মিডিয়া ও বিজ্ঞাপন খাতের বাস্তবতা ও সম্ভাবনা
Published: 3rd, March 2025 GMT
বাংলাদেশের গণমাধ্যম খাত গত কয়েক দশকে নাটকীয় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বিটিভি থেকে অনেক বেসরকারি টিভি চ্যানেলের উত্থান এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের প্রসার মিলিয়ে এই খাতকে দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে পরবর্তী ১০ বছরে টিভি চ্যানেলগুলোর দর্শক সংখ্যা কমে গেছে। আমাদের মিডিয়া-অভ্যাস পরিবর্তন ও ডিজিটাল মিডিয়ার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এর মূল কারণ।
নব্বই দশকের আগ পর্যন্ত বিটিভি, কয়েকটি সংবাদপত্র ও রেডিও ছিল আমাদের গণমাধ্যম। ১৯৯২ সালে প্রথম বিদেশি চ্যানেল হিসেবে সিএনএন দেখা যায় বাংলাদেশে, যা স্যাটেলাইট যুগের সূচনা করে। এর পর ধীরে ধীরে স্থানীয় কেবল টেলিভিশন বিকশিত হয়। ২০০৩-০৪ সালের পর ডিজিটাল বিপ্লব গণমাধ্যমের চেহারা পুরোপুরি বদলে দেয়। প্রযুক্তিগত বিবর্তনের সঙ্গে এই পরিবর্তন অনিবার্য হলেও গণমাধ্যম খাত আয় সংকোচন ও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের কারণে ভয়াবহ প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছে। তবে সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। বর্তমানে বিজ্ঞাপন ও গণমাধ্যম খাত তিনটি প্রধান অংশীজনের ওপর নির্ভরশীল– বিজ্ঞাপনদাতা, যারা তাদের ব্র্যান্ডের প্রচারে বিনিয়োগ করে; বিজ্ঞাপনী সংস্থা, যারা পরিকল্পনা ও বাজেট ব্যবস্থাপনা করে; এবং মিডিয়া, যারা বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে।
দেশের গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। স্থানীয় বিজ্ঞাপনদাতার ক্রমবিকাশ দেশের অর্থনীতি ও গণমাধ্যম খাতের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক। অন্যদিকে বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো সঠিক দর্শক নির্ধারণ ও বিজ্ঞাপন থেকে সর্বোচ্চ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কার্যকর মিডিয়া পরিকল্পনায় দর্শকের সংখ্যা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক সংখ্যা জানার যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় এই খাতে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় পিছিয়ে। এ ছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশে ৪০টির বেশি স্থানীয় টিভি চ্যানেল, ১৫০টির বেশি দৈনিক সংবাদপত্র ও ৭টির বেশি রেডিও স্টেশন রয়েছে। ফলে দর্শক ও পাঠক অনেক বিভক্ত। যদিও ডিজিটাল মিডিয়া ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, তবে অফলাইন মিডিয়ার আয় স্থবির; বিশেষত টিভির দর্শকের সংখ্যা যথাযথ না জানায় সংকট আরও তীব্র হয়েছে।
বাংলাদেশে মিডিয়া শেয়ার (শতাংশ): টিভি ৫১%, সংবাদপত্র ১৩%, আউটডোর ৪%, ইন্টারনেট ৩১%, পাশাপাশি স্থানীয় দর্শকদের আকর্ষণ করতে হলে দেশীয় কনটেন্ট পরিকল্পনা আরও উন্নত করা জরুরি। কারণ বাংলাদেশ কেবল শিল্প লিমিটেডের তথ্য অনুযায়ী দেশে টিভি দেখার মোট সময়ের ৬০-৭০ শতাংশ বিদেশি চ্যানেলগুলো দখল করে আছে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের চ্যানেলও রয়েছে।
