সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির অষ্টম সমাবর্তন গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলরের প্রতিনিধি হিসেবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডিগ্রি প্রদান করেন। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

এই সমাবর্তনে বিভিন্ন বিভাগের মোট ১ হাজার ৯২২ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চন্দ্রিমা চক্রবর্তী, ফার্মেসি বিভাগের আরিফুল করিম, বিবিএ বিভাগের রেমা রাণী পল, ফার্মেসি বিভাগের সুমাইয়া আক্তার ও ফার্মেসি বিভাগের হাবিবা খানম লুবনা তাঁদের স্নাতক ডিগ্রি ৪.

০ সিজিপিএসহ সম্পন্ন করেন এবং সম্মানজনক চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক অর্জন করেন।

সর্বোচ্চ সিজিপিএ ভিত্তিতে নির্বাচিত বিভিন্ন বিভাগের ২৭ জন শিক্ষার্থীকে ভাইস চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। সমাবর্তন সভাপতি মো. তৌহিদ হোসেন গ্র্যাজুয়েটদের হাতে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক প্রদান করেন, আর ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম ভাইস চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক প্রদান করেন। চন্দ্রিমা চক্রবর্তী সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন।

সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম নৈতিক নেতৃত্বের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং শিক্ষার্থীদের কেবল বস্তুগত সাফল্যের বাইরে গিয়ে চিন্তাভাবনা করার আহ্বান জানান।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম এবং সহ–উপাচার্য অধ্যাপক এম মোফাজ্জল হোসেন বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মেজর জেনারেল মো. আনোয়ারুল ইসলাম (অব.)।

আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ, আছে দৈনিক ২০০ টাকা ভাতা০৩ মার্চ ২০২৫

সমাবর্তনে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যবৃন্দ, একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটের সদস্যগণ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ, শিক্ষকমণ্ডলী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স উথইস ট ইউন ভ র স ট র অন ষ ঠ ন কর ন

এছাড়াও পড়ুন:

আলোর পাশে থেকেও তারা ‘অন্ধকারে’

রাজশাহী শহরের একটি মাদ্রাসায় পড়ত রুমন হোসেন (১৩)। মাদ্রাসার টিউশন ফি দিতে না পেরে বাবা নুর ইসলাম তাকে কাজে লাগিয়ে দেন। চার বছর ধরে সে কাজ করছে নগরের বিভিন্ন রেস্তোরাঁ, চা ও মোটরসাইকেলের দোকানে। এর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আছে বছর দুই ধরে। কখনো ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রি, কখনোবা কাজ করে চা ও জুসের দোকানে। সকাল আটটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত কাজ করে দৈনিক মজুরি পায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।

যে বয়সে দল বেঁধে স্কুলে যাওয়া ও খেলাধুলা করার কথা রুমনের, সেই বয়সে তাকে কাজ করতে হচ্ছে। রুমনের মতো এমন অনেক শিশু নানা কাজ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত তারা। আলোর পাশে থেকেও অন্ধকারে থাকার মতো অবস্থা তাদের।

রুমনের বাবা নূর ইসলাম পেশায় রিকশাচালক। তিনি জন্ডিসে আক্রান্ত থাকার কারণে বেশিক্ষণ রিকশা চালাতে পারেন না। রুমনের মা সংসার ছেড়ে চলে যাওয়ায় তার বাবা আরেকটি বিয়ে করেছেন। সৎমায়ের সঙ্গে রুমনের বনিবনা হয় না। তাই সে থাকে দাদির সঙ্গে। দাদি আগে একটি কারখানায় কাজ করতেন। তবে বার্ধক্যের কারণে তিনি এখন কাজ করতে পারেন না। প্রতিদিন রোজগার করে রুমন যে অর্থ পায়, তা দাদির হাতে তুলে দেয়। আলাপকালে রুমন হোসেন বলে, ‘আব্বা ছোটকালে ক্যাম্পাসের একটা দোকানে কাজ করত। তারপর আমারে কাজে লাগায়া দেয়। কাজের জন্য খেলাধুলা করতে পারি না। বন্ধুদের মিস করি।’

আজ ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস, যা মে দিবস হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের একটি জুসের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ১২ বছর বয়সী আরিফুল ইসলাম (শান্ত) কাজ করছে। কাজের ফাঁকে কথা হয় তার সঙ্গে। সে জানায়, এর আগে তিন বছর মোটরসাইকেলের হেলমেটের দোকানে কাজ করেছে। পড়াশোনা করেছে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। তার বাবা মাহবুব ইসলাম ঢাকায় কাজ করেন। তবে সংসারের খরচ দেন না। মা আরিফা খাতুন বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে ঘর দিয়েছেন। প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়। মা একা কাজ করে সংসারের খরচ বহন করতে পারতেন না। তাই বাধ্য হয়ে তাকে কাজে লাগিয়ে দেন। এভাবেই চলছিল তাদের ছোট সংসার। তবে চার মাস আগে তাঁর মা ফুসফুসে সমস্যার কারণে মারা যান। এখন তার খালা তাকে দেখভাল করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন আবাসিক হলের ডাইনিং, ক্যানটিন, ভ্রাম্যমাণ খাবার, চা ও জুসের দোকানে কাজ করে অর্ধশতাধিক শিশু। তাদের অধিকাংশের বয়স ১২ বছরের কম। তারা কেউ-ই এখন লেখাপড়া করে না। পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার কারণে বাধ্য হয়ে কাজ করছে তারা।

 

‘অন্ধকার জগতে’ জড়ানোর নজির

ক্যাম্পাসে থাকা শিশুরা যে শুধু শিশুশ্রমের শিকার হচ্ছে, তা নয়। অনেকে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের কয়েকটি দোকানে চুরির ঘটনায় তিন শিশুকে পুলিশে দেন দোকানিরা। এ সময় তাদের কাছে মাদকও পাওয়া যায়।

ক্যাম্পাসে যেসব শিশু কাজ করে, তাদের অনেককে লুকিয়ে ধূমপানও করতে দেখা যায়। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা ও শিক্ষার আলো থেকে দূরে থাকায় ‘অন্ধকার জগতে’ জড়িয়ে পড়ছে তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘নবজাগরণ ফাউন্ডেশন’, ‘ইচ্ছে’ ও ‘শিশু নিকেতন’ নামের সংগঠন ক্যাম্পাসের আশপাশে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করে।

ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কাজ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহির আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের দোকানগুলোতে নির্বিঘ্নে শিশুশ্রম হচ্ছে, এটা বিশ্ববিদ্যালয়–সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের জন্যই লজ্জাকর। একইভাবে শিশুশ্রম রাষ্ট্রের জন্যও অপমানজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচিত এমন বেআইনি শিশুশ্রম রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। যাতে কোনো দোকানি শিশুদের কাজে নিতে না পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