আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তাৎপর্য বহুমাত্রিক
Published: 9th, March 2025 GMT
নারী দিবস এলে আমরা নারীদের অধিকার আদায়ের কথা বলি, নারীদের প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করি। কিন্তু শুধু নারীদের প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করলেই হবে না, এই দিনটি মনে করিয়ে দেয় নারীদের অধিকার রক্ষা, সমান সুযোগ তৈরি, লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, নারীদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্য অর্জনের কথা। এবারের প্রতিপাদ্য হলো-‘অধিকার, সমতা ,ক্ষমতায়ন- সকল নারী ও কন্যার উন্নয়ন।’ এ নিয়ে যদি বলতে হয় তাহলে পুরো সমাজের কাছে ছোট ছোট কয়েকটা প্রশ্ন, কিন্তু অর্থপূর্ণ প্রশ্ন আমি ছুঁড়ে দিতে চাই। আমরা এখনো কেন লড়াই করেই যাচ্ছি? এখনো শত শত মেয়েরা শ্বশুরবাড়িতে যৌতুকের জন্য নির্যাতিত। কেন? এখনো কেন পাবলিক প্লেসে নারীর হেনস্থার শিকার হতে হয়? এখনো নারী কেন আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগে?
আমার এ প্রশ্নগুলোর বাইরেও হাজার হাজার প্রশ্ন নিয়ে আজও আমাদের নারীসমাজ যুদ্ধ করছে। এই যুদ্ধের অবসান এখন সময়ের দাবি। অথচ নারী কোন একক পরিচয়ে সীমাবদ্ধ নন-তিনি একাধারে মা, মেয়ে, স্ত্রী, বোন, কর্মী, নেতা, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, ইঞ্জিনিয়ার, খেলোয়াড়, স্বপ্নদ্রষ্টা ও সমাজ পরিবর্তনের অগ্রদূত। শিক্ষা, বিজ্ঞান, চিকিৎসা, রাজনীতি, ব্যবসা, ক্রীড়া সবক্ষেত্রে নারীরা সফলতার গল্প লিখেছেন। বেগম রোকেয়া থেকে মালালা ইউসুফজাই, মেরি কুরি থেকে কাল্পনা চাওলা। তারা প্রমাণ করেছেন যে, নারী এগিয়ে গেলে সমাজও এগিয়ে যায়।
বিশ্বখ্যাত লেখিকা মায়া এঞ্জেলু বলেছেন-“প্রতিবার একজন নারী যখন নিজের জন্য দাঁড়ায়, তখন তিনি সকল নারীর জন্যেও দাঁড়ায়।’’
জানা যায়, ১৯০৮ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্ক শহরের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন প্রায় ১৫ হাজার নারী শ্রমিক। তারা কর্মঘণ্টা কমানো, বেতন বাড়ানো ও ভোটাধিকার দাবি করেন। ওই আন্দোলন নারীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার একটি বড় নজির তৈরি করে। এই শ্রম আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ পথপরিক্রমায় চালু হয় ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’।কিন্তু দুঃখের বিষয় হল এখনো অনেক নারী বৈষম্যের, নির্যাতনের, বেতন বৈষম্য, সুযোগ ও নিরাপত্তাহীনতার শিকার।
তারপরেও এই অধিকার আদায়ের লড়াই থামানো যাবে না। আমরা নারীরা শত বাধার দেয়াল ভাঙবো। কারণ নারী হলো শক্তি, নারী হলো আগামী দিনের স্বপ্নদ্রষ্টা। নারী যখন নিজের শক্তি বুঝতে পারে, তখন সে পুরো বিশ্ব বদলে দিতে পারে। আমরা আগামীর পথ আলোকিত করে নারী-পুরুষ সকলেই হাঁটবো। দেশ ও জাতিকে উন্নত করব।
কবি জীবনানন্দ দাসের সাথে কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই- ‘আমার ভিতরে রক্তের স্রোত আছে/আমার চোখে অগ্নিশিখা/আমি থামবো না/ আমি হারবো না’’
লেখক: মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও সহকারি অধ্যাপক
সাইকিয়াট্রি বিভাগ, ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
স্বামী-সন্তানের সঙ্গে বান্দরবানে বেড়াতে যাচ্ছিলেন, মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে বাসের চাকায় মৃত্যু নারীর
চট্টগ্রামের পটিয়ায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ার পর বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নারীর নাম ফজিলাতুন নেসা (২৮)। তিনি মাগুরা জেলার মহম্মদপুর থানার মহেশপুর গ্রামের আলিমুজ্জামান সুজনের স্ত্রী।
পুলিশ জানায়, স্বামীর সঙ্গে মোটরসাইকেলে গতকাল রোববার চট্টগ্রামে বেড়াতে আসেন ফজিলাতুন নেসা। তাঁদের ছয় বছর বয়সী সন্তানও সঙ্গে ছিল। গতকাল চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটের একটি বাসায় তাঁরা রাত্রিযাপন করেন। সকালে সেখান থেকে মোটরসাইকেলে করে তাঁরা বান্দরবানের উদ্দেশে রওনা দেন। আলিমুজ্জামান মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন এবং তাঁর পেছনে ছয় বছর বয়সী সন্তান হুমায়ের হাম্মাদ, এরপর ফজিলাতুন নেসা বসে ছিলেন।
সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ার নয়াহাট এলাকায় পৌঁছায় মোটরসাইকেলটি। সেখানে সামনে থাকা একটি লেগুনা হঠাৎ সড়কে থেমে গেলে তাৎক্ষণিক মোটরসাইকেলটির ব্রেক কষেন আলিমুজ্জামান। এ সময় ফজিলাতুননেসা মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়েন। এর পরপরই পেছন থেকে একটি যাত্রীবাহী বাস ফজিলাতুন নেসাকে পিষ্ট করে। তাঁকে উদ্ধার করে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
গতকাল রাতে চট্টগ্রাম নগরের যে বাসাটিতে ফজিলাতুন নেসা ছিলেন, সেটি তাঁর স্বামী আলিমুজ্জামানের বন্ধু রবিউল ইসলামের। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রবিউল ইসলামের বোন আশরিফা আহমদ ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ফজিলাতুন নেসার স্বামী নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির কনিষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক। পরিবার নিয়ে পাহাড় দেখতে বান্দরবানে বেড়াতে যাচ্ছিলেন তিনি। বেড়াতে যাওয়ার পথেই স্বামী-সন্তানের সামনে দুর্ঘটনায় তাঁর প্রাণহানি হয়েছে।
পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট ওয়াসিম আরাফাত দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নিহত নারীর লাশ আইনি–প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। লেগুনা ও বাসের চালককে আটক করা সম্ভব হয়নি।