পবিত্র কোরআনে আছে, ‘তাদের তুলনা সেই শয়তান, যে মানুষকে বলে—অবিশ্বাস করো। তারপর যখন সে অবিশ্বাস করে, তখন শয়তান বলে—তোমার সঙ্গে তো আমার কোনো সম্পর্ক নেই, আমি তো বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি।’ (সুরা হাশর, আয়াত: ১৬)
এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে হজরত জারির আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, বনী ইসরাইলের এক নারী বকরি চরাত। তার ছিল চার ভাই। রাতের বেলা সে ধর্মযাজকের উপাসনালয়ে এসে আশ্রয় নিত। একদিন এক যাজক এসে তার সঙ্গে সংসর্গ করে। এতে সেই নারী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। শয়তান এসে প্ররোচনা দিয়ে বলে, ‘ওই নারীকে খুন করে মাটিচাপা দাও। লোকে তো তোমাকে বিশ্বাস করে। তারা তোমার কথা শুনবে।’ শয়তানের প্ররোচনায় সে নারীকে খুন করে এবং মাটিচাপা দিল। এবার শয়তান স্বপ্নে নারীর ভাইদের কাছে উপস্থিত হয়। তাদেরকে বলে, উপাসনালয়ের যাজক তোমাদের বোনের সঙ্গে অন্যায় করেছে এবং সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ায় তাকে খুন করে অমুক স্থানে মাটিচাপা দিয়েছে।
আরও পড়ুনআবু মুসা (রা.) ছিলেন জ্ঞানী সাহাবি২২ মে ২০২৪
সকাল হলে ভাইদের একজন বলল, ‘আল্লাহর কসম! গত রাতে আমি এক আশ্চর্যজনক স্বপ্ন দেখি, সেটি তোমাদের বলব কি বলব না তা স্থির করতে পারছি না।’ অন্য ভাই বলল, ‘তুমি বরং ওই স্বপ্নের কথা আমাদের বলো।’ সে তা বর্ণনা করল। আরেক ভাই বলল, ‘আমিও স্বপ্নে তা–ই দেখেছি।’ তৃতীয়জন বলল, ‘আমিও তা–ই দেখেছি।’ তখন তারা বলাবলি করে, নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোনো রহস্য আছে।
তারা সবাই তাদের শাসনকর্তাকে যাজকের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে উদ্বুদ্ধ করে। তারপর সবাই যাজকের কাছে যায়। তাকে উপাসনালয় থেকে নামিয়ে আনে। এ সময় শয়তান যাজকের কাছে উপস্থিত হয়ে বলে, ‘আমি তোমাকে এ বিপদে ফেলেছি। আমি ছাড়া কেউ তোমাকে এখান থেকে উদ্ধার করতে পারবে না। সুতরাং তুমি আমাকে একটি সিজদা করো; আমি তোমাকে যে বিপদে ফেলেছি তা থেকে উদ্ধার করব।’ তারপর যাজক তাকে সিজদা করল।
তারপর শাস্তি বিধানের জন্য যখন শাসনকর্তার কাছে তাকে নিয়ে গেল। তখন শয়তান ওই জায়গা থেকে সরে পড়ল এই বলে, ‘তোমার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি তো জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি।’ আর তাদের পরিণতি সম্পর্কে সুরা হাশরের ১৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘শেষে অবিশ্বাসী ও মুনাফিক উভয়ের পরিণাম হবে জাহান্নাম। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, আর এটাই সীমালঙ্ঘনকারীদের কর্মফল।’ (আল–বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খণ্ড ২)
আরও পড়ুনযে কারণে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়া হয়২৫ মার্চ ২০২৪উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্বামী-সন্তানের সঙ্গে বান্দরবানে বেড়াতে যাচ্ছিলেন, মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে বাসের চাকায় মৃত্যু নারীর
চট্টগ্রামের পটিয়ায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ার পর বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নারীর নাম ফজিলাতুন নেসা (২৮)। তিনি মাগুরা জেলার মহম্মদপুর থানার মহেশপুর গ্রামের আলিমুজ্জামান সুজনের স্ত্রী।
পুলিশ জানায়, স্বামীর সঙ্গে মোটরসাইকেলে গতকাল রোববার চট্টগ্রামে বেড়াতে আসেন ফজিলাতুন নেসা। তাঁদের ছয় বছর বয়সী সন্তানও সঙ্গে ছিল। গতকাল চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটের একটি বাসায় তাঁরা রাত্রিযাপন করেন। সকালে সেখান থেকে মোটরসাইকেলে করে তাঁরা বান্দরবানের উদ্দেশে রওনা দেন। আলিমুজ্জামান মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন এবং তাঁর পেছনে ছয় বছর বয়সী সন্তান হুমায়ের হাম্মাদ, এরপর ফজিলাতুন নেসা বসে ছিলেন।
সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ার নয়াহাট এলাকায় পৌঁছায় মোটরসাইকেলটি। সেখানে সামনে থাকা একটি লেগুনা হঠাৎ সড়কে থেমে গেলে তাৎক্ষণিক মোটরসাইকেলটির ব্রেক কষেন আলিমুজ্জামান। এ সময় ফজিলাতুননেসা মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়েন। এর পরপরই পেছন থেকে একটি যাত্রীবাহী বাস ফজিলাতুন নেসাকে পিষ্ট করে। তাঁকে উদ্ধার করে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
গতকাল রাতে চট্টগ্রাম নগরের যে বাসাটিতে ফজিলাতুন নেসা ছিলেন, সেটি তাঁর স্বামী আলিমুজ্জামানের বন্ধু রবিউল ইসলামের। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রবিউল ইসলামের বোন আশরিফা আহমদ ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ফজিলাতুন নেসার স্বামী নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির কনিষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক। পরিবার নিয়ে পাহাড় দেখতে বান্দরবানে বেড়াতে যাচ্ছিলেন তিনি। বেড়াতে যাওয়ার পথেই স্বামী-সন্তানের সামনে দুর্ঘটনায় তাঁর প্রাণহানি হয়েছে।
পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট ওয়াসিম আরাফাত দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নিহত নারীর লাশ আইনি–প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। লেগুনা ও বাসের চালককে আটক করা সম্ভব হয়নি।