বাংলাদেশে এখনও ব্যাপক পরিসরে মিডিয়া নীতি গড়ে ওঠেনি, যা স্থানীয় মিডিয়া সংস্থাগুলোর জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। যেখানে কেবল টিভি সাবস্ক্রিপশন বাজারটি টিভি বিজ্ঞাপন খাতের চেয়ে তিন গুণ (যার বার্ষিক মূল্য প্রায় ১,৬০০ কোটি টাকা), সেখানে স্থানীয় টিভি চ্যানেলগুলো সাবস্ক্রিপশন থেকে কোনো আয় পায় না। সঠিক আয়ের মডেলের অভাব দেশের মিডিয়া খাতের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা। অথচ কেবল সাবস্ক্রিপশন থেকে আয়ের কিছু অংশ পেলেও মিডিয়া খাতের টিকে থাকা সহজ হতো।
প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে মিডিয়া খাতে বেশ কিছু কৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে–
দর্শকের সংখ্যা: মিডিয়া পরিকল্পনার জন্য সঠিক উপাত্ত জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টিভি রেটিং সিস্টেম, জাতীয় মিডিয়া জরিপ ও ডিজিটাল কনজাম্পশন অ্যানালিটিকস জোরদার করে; একই সঙ্গে উন্নত কনটেন্ট পরিকল্পনা করার মধ্য দিয়ে বিনিয়োগের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব। এটি বিজ্ঞাপনের বাজারে সমতাভিত্তিক ক্ষেত্র তৈরি করবে, যেখানে বিজ্ঞাপনদাতারা কেবল বড় বাজেটের ওপর নির্ভর না করে উন্নত পরিকল্পনায় সফল হতে পারবে।
মিডিয়া নীতি ও পরিকল্পনা: স্থানীয় মিডিয়াকে রক্ষা ও উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী নীতিমালা গঠন জরুরি। পাশাপাশি বিজ্ঞাপনের বাইরেও বিভিন্ন আয়ের উৎস সন্ধান করতে হবে। কেবল টিভি আয়ের অংশীদারিত্ব, সিন্ডিকেশন ও ডিজিটাল মাধ্যমে কনটেন্ট প্রচার, বৈচিত্র্যময় কনটেন্ট তৈরিতে করপোরেট ও সরকারি সংস্থার অংশীদারিত্ব। যদি পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কা স্থানীয় কনটেন্টের মাধ্যমে দর্শকদের ধরে রাখতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ কেন পারবে না?
মেধার বিকাশ: মিডিয়া পরিকল্পনায় সৃজনশীলতা ও বিশ্লেষণমূলক দক্ষতার মধ্যে ভারসাম্য থাকা জরুরি। শিক্ষা ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করলে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য প্রয়োজনীয় কর্মশক্তি গড়ে তোলা সম্ভব। অস্বীকারের উপায় নেই, বাংলাদেশের মিডিয়া খাত বর্তমানে এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এ পরিস্থিতিতে সঠিক দিকনির্দেশনা খুঁজে নেওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবন্ধকের সমাধান ও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে মিডিয়া খাত প্রকৃত সম্ভাবনা উন্মোচন করতে পারে; একই সঙ্গে দেশের বহুল প্রত্যাশিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। সঠিক নীতি, উন্নত পরিমাপ ব্যবস্থা এবং দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে পারলে এই দ্রুত পরিবর্তনশীল ডিজিটাল যুগেও বাংলাদেশের মিডিয়া খাত প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে টিকে থাকতে পারবে। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে শক্তিশালী মিডিয়া কাঠামো গড়ে তোলার বিকল্প নেই। কারণ, মিডিয়া চিরকালই নিপীড়িত ও সুবিধাবঞ্চিতদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠে এসেছে। ফলে মিডিয়া, বিজ্ঞাপনদাতা ও এজেন্সিগুলোর মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করা সর্বোচ্চ গুরুত্বের দাবি রাখে।
