বাংলাদেশ সফরে আসছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। আগামী এপ্রিল মাসে তার ঢাকা সফরের কথা রয়েছে। সফরের প্রস্তুতি হিসেবে বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিষয়ক অতিরিক্ত পররাষ্ট্রসচিব ইমরান আহমেদ সিদ্দিকি। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র, সংস্কৃতি, বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি।

ইমরান আহমেদ সিদ্দিকির ঢাকা সফর নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, এক যুগ ধরে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের কোনো বৈঠক হয়নি। সর্বশেষ ২০১২ সালে পাকিস্তানের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার ঢাকা সফর করেছিলেন। ফলে এ দীর্ঘ সময় সম্পর্কের কোনো কিছু নিয়েই আলোচনা হয়নি। আগামী মাসে ঢাকা সফরে আসবেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ফলে তার সফরের আগে সম্পর্কের কোন কোন বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দিয়ে দুই দেশ এগিয়ে নেবে, তা নিয়ে আলোচনা করতে দেশটির এশিয়া ও প্যাসিফিক বিষয়ক অতিরিক্ত পররাষ্ট্রসচিব ঢাকা সফর করছেন। তিনি বাংলাদেশে পাকিস্তানের সদ্য সাবেক হাইকমিশনার।

এদিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশন জানায়, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো শক্তিশালি ও পর্যালোচনা করতে ঢাকায় সরকারের একাধিক জেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এশিয়া ও প্যাসিফিক বিষয়ক অতিরিক্ত পররাষ্ট্রসচিব ইমরান আহমেদ সিদ্দিকি। বৈঠকগুলোতে বৈদেশিক সম্পর্ক, বাণিজ্য, সংস্কৃতি, ভিসা এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগসহ অন্যান্য বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

পররাষ্ট্রসচিব মো.

জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্কের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। দুই দেশের সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বৈঠকে দুই পক্ষই সম্পর্কের ইতিবাচক অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং সহযোগিতা আরও বৃদ্ধিতে একমত হয়েছেন। এছাড়া পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন বাংলাদেশ সফর নিয়েও আলোচনা করেন।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রজমানের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন ইমরান আহমেদ। দুই দেশের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যকে স্বীকৃতি দিয়ে সামনের দিকে আরও এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রগুলো খতিয়ে দেখার বিষয়ে আলোচনা করেন।

সংস্কৃতি সচিবের সঙ্গে সাক্ষাত করে দ্বিপক্ষীয় সংস্কৃতি বিষয়ক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো খতিয়ে দেখেন ইমরান আহমেদ সিদ্দিকি। এর মধ্যে সংগীত, সিনেমা, নাটক, দুই দেশের তরুণদের মধ্যে সংযোগ এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগ নিয়ে আলোচনা করেছেন। উভয়ই দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদারে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব নাসিমুল গনির সঙ্গে বৈঠকে উভয়পক্ষই দ্বিপক্ষীয় ভ্রমণ সহজ করার বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইমর ন আহম দ স দ দ ক পরর ষ ট রমন ত র পরর ষ ট রসচ ব ও পরর ষ ট র সহয গ ত কর ছ ন ব ষয়ক

এছাড়াও পড়ুন:

বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।  

ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে

আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।

এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে  চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।

ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন

সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।

বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’

এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।

ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।

আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫

ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।

‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।

বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’

আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