে অগ্রসর হয়। তখন ইপিআর সেনারা কৌশলগত কারণে পিছু হটে তিস্তা রেলসেতুর কুড়িগ্রাম প্রান্তে অবস্থান নেন। মুক্তিযোদ্ধাদের দলে ছিলেন এরশাদ আলী। এখানে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন লালমনিরহাট,
কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম ও কুড়িগ্রাম থেকে আসা ইপিআর সদস্য, পুলিশ, আনসার ও ছাত্র-জনতা। তাঁরা রেলসেতুর মাঝের স্লিপার খুলে কুড়িগ্রাম প্রান্তে লাইনের ওপর গাছের গুঁড়ি ফেলে রাখেন।
১ এপ্রিল কাউনিয়া রেলস্টেশন থেকে একদল পাকিস্তানি সেনা ট্রেনে তিস্তা সেতু অভিমুখে যাত্রা করে। মুক্তিযোদ্ধারা সেতুর কুড়িগ্রাম প্রান্তে প্রতিরক্ষা অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের অপেক্ষায় ছিলেন। ট্রেন মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রের আওতায় আসামাত্র তাঁরা একযোগে আক্রমণ চালান। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীও পাল্টা আক্রমণ চালায়। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মেজর এজাজ মোস্তফা, ১৫ জন সেনা ও কাউনিয়া থানার ওসি নিহত হন। বাকি পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে যায়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এ ছিল বিরাট সাফল্য। এ সাফল্যে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে উত্সাহ-উদ্দীপনা বহু গুণ বেড়ে যায়।
যুদ্ধের সাফল্যে এরশাদ আলী ও তাঁর সহযোদ্ধারা তখন বেশ উদ্দীপ্ত। তবে আনন্দের আতিশয্যে তাঁরা ভাসছেন না। এ রকম আনন্দের মধ্যেও সবাই তিস্তা রেলসেতুর প্রতিরক্ষা অবস্থানের নিজ নিজ বাংকারে সজাগ-সতর্ক। কারণ, যেকোনো সময় পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের ওপর আবারও আক্রমণ করতে পারে। রাতে তাঁরা পালা করে ঘুমালেন।
২ এপ্রিল। সকাল থেকেই সত্যি সত্যি এরশাদ আলী ও তাঁর সহযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর শুরু হলো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আর্টিলারি গোলাবর্ষণ। পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নতুন দল ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে রংপুর সেনানিবাস থেকে পরদিন এখানে এসে আবার আক্রমণ চালায়। বিপুলসংখ্যক পাকিস্তানি সেনা ব্যাপক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এই আক্রমণ পরিচালনায় অংশ নেয়। আক্রমণের প্রচণ্ডতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেন মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেন। কিন্তু এরশাদ আলী গেলেন না। বিপুল বিক্রমে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে লড়াই করতে থাকলেন। তাঁর বীরত্বে উদ্দীপ্ত হলেন আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা নিজ নিজ বাংকার থেকে যুদ্ধ করতে থাকেন। যুদ্ধের একপর্যায়ে এরশাদ আলীর সহযোদ্ধা আতাহার আলী মল্লিক (বীর বিক্রম) শহীদ হন। কিছুক্ষণ পর একঝাঁক গুলি এসে লাগে এরশাদ আলীর বুকে। ভেঙে পড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ। বাকি মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হলেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান দখল করে নেয়। রক্তে রঞ্জিত বাংকারে পড়ে থাকল এরশাদ আলীর নিথর দেহ।
সহযোদ্ধারা এই অপারেশনে শহীদ দুই মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ উদ্ধার করতে পারেননি।
এরশাদ আলী চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন দিনাজপুর ইপিআর সেক্টরের রংপুর উইংয়ে।
# এরশাদ আলী, বীর উত্তম
গ্রাম: বৈষ্ণবপুর, সেনবাগ, নোয়াখালী। বাবা আলী মিয়া, মা আসমতের নেছা। স্ত্রী নুরুন নেছা। তাঁদের এক মেয়ে। খেতাবের সনদ নম্বর ৪৯।
শহীদ ২ এপ্রিল ১৯৭১।
সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা। প্রথম খণ্ড। প্রথমা প্রকাশন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অবস থ ন সহয দ ধ র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না, মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন: সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, 'আমাদের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে একটা নেতিবাচক সংবাদ দেখলেই যাচাই-বাছাই না করে শেয়ার করে দেওয়া হয়। অত্যন্ত ভিত্তিহীন সংবাদও আমরা শেয়ার করে দেই।'
সিইসি বলেন, 'দয়া করে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না। এই মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন। তথ্যটা যেন আগে যাচাই করে তারপরে শেয়ার করেন।'
আজ সোমবার রাজধানীর ভাটারায় আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নে (এজিবি) এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন সিইসি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভুয়া সংবাদের প্রচার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপপ্রয়োগ রোধে করণীয় সম্পর্কে তিনি এসব কথা বলেন।
থানা আনসার কোম্পানি/প্লাটুন সদস্যদের আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণের (৪র্থ ধাপ) সমাপনী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিইসি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো সংবাদ দেখা মাত্রই নাগরিকদের যাচাইবাছাই করতে আহ্বান জানান সিইসি। নিশ্চিত হওয়ার আগে শেয়ার না করতে বলেন তিনি।
জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে আনসার ভিডিপির ভূমিকাকে মূল শক্তি বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, 'এনারাই অধিক সংখ্যায় নিয়োজিত থাকেন। এবং আমাদের হিসেব করতে গেলে প্রথম এদেরকেই হিসেব করতে হয় যে, কতজন আনসার ভিডিপি সদস্য আমরা মোতায়েন করতে পারব। মূল কাজটা আঞ্জাম (সম্পাদন) দিতে হয় কিন্তু আনসার এবং ভিডিপির সদস্যদের।'
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। নির্বাচনকালীন জনগণের নিরাপত্তা, ভোট কেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণে আনসার বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি। নির্বাচনে দেশজুড়ে প্রায় ৬ লাখ আনসার ও ভিডিপি সদস্য দায়িত্বপালন করবেন বলেন মহাপরিচালক।
অনুষ্ঠানে মহড়ায় ঢাকা মহানগর আনসারের চারটি জোনের অধীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩২০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য অংশ নেন। আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা টহল, দায়িত্ব বণ্টন ও জরুরি প্রতিক্রিয়া অনুশীলনে অংশ নেন।
মহড়ায় ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া, ভোটারদের শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ভোট প্রদানে সহায়তা, জাল ভোট প্রতিরোধ, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা এবং সেনা, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে দ্রুত সমন্বয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন জোনের অধিনায়ক এবং প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।