অর্থপাচারের অভিযোগে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার বহুল আলোচিত সাদিক অ্যাগ্রোর চেয়ারম্যান ইমরান হোসেনকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) বেলা ১টা ২৩ মিনিটে তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। তাকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়েছে।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলামের আদালতে তার বিষয়ে শুনানি হবে।
গতকাল সোমবার সিআইডির সাব-ইন্সপেক্টর জোনাঈদ হোসেন মোহাম্মদপুর থানায় তিন জনের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ইমরান হোসেন, তৌহিদুল আলম জেনিথ ও সাদিক অ্যাগ্রো লিমিটেড সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের মাধমে চোরাচালান, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অনুমোদনহীন ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি ও সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে বিদেশে প্রায় ৮৬ লাখ টাকা পাচার করে। তারা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে গরু ও মহিষ এবং ভুটান ও নেপাল থেকে ছোট আকৃতির ভুট্টি গরু চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে এনে বিক্রি করেন। প্রতারণার মাধ্যমে দেশীয় গরু-ছাগলকে বিদেশি ও উচ্চ বংশীয় গরু-ছাগল বলে প্রচার করে উচ্চমূল্যে তা কোরবানির পশুর হাটে বিক্রি করেন। অবৈধভাবে উপার্জিত প্রায় ১২১ কোটি ৩২ লাখ ১৫ হাজার ১৪৪ টাকা অভিযুক্ত ব্যক্তি ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করা হয়েছে। ঢাকার কাস্টমস হাউজ কর্তৃক আটক করা এবং সাভারের কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে থাকা ১৫টি ব্রাহমা জাতের গরু সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক জবাই করে ন্যায্য মূল্যে মাংস বিক্রির কথা থাকলেও জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্রে সেগুলো জবাই দেখিয়ে কৌশলে তা হাতিয়ে নেওয়া হয়। এছাড়া, অনুমোদনহীনভাবে জোরপূর্বক মোহাম্মদপুর থানাধীন বেড়িবাঁধ এলাকায় রামচন্দ্রপুর সরকারি খাল ভরাট ও জবরদখল করেন তারা। সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে বিদেশে অর্থ পাচার করে ও অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করে সর্বমোট প্রায় ১৩৩ কোটি ৫৫ লাখ ৬ হাজার ৩৪৪ টাকা হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করেছেন অভিযুক্তরা।
ঢাকা/মামুন/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরের এমএম কলেজের ক্লাবগুলো যেভাবে শিক্ষার্থীদের তৈরি করছে
মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলার কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না রোকেয়া তাসমিমের। কলেজের ইতিহাস ক্লাবে যদি যুক্ত না হতেন, রোকেয়ার হয়তো জানাই হতো না, চমৎকার উপস্থাপনাও তিনি করতে জানেন। রোকেয়া পড়েন যশোরের সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের ইতিহাস বিভাগে। দ্বিতীয় বর্ষে।
রোকেয়া তাসমিমের মতো এমন আরও অনেক শিক্ষার্থীই নিজেকে ‘আবিষ্কারের’ সুযোগ পাচ্ছেন ক্লাব কার্যক্রমের মাধ্যমে। কলেজের ১৯টি বিভাগের মধ্যে অন্তত ৯টি বিভাগের শিক্ষার্থীদেরই নিজস্ব ক্লাব আছে। বিভাগের শিক্ষকদের পৃষ্ঠপোষকতায় শুধু যে ক্লাসরুমের বাইরেও বিষয়ভিত্তিক পড়ালেখার চর্চা হচ্ছে, তা নয়, এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা অর্জন করছেন নেতৃত্বের গুণ।
ইতিহাসের ইতিবাচক শক্তিগত ১৫ অক্টোবর ঢুঁ মেরেছিলাম এমএম কলেজের ইতিহাস বিভাগে। দেখা গেল একঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থী বিভাগের সেমিনার রুমে বসে আড্ডায় মেতেছেন। একফাঁকে বিভাগের শিক্ষার্থী ও ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় আবৃত্তি করে শোনালেন নিজের লেখা রুবাই (চার পঙ্ক্তির কবিতা)। একটি করে রুবাই শেষ হচ্ছিল, আর তাঁর সহপাঠীরা বলে উঠছিলেন, ‘সাধু সাধু’! এরপর দ্বিতীয় বর্ষের রোকেয়া তাসমিম শোনালেন গান। তালিও পেলেন তুমুল।
