বাংলাদেশের গণমাধ্যম খাত গত কয়েক দশকে নাটকীয় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বিটিভি থেকে অনেক বেসরকারি টিভি চ্যানেলের উত্থান এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের প্রসার মিলিয়ে এই খাতকে দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে পরবর্তী ১০ বছরে টিভি চ্যানেলগুলোর দর্শক সংখ্যা কমে গেছে। আমাদের মিডিয়া-অভ্যাস পরিবর্তন ও ডিজিটাল মিডিয়ার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এর মূল কারণ।

নব্বই দশকের আগ পর্যন্ত বিটিভি, কয়েকটি সংবাদপত্র ও রেডিও ছিল আমাদের গণমাধ্যম। ১৯৯২ সালে প্রথম বিদেশি চ্যানেল হিসেবে সিএনএন দেখা যায় বাংলাদেশে, যা স্যাটেলাইট যুগের সূচনা করে। এর পর ধীরে ধীরে স্থানীয় কেবল টেলিভিশন বিকশিত হয়। ২০০৩-০৪ সালের পর ডিজিটাল বিপ্লব গণমাধ্যমের চেহারা পুরোপুরি বদলে দেয়। প্রযুক্তিগত বিবর্তনের সঙ্গে এই পরিবর্তন অনিবার্য হলেও গণমাধ্যম খাত আয় সংকোচন ও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের কারণে ভয়াবহ প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছে। তবে সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। বর্তমানে বিজ্ঞাপন ও গণমাধ্যম খাত তিনটি প্রধান অংশীজনের ওপর নির্ভরশীল– বিজ্ঞাপনদাতা, যারা তাদের ব্র্যান্ডের প্রচারে বিনিয়োগ করে; বিজ্ঞাপনী সংস্থা, যারা পরিকল্পনা ও বাজেট ব্যবস্থাপনা করে; এবং মিডিয়া, যারা বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে।
দেশের গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। স্থানীয় বিজ্ঞাপনদাতার ক্রমবিকাশ দেশের অর্থনীতি ও গণমাধ্যম খাতের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক। অন্যদিকে বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো সঠিক দর্শক নির্ধারণ ও বিজ্ঞাপন থেকে সর্বোচ্চ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কার্যকর মিডিয়া পরিকল্পনায় দর্শকের সংখ্যা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক সংখ্যা জানার যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় এই খাতে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় পিছিয়ে। এ ছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশে ৪০টির বেশি স্থানীয় টিভি চ্যানেল, ১৫০টির বেশি দৈনিক সংবাদপত্র ও ৭টির বেশি রেডিও স্টেশন রয়েছে। ফলে দর্শক ও পাঠক অনেক বিভক্ত। যদিও ডিজিটাল মিডিয়া ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, তবে অফলাইন মিডিয়ার আয় স্থবির; বিশেষত টিভির দর্শকের সংখ্যা যথাযথ না জানায় সংকট আরও তীব্র হয়েছে। 

বাংলাদেশে মিডিয়া শেয়ার (শতাংশ): টিভি ৫১%, সংবাদপত্র ১৩%, আউটডোর ৪%, ইন্টারনেট ৩১%, পাশাপাশি স্থানীয় দর্শকদের আকর্ষণ করতে হলে দেশীয় কনটেন্ট পরিকল্পনা আরও উন্নত করা জরুরি। কারণ বাংলাদেশ কেবল শিল্প লিমিটেডের তথ্য অনুযায়ী দেশে টিভি দেখার মোট সময়ের ৬০-৭০ শতাংশ বিদেশি চ্যানেলগুলো দখল করে আছে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের চ্যানেলও রয়েছে। 
বাংলাদেশে এখনও ব্যাপক পরিসরে মিডিয়া নীতি গড়ে ওঠেনি, যা স্থানীয় মিডিয়া সংস্থাগুলোর জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। যেখানে কেবল টিভি সাবস্ক্রিপশন বাজারটি টিভি বিজ্ঞাপন খাতের চেয়ে তিন গুণ (যার বার্ষিক মূল্য প্রায় ১,৬০০ কোটি টাকা), সেখানে স্থানীয় টিভি চ্যানেলগুলো সাবস্ক্রিপশন থেকে কোনো আয় পায় না। সঠিক আয়ের মডেলের অভাব দেশের মিডিয়া খাতের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা। অথচ কেবল সাবস্ক্রিপশন থেকে আয়ের কিছু অংশ পেলেও মিডিয়া খাতের টিকে থাকা সহজ হতো। 
প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে মিডিয়া খাতে বেশ কিছু কৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে–

