মৌলভীবাজার শহরে নতুন অতিথি ‘রুদ্রপলাশ’
Published: 9th, March 2025 GMT
পুকুরের চার পাড়েই দাঁড়িয়ে আছে বিভিন্ন উচ্চতার নানা ধরনের গাছ। এসব গাছ পুকুরকে ঘিরে এক আরণ্যক মায়া তৈরি করেছে। সূর্য এদিক-ওদিক হেলে পড়লে গাছের ছায়া পড়ছে পুকুরের শান্ত জলে। নারকেল ছাড়া অন্য যত ছোট-মাঝারি আকারের গাছ আছে, তার প্রায় সব কটিই ফুলের গাছ। বিক্ষিপ্তভাবে কিছু গাছে ফুল ফুটছে।
এসব গাছ বেড়ে উঠেছে মৌলভীবাজার পৌরসভা কার্যালয় প্রাঙ্গণের পুকুরপাড়ে। শহরকে ফুলে ফুলে সাজিয়ে তোলা, রাঙিয়ে তোলার অংশ হিসেবে পৌর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে এসব গাছ লাগানো হয়েছে। এখন বসন্তকাল। গাছে গাছে ফাল্গুনের হওয়া, ফাল্গুন প্রকৃতি। শাখা-প্রশাখায় নতুন ফুল ও পাতা এসেছে। এ রকম বসন্ত প্রকৃতিতে পুকুরপাড়ে গাছের ভিড়ে অগ্নিশিখার মতো ফুটেছে ‘রুদ্রপলাশ’। রুদ্রপলাশ এই শহরে নতুন অতিথি। পৌর প্রাঙ্গণের সড়ক দিয়ে আসা-যাওয়ার পথে এখন দেখা মিলছে এ ফুলের।
এ অঞ্চলে পলাশ ফুলেরই খুব একটা দেখা পাওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে রুদ্রপলাশ আরও দুর্লভ একটি গাছ। অন্য সব ফুলের সঙ্গে মৌলভীবাজার পৌরসভার পুকুরপাড়ে এ রুদ্রপলাশের গাছ লাগানো হয়েছে বছর তিন-চার আগে। এর আগে চোখের আড়ালে দু-একটি ফুল ফুটলেও এবারই প্রথম রুদ্রপলাশ অনেকটা আপন চেহারা নিয়ে প্রকাশ পেয়েছে। মৌলভীবাজারের কানাডাপ্রবাসী ফুলপ্রেমিক নুরুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, গত বছর এই একই গাছে একটি ফুল ফুটতে তিনি দেখেছিলেন।
মৌলভীবাজার পৌরসভার পুকুরের দক্ষিণ পাড়ের পূর্ব দিকে রুদ্রপলাশের গাছে বেশ কিছু ফুল ফুটেছে। কিছুদিন আগে এই ফুল ফোটা শুরু হয়েছে। গাছটির একেবারের চূড়ার দিকের একটি ডালে একটিমাত্র ফুল ফুটতে দেখা গেছে। ধীরে ধীরে ফুলটি পাপড়ি মেলে অগ্নিশিখার মতো লাল থোকা হয়ে এখন জ্বলে উঠেছে। এরপর পর্যায়ক্রমে কয়েকটি ডালে আরও কয়েকটি রুদ্রপলাশের ফুল ফুটেছে। গাছের চূড়ার ডালে ডালে, সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফুলগুলো জ্বলজ্বল করছে।
গতকাল শনিবার সকালে দেখা গেছে, রোদে ফুলগুলো জ্বলন্ত মশালের শিখার মতো লাগছে। দূর থেকে হঠাৎ মনে হয়, সবুজের ভেতর বিক্ষিপ্ত কিছু অগ্নিশিখা অবিরাম জ্বলছে। বেশকিছু নতুন কুঁড়িও দেখা গেছে কয়েকটি ডালে। এরাও যেকোনো মুহূর্তে ফুটবে। রুদ্রপলাশ পাখিদের একটি পছন্দের ফুল। একটি বুলবুলি সেই ফুলে এসে বসছে, এক ফুল থেকে আরেক ফুলে ছুটছে।
ফুলটির নাম রুদ্রপলাশ হলেও এটি পরিচিত পলাশ ফুল নয়.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।