আরও পড়ুনঘরে শান্তি বজায় রাখতে কথাবার্তায় সংযত থাকতে হবে কোন রাশির জাতককে০১ নভেম্বর ২০২৫বিভাগের শিক্ষার্থী লিমা খাতুন বলেন, ‘আমাদের ক্লাবের মাধ্যমেই প্রথম বর্ষ থেকে শেষ বর্ষ পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর মধ্যে একটা বন্ধন তৈরি হয়েছে। নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা বেড়েছে। ক্লাবের উদ্যোগে কখনো আমরা বেরিয়ে পড়েছি রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজধানী সুন্দরবনের ধুমঘাটে। আবার কখনো ভরত রাজার দেউল পরিদর্শনে। সেখান থেকে ফিরে ইতিহাসের খোঁজে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে আমাদের মধ্যে গবেষণামুখী হওয়ার উৎসাহ বেড়েছে। সেমিনার পেপার তৈরির মতো জটিল বিষয় আমরা রপ্ত করেছি। ক্লাব আছে বলেই প্রতিদিন একধরনের রোমাঞ্চ নিয়ে ক্যাম্পাসে আসি, পাঠ গ্রহণ করছি।’
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, এই কলেজের ১৯টি বিভাগের মধ্যে শুরুতে ইতিহাস বিভাগই ক্লাব চালু করেছিল—২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর। ক্লাবের উদ্যোগে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য ভ্রমণ, ‘রিসার্চ মেথডোলজি’ শিরোনামে দিনব্যাপী কর্মশালা, ইফতার পার্টি, টি পার্টি ও পিঠা উৎসবের মতো নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। দুর্গত মানুষের পাশেও দাঁড়িয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ক্লাবের পৃষ্ঠপোষক ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ‘এই ক্লাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে কাজ করছে। পড়ালেখায় আনন্দ পাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গবেষণামুখী হয়েছে। সেমিনার, ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণসহ অনুষ্ঠান আয়োজনে কী ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়, তা-ও তারা শিখেছে। জড়তা কাটিয়ে কথা বলার দক্ষতা অর্জন করেছে।’
গণিতের গতিস্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিতভীতি দূর করতে দুর্বার গতিতে কাজ করে যাচ্ছে এমএম কলেজের গণিত ক্লাব। ক্লাবের উদ্যোগে ইতিমধ্যে যশোর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মিউনিসিপ্যাল প্রিপারেটরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আয়োজন করা হয়েছে অলিম্পিয়াড। অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া সেরা ১০ জন সনদ পেয়েছেন। তিনজন জিতেছেন পুরস্কার।
গণিত ক্লাবের দপ্তর সম্পাদক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গণিতভীতি দূর করতেই আমরা কাজ করি।’ ক্লাবের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে গণিতের জটিল সমস্যা তুলে দিয়ে আবার সেটির সমাধানও দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। এ ছাড়া পিঠা উৎসব, বার্ষিক বনভোজন ও মাসিক বৈঠকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করা হয়।
শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে বিভাগের ক্লাবগুলো অবদান রাখছে। এ ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বরাবরই কলেজ কর্তৃপক্ষ উৎসাহ দিয়েছে। প্রতিটি বিভাগ যেন সহশিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ক্লাব গড়ে তোলে, সে বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি আছে।এস এম শফিকুল ইসলাম, অধ্যক্ষ, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজফিন্যান্স ক্লাবের উদ্যোগে ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট