যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছিলেন। নিজের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ধনকুবের ইলন মাস্ককে নিয়ে আলোচনা এবং মার্কিন ফেডারেল সরকারের আকার তথা খরচ ও জনবল কমাতে তাঁর নেওয়া প্রচেষ্টা ছিল বৈঠকের আলোচ্য বিষয়।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈঠক হয়ে উঠেছিল উত্তপ্ত।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের খবর, ইলন মাস্ক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর বিরুদ্ধে তাঁর দায়িত্বে থাকা মন্ত্রণালয় থেকে যথেষ্ট সংখ্যক কর্মী ছাঁটাই করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ তোলেন।

পত্রিকাটির তথ্য অনুযায়ী, এই প্রযুক্তিসম্রাট বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও ‘টেলিভিশনেই ভালো’। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিক হিসেবে তাঁর কাজের কোনো প্রশংসা করার বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।

আরও পড়ুনট্রাম্প-মাস্কের তৈরি অস্থিরতা শাপে বর হতে পারে২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পত্রিকাটির আরও তথ্য, মাস্কের ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডিওজিই) ইতিমধ্যে জনবল–সংকটে থাকা ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে বিমান পরিবহন নিয়ন্ত্রকদের ছাঁটাইয়ের চেষ্টা চালিয়েছে কি না, তা নিয়ে পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফির সঙ্গে এ বিলিয়নিয়ারের মতবিরোধ দেখা দেয়।

গণমাধ্যমের খবর অনুসারে, বৈঠকে উত্তপ্ত আলোচনার একপর্যায়ে এতে হস্তক্ষেপ করে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি এখনো ডিওজিইকে সমর্থন করেন। কিন্তু এখন থেকে ফেডারেল সরকারের আকার কমানোর দায়িত্ব পালন করবেন মন্ত্রীরা এবং এ বিষয়ে মাস্কের দল শুধু পরামর্শ দেবে।

ট্রাম্প গত জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশটিতে দুটি বিমান সংস্থার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এসব ঘটনায় ডাফির বিভাগ ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছে।

গণমাধ্যমের খবর অনুসারে, উত্তপ্ত আলোচনার একপর্যায়ে এতে হস্তক্ষেপ করে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি এখনো ডিওজিইকে সমর্থন করেন। কিন্তু এখন থেকে ফেডারেল সরকারের আকার কমানোর দায়িত্ব পালন করবেন মন্ত্রীরা এবং এ বিষয়ে মাস্কের দল শুধু পরামর্শ দেবে।

আরও পড়ুনইলন মাস্ক যেভাবে বিশ্বের ১ নম্বর সমস্যা হয়ে উঠলেন০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও মনে করেন, বৈঠকে ‘খোলামেলা ও ফলপ্রসূ’ আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে বিবিসি আরও মন্তব্য করার অনুরোধ জানালে হোয়াইট হাউস সাড়া দেয়নি।

তড়িঘড়ি পরিকল্পিত এ বৈঠক থেকে এ প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পেসএক্স ও টেসলার সিইও মাস্কের নিরঙ্কুশ ক্ষমতায় লাগাম টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর বিভাগ ডিওজিই ট্রাম্প প্রশাসনের কয়েক সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় সরকারের খরচ কমানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে ভীতির সঞ্চার হয়েছে।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন ইলন মাস্ক.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যয় বাড়ল ১৪৪ কোটি টাকা

