রাষ্ট্র কাঠামোর নানা পরতে বিদ্যমান ফ্যাসিবাদের ছায়া
Published: 7th, March 2025 GMT
গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটলেও রাষ্ট্র কাঠামোর নানা পরতে ফ্যাসিবাদের ছায়া বিদ্যমান বলে মনে করেন বিশিষ্টজন। তারা বলেছেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার যেসব নিবর্তনমূলক আইনের মাধ্যমে জনগণের ওপর শোষণ-পীড়নের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করেছিল, সেসব আইন এখনও বলবৎ রয়েছে।
শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো ১১৯ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা ছিল মানুষের স্বাধীনতা খর্বকারী ও পীড়নমূলক সব আইন বিলোপের মধ্য দিয়ে মর্যাদা সংহত করা। কিন্তু ঘটছে উল্টো। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সাইবার নিরাপত্তা আইনের নামে প্রতিস্থাপিত করে ফ্যাসিবাদী জমানার পীড়ন ব্যবস্থা অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে। যার মধ্য দিয়ে সামাজিক ফ্যাসিবাদের বিকাশের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। বিদ্যমান এসব আইনের সুযোগ নিয়ে মুক্তিকামী নাগরিকদের ওপর আইনি পীড়ন এবং গোষ্ঠীবদ্ধ উষ্মার সুযোগ পাচ্ছে বিভিন্ন কায়েমি গোষ্ঠী ও ব্যক্তি।
এতে বলা হয়, সম্প্রতি লেখক-সংগঠক রাখাল রাহা ও নাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’-এর অভিযোগে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। কবি সোহেল হাসান গালিব একই আইনে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খাটছেন। গোষ্ঠীবদ্ধ উষ্মা উৎপাদনের মধ্য দিয়ে তাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলা হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক সমাজে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। রাখাল রাহা ও নাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের পাশাপাশি নিবর্তনমূলক আইনকে সম্পূর্ণ বিলোপের দাবি জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
বিশিষ্ট নাগরিকরা মনে করেন, ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহিষ্ণুতার সংস্কৃতিকে জলাঞ্জলি দিয়ে কোনোভাবেই দেশে স্থিতিশীল রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কায়েম হতে পারে না। আর রাষ্ট্রও এমন কোনো আইন জারি রাখতে পারে না, যা ভিন্নমত দমনে ব্যবহৃত হয়, অসহিষ্ণুতাকে উৎসাহিত করে।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন আনু মুহাম্মদ, সংগীতশিল্পী কফিল আহমেদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত কাইয়ুম, আইনজীবী সারা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুমন সাজ্জাদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ আল মামুন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর রাজী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত প্রমুখ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
যে ১০ কারণে স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে বেশি ঝগড়া হয়
একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েই বিয়ে করেন দুজন ব্যক্তি; কিন্তু একসঙ্গে থাকতে শুরু করার পর সবচেয়ে আপন এই মানুষের সঙ্গেও নানা কারণে তৈরি হয় মতবিরোধ। এক কথা, দুই কথায় বাধে ঝগড়া। বয়োজ্যেষ্ঠদের মতে, স্বামী–স্ত্রীর ঝগড়া আসলে এক জায়গায় রাখা দুটি বাসনের ঠোকাঠুকির মতো। এগুলো জীবনেরই অংশ; কিন্তু এই ঠোকাঠুকি বাড়তে দিলেই বিপত্তি। তাই দাম্পত্য জীবনে ঝগড়া কমিয়ে আনতে চাইলে প্রথমে মতবিরোধের কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। বিশ্বজুড়ে কী কারণে দাম্পত্যে ঝগড়া হয় বেশি, চলুন আগে সেটিই জেনে নেওয়া যাক।
১. বোঝাপড়ার অভাবনাবিলা ও রাফি (ছদ্মনাম) দুজনেই চাকরিজীবী। কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরে ক্লান্ত নাবিলা আশা করেন, স্বামী তাঁর কাছে জানতে চাইবেন সারা দিন কেমন কাটল। কিন্তু তা না করে চুপচাপ নিজের মনে ফোন স্ক্রল করেন রাফি।
স্বামীর এমন আচরণে কষ্ট পান নাবিলা। অন্যদিকে রাফি ভাবেন, সারা দিন কাজের পর স্ত্রীর হয়তো কথা বলতে ইচ্ছা করছে না, ও একটু নিজের মতো থাকুক। দুজনের চাওয়া ভিন্ন। এভাবে নিজের প্রত্যাশার কথা না জানিয়ে দিনের পর দিন কাটাতে থাকলে মনের ভেতর ক্ষোভ জমা হতে থাকে।
আবার বাসার বাড়তি বিল নিয়ে রাফি যখন চিন্তিত, সেটিকে পাত্তা না দিয়ে হেসে উড়িয়ে দিলেন নাবিলা। এভাবে অপর পক্ষকে কষ্ট দিতে না চেয়েও কষ্ট দিচ্ছেন তাঁরা। দাম্পত্য কলহ নিয়ে ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে গবেষণা করা মার্কিন মনোবিজ্ঞানী জন গটম্যান জানান, ৬৯ শতাংশ বৈবাহিক দ্বন্দ্বের কারণ পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব।
আরও পড়ুনধনীদের ৮টি অভ্যাস, যা মধ্যবিত্তদের চোখে ধরা পড়ে না১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫২. অর্থনৈতিক হিসাবএকজন বাইরে খেতে ভালোবাসেন, অন্যজন সঞ্চয়ে বিশ্বাসী। আর এতেই বাধে বিপত্তি। এ ছাড়া দুজনেই আয় করলে কে কোন খাতে ব্যয় করবেন, তা নিয়েও ঝগড়া করেন দম্পতিরা। দীর্ঘদিন ধরে দাম্পত্য বিচ্ছেদ নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম।
অভিজ্ঞতার আলোকে এই আইনজীবী বলেন, ‘কেউ নিজের শখ পূরণ করতে গিয়ে অন্যের দিকটা ভাবছেন না, কেউ আবার নিজের ইচ্ছা–অনিচ্ছায় ক্রমাগত ছাড় দিয়েই যাচ্ছেন। সংসারে বারবার একপক্ষীয় অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে যিনি ছাড় দিচ্ছেন, তাঁর মনে অসন্তুষ্টি তৈরি হয়, যা একসময় বড় ঝগড়ায় রূপ নেয়।’
এ ছাড়া ছোটখাটো অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে গিয়েও ঝগড়া করেন দম্পতিরা। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণা বলছে, টাকাপয়সা নিয়ে ঝগড়া করা দম্পতিদের ৩০ শতাংশই সম্পর্কে খুশি থাকেন না।
৩. সময় না দেওয়াসঙ্গীকে সময় না দিলে দ্বন্দ্ব বাড়ে