ছবি: প্রথম আলো

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মার্জিন ঋণ-নেগেটিভ ইক্যুইটি-প্রভিশনের তথ্য চায় বিএসইসি

দেশের পুঁজিবাজারের প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কি পরিমাণ মার্জিন ঋণ রয়েছে এবং এর বিপরীতে সৃষ্ট অনাদায়ী ক্ষতি (নেগেটিভ ইক্যুইটি) ও প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) কি পরিমাণ রয়েছে তার হালনাগাদ তথ্য জানতে চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। দুটি পৃথক পৃথক নিয়মে এসব তথ্য জমা দিতে হবে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনকে (বিএমবিএ) এসব তথ্য সংগ্রহকে বিএসইসিতে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনার চিঠি ডিএসই ও সিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিএমবিএ’র সভাপতিকে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে গত ২৪ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানগুলোকে মার্জিন অ্যাকাউন্টে সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটির ওপর প্রভিশন সংরক্ষণের সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ আগামী ৩০ জুনের মধ্যে জমা দিতে নির্দেশ দেয় বিএসইসি। তারই আলোকে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে মার্জিন ঋণ, নেগেটিভ ইক্যুইটি ও প্রভিশনের তথ্য চেয়েছে বিএসইসি।

আরো পড়ুন:

ঋণে জর্জরিত ৫ কোম্পানিতে বিএসইসির নজরদারি, কমিটি গঠন

সূচক ডিএসইতে কমলেও সিএসইতে বেড়েছে

বিএসইসির নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, সর্বশেষ মার্জিন ঋণের বিপরীতে সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটি এবং মার্জিন অ্যাকাউন্টের বিপরীতে প্রভিশনের তথ্য প্রদান করতে হবে। সেই সাথে স্টক ডিলার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের নিজস্ব পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ারের তথ্য চলতি মাসের মধ্যে জমা দিতে বলা হলো।

এছাড়া নির্দেশনায় নেতিবাচক ইকুইটি ও মার্জিন ঋণে অগ্রগতি প্রতিবেদনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতাষ্ঠানের নাম, ট্রেক নম্বার, মার্জিন হিসাবের নাম, বিও নাম্বার, বিও হিসাব খোলার তারিখ, মার্জিন ঋণ দেওয়া নগদ অর্থ ও শেয়ারের পরিমাণ এর মধ্যে কত জমা ও তোলা হয়েছে, সুদের পরিমাণ, সুদ ও আসল মিলিয়ে সবশেষ মার্জিন ঋণের পরিমাণ এবং পরিশোধের তারিখসহ অন্যান্য তথ্য জমা দিতে হবে।

অপরদিকে নির্দেশনায় মার্জিন ঋণে অগ্রগতি প্রতিবেদনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের নাম, ট্রেক নাম্বার, সচল‌ বিও হিসাবের পরিমাণ, মার্জিন ঋণ নেওয়া বিও হিসাবের পরিমাণ, নেগেটিভ ইক্যুইটির বিও এর পরিমাণ, পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ, নিট সম্পদের পরিমাণ ও প্রভিশনের পরিমাণসহ অন্যান্য তথ্য জমা দিতে হবে।

তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রভিশনিং বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি বাদে পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের মোট নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮২৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের পর থেকে এ সমস্যা আরো প্রকট হয়েছে। গত ১৫ বছরের পুঞ্জিভূত এ সমস্যা এখন বোঝায় পরিণত হয়েছে। তাই এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে চলতি বছরের ২৮ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করে সহায়তা ও পরামর্শ চায় বিএসইসি। পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পরামর্শে গত ২৪ এপ্রিল বিএসইসির ৯৫৩তম জরুরি কমিশন সভায় পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের গ্রাহকের মার্জিন অ্যাকাউন্টে আনরিয়েলাইজড লস বা সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটির উপর প্রভিশন সংরক্ষণের সময়সীমা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।

এ সম্পর্কে বিএসইসি জানায়, ডিবিএ ও বিএমবিএ’র আবেদনের প্রেক্ষিতে স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের গ্রাহকের মার্জিন অ্যাকাউন্টে সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটির ওপর প্রভিশন সংরক্ষণের সময়সীমা ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একইসঙ্গে নেগেটিভ ইক্যুইটি ওপর প্রভিশন সংরক্ষণের সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ আগামী ৩০ জুনের মধ্যে কমিশনে জমা দিতেও নির্দেশ দেওয়া হলো।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ডিএসই ও সিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারোজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৪৬৭টি মার্জিন বিও হিসাব থেকে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া মোট মার্জিন ঋণের পরিমাণ ১৮ হাজার ১২৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

এর মধ্যে ডিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজগুলো বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ দিয়েছে ১১ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকৃত নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ ৫ হাজার ১৪৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং সুদ ১ হাজার ১৯১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ফলে, ডিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজগুলোর মোট নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৩৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্রোকারেজ হাউজগুলো মোট প্রভিশন রেখেছে ১ হাজার ৪৫৮ কোটি ৯ লাখ টাকা।

সিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজগুলো বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ দিয়েছে ৩৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকৃত নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ ৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং সুদ ২১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ফলে, সিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজগুলোর মোট নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।এর বিপরীতে ব্রোকারেজ হাউজগুলো মোট প্রভিশন রেখেছে ১ হাজার ৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

অন্যদিকে, বিএসইসির অনুমোদিত মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ দিয়েছে ৬ হাজার ৫৪৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকৃত নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ ২ হাজার ৭০৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা এবং সুদ ১ হাজার ৪৫০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ফলে, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মোট নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১৫৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো মোট প্রভিশন রেখেছে ১ হাজার ২৩৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

সে হিসেবে ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ডিএসই ও সিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের মোট নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫২৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মোট প্রভিশন রেখেছে ২ হাজার ৭০১ কোটি ১০ লাখ টাকা। সে হিসেবে প্রভিশনিং বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি বাদে ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মোট নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮২৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

ঢাকা/এনটি/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