রেজাউল হাসান: ম্যানেজিং পার্টনার, মাইন্ডশেয়ার বাংলাদেশ
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চুম্বন দৃশ্যের অভিজ্ঞতা ভয়ংকর ছিল: মধু
বলিউড অভিনেত্রী মধু শাহ। নব্বই দশকের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী মধু নামেই পরিচিত। মনি রত্নম নির্মিত ‘রোজা’ সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসা কুড়ান। নব্বই দশকে একটি সিনেমায় চুম্বন দৃশ্যে অভিনয় করেন মধু, যা ভীষণ তিক্ত অভিজ্ঞতা ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।
কয়েক দিন আগে নিউজ১৮-কে সাক্ষাৎকার দেন মধু। এ আলাপচারিতা তিনি বলেন, “আজকাল সিনেমায় যে ধরনের চুম্বন দৃশ্য দেখা যায় এটি তেমন ছিল না। এটি ঠোঁটে খোঁচা দেওয়ার মতো অভিজ্ঞতা ছিল। সত্যি এটি আমার খারাপ লেগেছিল।”
চুম্বন দৃশ্যের অভিজ্ঞতা ভয়ংকর ছিল। তা জানিয়ে মধু বলেন, “শুটিং শুরু করার আগে আমাকে চুমু খেতে বলা হয়। কিন্তু তার আগে এ বিষয়ে আমাকে জানানো হয়নি। এ নিয়ে যখন প্রশ্ন করি, তখন তারা আমাকে পাশে নিয়ে গিয়ে কথা বলে। তারা আমাকে ব্যাখ্যা করে, এই দৃশ্যটি কেন গুরুত্বপূর্ণ এবং সেই কারণেই আমি চুম্বন দৃশ্যে অভিনয় করি। কিন্তু এটা ছিল আমার করা সবচেয়ে ভয়ংকর কাজ।”
চুম্বন দৃশ্যে যখন অভিনয় করেন, তখন মধুর বয়স ছিল ২২ বছর। তা স্মরণ করে এই অভিনেত্রী বলেন, “সিনেমায় চুম্বন দৃশ্যটির কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। সিনেমায় দৃশ্যটি অন্তর্ভুক্ত না করার জন্য পরিচালকের সঙ্গে কোনো কথাও হয়নি। আমি এটি এড়িয়ে গিয়েছিলাম। কেবল বয়সের দিক দিয়ে নয়, আমি সবদিক থেকেই তখন খুব ছোট ছিলাম। এখনকার ২২-২৪ বছর বয়সি ছেলে-মেয়েরা ভীষণ চালাক। কিন্তু ২২ বছর বয়সে আমি খুব বোকা ছিলাম।”
১৯৯৬ সালে দীপা মেহতা নির্মাণ করেন ‘ফায়ার’ সিনেমা। এতে শাবানা আজমি, নন্দিতা দাস সমকামী চরিত্রে অভিনয় করেন। এ সিনেমা পর্দার ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে মধুর ধারণা বদলে দিতে শুরু করে। এ তথ্য উল্লেখ করে মধু বলেন, “আমি বলছি না, পর্দায় চুম্বন করা খারাপ। ‘ফায়ার’ সিনেমায় যখন শাবানাজির মতো অভিনেত্রীর অভিনয় দেখি, তখন আমার মনে হয়েছিল সত্যি তারা তাদের প্রতিবন্ধকতা ভেঙে ফেলেছেন, যা আমি তখন করতে পারিনি। আমি সেই সব শিল্পীদের প্রশংসা করি, যারা মাথা ন্যাড়া করতে পারেন বা সিনেমায় সমকামীর ভূমিকায় অভিনয় করতে পারেন।”
১৯৯১ সালে তামিল ভাষার সিনেমার মাধ্যমে রুপালি জগতে পা রাখেন মধু। একই বছর ‘ফুল আউর কাঁটা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন এই অভিনেত্রী। হিন্দি সিনেমায় পা রেখেই নজর কাড়েন। ৫৬ বছরের মধু অভিনয়ে এখন খুব একটা সরব নন। তবে প্রতি বছরে দুই একটা সিনেমায় দেখা যায় তাকে।
ঢাকা/শান্ত