দর্শকের সংখ্যা: মিডিয়া পরিকল্পনার জন্য সঠিক উপাত্ত জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টিভি রেটিং সিস্টেম, জাতীয় মিডিয়া জরিপ ও ডিজিটাল কনজাম্পশন অ্যানালিটিকস জোরদার করে; একই সঙ্গে উন্নত কনটেন্ট পরিকল্পনা করার মধ্য দিয়ে বিনিয়োগের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব। এটি বিজ্ঞাপনের বাজারে সমতাভিত্তিক ক্ষেত্র তৈরি করবে, যেখানে বিজ্ঞাপনদাতারা কেবল বড় বাজেটের ওপর নির্ভর না করে উন্নত পরিকল্পনায় সফল হতে পারবে।
মিডিয়া নীতি ও পরিকল্পনা: স্থানীয় মিডিয়াকে রক্ষা ও উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী নীতিমালা গঠন জরুরি। পাশাপাশি বিজ্ঞাপনের বাইরেও বিভিন্ন আয়ের উৎস সন্ধান করতে হবে। কেবল টিভি আয়ের অংশীদারিত্ব, সিন্ডিকেশন ও ডিজিটাল মাধ্যমে কনটেন্ট প্রচার, বৈচিত্র্যময় কনটেন্ট তৈরিতে করপোরেট ও সরকারি সংস্থার অংশীদারিত্ব। যদি পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কা স্থানীয় কনটেন্টের মাধ্যমে দর্শকদের ধরে রাখতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ কেন পারবে না?

মেধার বিকাশ: মিডিয়া পরিকল্পনায় সৃজনশীলতা ও বিশ্লেষণমূলক দক্ষতার মধ্যে ভারসাম্য থাকা জরুরি। শিক্ষা ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করলে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য প্রয়োজনীয় কর্মশক্তি গড়ে তোলা সম্ভব। অস্বীকারের উপায় নেই, বাংলাদেশের মিডিয়া খাত বর্তমানে এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এ পরিস্থিতিতে সঠিক দিকনির্দেশনা খুঁজে নেওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবন্ধকের সমাধান ও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে মিডিয়া খাত প্রকৃত সম্ভাবনা উন্মোচন করতে পারে; একই সঙ্গে দেশের বহুল প্রত্যাশিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। সঠিক নীতি, উন্নত পরিমাপ ব্যবস্থা এবং দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে পারলে এই দ্রুত পরিবর্তনশীল ডিজিটাল যুগেও বাংলাদেশের মিডিয়া খাত প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে টিকে থাকতে পারবে। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে শক্তিশালী মিডিয়া কাঠামো গড়ে তোলার বিকল্প নেই। কারণ, মিডিয়া চিরকালই নিপীড়িত ও সুবিধাবঞ্চিতদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠে এসেছে। ফলে মিডিয়া, বিজ্ঞাপনদাতা ও এজেন্সিগুলোর মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করা সর্বোচ্চ গুরুত্বের দাবি রাখে।

রেজাউল হাসান: ম্যানেজিং পার্টনার, মাইন্ডশেয়ার বাংলাদেশ

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কনট ন ট র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি

নিয়োগপত্র নেই। এ কারণে চাকরির নিশ্চয়তাও নেই। দেওয়া হয় না পরিচয়পত্র। নেই কর্ম ঘণ্টার হিসাব। তবে রয়েছে মজুরিবৈষম্য ও জীবনের ঝুঁকি। এ চিত্র খুলনার বরফকলে কর্মরত বরফ শ্রমিকদের।