‘খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ’ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয় ২০১১ সালে। ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। এর পর আটবার প্রকল্পের সময় বেড়েছে, দুই দফা সংশোধনের পর ব্যয় বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। এ অবস্থায় প্রকল্পটি শেষ হওয়া নিয়ে হতাশা দেখা দেয়। 
আশার কথা, নতুন জেলা কারাগারের কাজ শেষ হয়েছে। গত ২৫ মে গণপূর্ত বিভাগের কাছ থেকে নতুন কারাগারটি বুঝে নেওয়ার কথা ছিল কারা কর্তৃপক্ষের। কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় হস্তান্তর হয়নি। চলতি জুন মাসে যে কোনো সময় নতুন কারাগার হস্তান্তরের কথা রয়েছে। জনবল পদায়ন হলেই নতুন কারাগারে বন্দি স্থানান্তর শুরু হবে।
১৯১২ সালে নগরীর ভৈরব নদীতীরে নির্মাণ করা হয় খুলনার প্রথম কারাগার। সেখানে বন্দি ধারণক্ষমতা ৬৭৮ জনের। রয়েছেন ১ হাজার ৪শর বেশি বন্দি। ১১৩ বছরের পুরোনো জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হয় তাদের। এসব বিবেচনায় নিয়েই নতুন কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
খুলনার সিটি (রূপসা সেতু) বাইপাস সড়কের জয় বাংলা মোড়ের অদূরে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর নতুন কারাগার নির্মাণ হচ্ছে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নতুন কারাগারে ৪ হাজার বন্দি থাকতে পারবেন। প্রকল্পের আওতায় আপাতত ২ হাজার বন্দি রাখার অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। পরে প্রয়োজন পড়লে পৃথক প্রকল্প নিয়ে অন্য অবকাঠামো নির্মাণ হবে।
নতুন কারাগার হবে সংশোধনাগার
কারাগার ঘুরে দেখা গেছে, ভেতরে সাজানো-গোছানো অভিজাত আবাসিক এলাকার মতো পরিবেশ। রং দেওয়া নতুন ভবন, পথের ধারে 
ফুল, দামি পার্কিং টাইলস দেওয়া ফুটপাত ধরে হাঁটলে এটি কারাগারই মনে হয় না। নতুন এ কারাগার নির্মাণ হচ্ছে সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের পৃথক স্থানে রাখা হবে। কিশোর ও কিশোরী বন্দিদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যারাক। নারীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্কশেড আছে। একইভাবে বন্দিদের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকবে। 
আরও থাকবে কারারক্ষীদের সন্তানদের জন্য স্কুল, বিশাল লাইব্রেরি, ডাইনিং রুম, আধুনিক স্যালুন ও লন্ড্রি। কারাগারে শিশুসন্তানসহ নারী বন্দিদের জন্য থাকবে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার। এ ওয়ার্ডটিতে সাধারণ নারী বন্দি থাকতে পারবেন না। সেখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও সংস্কৃতি চর্চার ব্যবস্থা থাকবে। কারাগারে পুরুষ ও নারী বন্দিদের হস্তশিল্পের কাজের জন্য আলাদা আলাদা ওয়ার্কশেড, বিনোদন কেন্দ্র ও নামাজের ঘর রয়েছে। মোট ৫২টি স্থাপনা রয়েছে এ কারাগারে। 
গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম জানান, বন্দিদের প্রতিটি ব্যারাকের চারপাশে পৃথক সীমানাপ্রাচীর রয়েছে। এক শ্রেণির বন্দিদের অন্য শ্রেণির বন্দিদের সঙ্গে মেশার 
সুযোগ নেই। কারাগারের ভেতরে শুধু সীমানাপ্রাচীরই রয়েছে প্রায় ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের। ভেতরে ড্রেন, ফুটপাত, নিজস্ব পয়োবর্জ্য শোধন কেন্দ্র, ওয়াকওয়ে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা, দুটি পুকুর ও সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সবকিছুর কাজ শেষ।
সময় বেড়েছে আটবার, ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ
২০১১ সালের অনুমোদিত খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১৪৪ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ৬ জুন প্রকল্পটি প্রথম দফা সংশোধন করা হয়। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৫১ কোটি টাকা। নতুন লক্ষ্য নেওয়া হয় ২০১৯ সালের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার। এর পর পাঁচ দফায় পাঁচ বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কাজ আর শেষ হয়নি। ২০২৩ সালের মে মাসে দ্বিতীয় দফায় প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৮ কোটি টাকায়।
হস্তান্তর ও চালু কবে
খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নতুন কারাগারের সব কাজ শেষ। কয়েকটি স্থাপনায় রঙের শেষ প্রলেপসহ টুকটাক কাজ বাকি রয়েছে। আগে করলে এসব নষ্ট হয়ে যাবে। এ কারণে হস্তান্তর তারিখ নির্ধারণ হলেই এসব কাজ করা হবে। 
খুলনার জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, কিছু কাজ বাকি ছিল, সেগুলো শেষ করতে বলা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে চলতি জুন মাসেই আমরা কারাগার বুঝে নেব। তিনি আরও বলেন, কারাগার পরিচালনার জন্য ৬০০ জনবলের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পুরোনো কারাগারে প্রায় ২০০ জনবল রয়েছে। স্থাপনা বুঝে নেওয়ার পর কারাগার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্যয় বাড়ল ১৪৪ কোটি টাকা