অবহেলিত ও অধিকার বঞ্চিত বরফকলের শ্রমিকেরা জানেন না মে দিবসের অর্থ। তারা শুধু এটুকু জানেন, কাজ থাকলে মজুরি পাবেন, অন্যথায় জুটবে না কিছু। খুলনার নতুন বাজার, রূপসা, শিপইয়ার্ড ও নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বরফ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে উঠে এসেছে ঝুঁকি ও বৈষম্যের এই চিত্র।

সরেজমিনে জানা গেছে, লবণ পানি এবং অ্যামোনিয়া গ্যাসের সংমিশ্রণে বরফের প্রতিটি ক্যান তৈরি হয়। এ কাজে প্রচণ্ড ঝুঁকি রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- অ্যামোনিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার লিকেজ হলে মৃত্যুসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা। এছাড়াও অধিকাংশ সময় হাত-পা ভিজে ঠান্ডা থাকায় ক্ষত থেকে ইনফেকশন হয়। এর বাইরে বুকে ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশি জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত অসুস্থতায় ভোগেন এখানকার শ্রমিকেরা। পাতলা বরফে অনেক সময় হাত-পা কেটে যায়। কিন্তু মালিক বা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের জন্য কোন ধরনের অ্যাপ্রোন বা নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করেন না। তবে দুর্ঘটনায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

আরো পড়ুন:

ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত

মহান মে দিবস: শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় সংস্কারে জোর সরকারের

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীর নতুন বাজার, নিউমার্কেট, শিপইয়ার্ড, রায়েরমহল এবং রূপসা উপজেলার পূর্ব রূপসা এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫টি বরফকল রয়েছে। এর মধ্যে নতুন বাজার ও পূর্ব রূপসায় সর্বাধিক বরফকল রয়েছে। এসব কলে গড়ে দশ জন হিসেবে দেড় শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন।

রূপসার নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত ‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’ কাজ করেন মোহাম্মদ রাসেল হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি হলেও পরিবার নিয়ে রূপসার জাবুসা এলাকায় বসবাস করেন। দীর্ঘ সাত বছর ধরে এই বরফকলে কাজ করছেন তিনি। রাসেল জানান, তাদের মাসিক বেতন নেই। নেই নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র। মূলত উৎপাদনের উপর প্রতি পিস বরফের ক্যান অনুযায়ী ১২ টাকা হারে মজুরি পান। নামমাত্র এ মজুরিতে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে সংসার ঠিকমতো চলে না।

‘‘তিন বছর আগে নির্ধারণ করা মজুরি এখনো চলছে। লোকসানের অজুহাতে মালিকপক্ষ মজুরি বাড়াতে চান না। তাদের মতো শ্রমিকদের কোন বেতন-বোনাস নেই। নো ওয়ার্ক, নো পে অর্থাৎ কাজ থাকলে মজুরি আছে কাজ না থাকলে নেই। মালিকদের এ সিদ্ধান্ত না মানলে চাকরিও থাকে না।’’ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন রাসেল হোসেন।

একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মোঃ জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘গড়ে প্রতিমাসে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা মজুরি পাই। কিন্তু মাসিক খাবার খরচ প্রায় ৩ হাজার টাকা। বাসা ভাড়া বাবদ ৩ হাজার টাকা চলে যায়।’’

তবে জাকির হোসেন ব্যাচেলর হওয়ায় কারখানার মধ্যেই থাকেন। বিয়ের পর এ কাজ করার ইচ্ছা নেই বলে জানান তিনি।

বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ-১-এ অপারেটর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন মোঃ সেলিম শেখ। তার জন্ম নড়াইলের লক্ষ্মীপাশা হলেও কর্মসংস্থানের কারণে রুপসার বাগমারা গ্রামে বসবাস করছেন। তিনি জানান, বর্তমান বয়স ৮৪। ২০ বছর বয়স থেকেই বরফ কারখানার সঙ্গে জড়িত। প্রথমে হেলপার হিসেবে ২৫০০ টাকা বেতনে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে অপারেটর হিসেবে মাসিক ১৫ হাজার টাকা পান। প্রতিদিন ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে কাজ শুরু করতে হয়। তবে সবসময় উৎপাদন না থাকলেও ২৪ ঘণ্টা কারখানায় থাকতে হয়। ছুটি পান না।

‘অ্যামোনিয়া গ্যাসের অতিরিক্ত চাপের কারণে সিলিন্ডার লিকেজ হলে মৃত্যু ঝুঁকি রয়েছে। তবে তিনি কখনো বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হননি বলে জানান তিনি।

‘মায়ের দোয়া আইস এন্ড কোল্ড স্টোরেজে’র শ্রমিক জাকারিয়া হাওলাদার বলেন, ‘‘চার বছর বরফকলে কাজ করছি। চাকরির ভবিষ্যৎ নেই। শ্রম দিতে পারলে মজুরি হয়, না হলে হয় না। নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র দেন না মালিকপক্ষ। বেতন বাড়ানোর কথা বললে তারা আমলে নেন না।’’

একই এলাকার ‘ব্রাইট অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’ কাজ করছেন মোঃ মুন্না গাজী ও মোঃ হাসান শেখ। তারা নগরীর জিন্নাপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। তারা দুজনেই মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতন পান। এর বাইরে তেমন কোন সুযোগ সুবিধা নেই।

‘ব্রাইট অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’র ম্যানেজার আশিকুর রহমান বিষয়টি স্বীকার করে জানান, কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সুরক্ষায় উদাসীন। এখানে অ্যামোনিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার মাঝেমধ্যেই লিক হয়। তবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। প্রতিষ্ঠানটিতে ৫৩২টি আইস উৎপাদনের ক্যানের প্লান্ট রয়েছে। তবে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ ক্যান বরফ উৎপাদন হয়। ছয়জন শ্রমিক কাজ করে বলে জানান তিনি।

‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ- ২'র ম্যানেজার জামাল উদ্দিন বলেন, ‘‘বরফের মূল ক্রেতা চিংড়ি ও সাদা মাছের ব্যবসায়ীরা। এর বাইরে গ্রীষ্ম মৌসুমে ভ্রাম্যমাণ ও দোকানে শরবত বিক্রেতারাও কারখানা থেকে বরফ কিনে নেন। গ্রীষ্ম মৌসুমের ৬ মাস চাহিদা থাকে এবং কিছুটা লাভের মুখ দেখা যায়। তবে শীত মৌসুমের ছয় মাস বরফের চাহিদা কম থাকে। তখন কারখানা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলসহ শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ও মজুরি দিয়ে লোকসান গুণতে হয়।’’

জামাল উদ্দিন স্বীকার করেন কারখানায় নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলেও তা এড়াতে কোন সরঞ্জাম নেই। তবে অপারেটরদের অ্যামোনিয়া গ্যাসের ঝুঁকি প্রতিরোধে মাক্স সরবরাহ করা হয়।

‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ-১'র মালিকপক্ষের প্রতিনিধি রিয়াদ-উল-জান্নাত সৈকত বলেন, ‘‘ব্যবসা খুব ভালো যাচ্ছে না। কখনো লাভ, কখনো লোকসান এভাবেই চলছে। গত বছর কারখানা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ৯ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।’’

তবে লাভ হলে শ্রমিক কর্মচারীদের মজুরি ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ বিষয়ে শ্রমিকদের সংগঠন রূপসা বেড়িবাঁধ হ্যান্ডলিং শ্রমজীবী ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ রিপন শেখ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত কয়েকটি বরফকলের ৪০ জন শ্রমিক তাদের ইউনিয়নের সদস্য। বিগত দেড় বছর আগে মজুরির সমস্যা নিয়ে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে দুই একজন শ্রমিক অভিযোগ করলে ইউনিয়নের মাধ্যমে সেটির সমাধান করে দেন তারা। কিন্তু বর্তমানে অভিযোগ নিয়ে কেউ আসে না।’’

বরফকলের শ্রমিকদের নিয়ে তারা মে দিবসের কর্মসূচি পালন করেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তারা//

সম্পর্কিত নিবন্ধ