চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় মাইকে ডাকাত পড়েছে প্রচারের পর গণপিটুনিতে দুই ব্যক্তি নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আজ রোববার নিহত আবু ছালেকের স্ত্রী সুরমি আক্তার বাদী হয়ে সাতকানিয়া থানায় মামলাটি করেন। মামলায় ৪৭ জনের নাম উল্লেখ ও ১০ থেকে ১৫ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় গণপিটুনিতে দুজন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন (৪৩) ও আবু ছালেক (৩৮)। তাঁরা জামায়াতের কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। একই ঘটনায় স্থানীয় এক দোকানিসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন।

মামলায় এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নজরুল ইসলাম ওরফে মানিককে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে। তাঁর নাম মামলার আসামিদের তালিকার ৫ নম্বরে রয়েছে। নজরুলের তিন ভাই মো.

হারুন, মো. মমতাজ ও মো. কামরুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে মো. হারুনকে মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে।

এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রমজান আলীকেও মামলার আসামি করা হয়েছে। তাঁর নাম আসামিদের তালিকার ২৩ নম্বরে রয়েছে। রমজান আলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হোসেন কবির ও সদস্য মোখলেছুর রহমানের নাম রয়েছে। আসামিদের তালিকায় হোসেন কবিরের নাম ২৪ নম্বরে ও মোখলেছুরের নাম ৩৭ নম্বরে রয়েছে। মামলায় নাম উল্লেখ করা আসামিদের মধ্যে এ ছাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা–কর্মী রয়েছেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আবু ছালেক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একজন সক্রিয় কর্মী এবং চব্বিশের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সম্মুখসারির যোদ্ধা ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের শাসনামলে মামলা–হামলা ও জুলুম–নির্যাতনের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আবু ছালেক বাড়িতে ফিরে আসেন।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ছনখোলায় আবদুল নুর নামের এক ব্যক্তির একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা কে বা কারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। আবদুল নুর এ ঘটনা আবু ছালেক ও তাঁর বন্ধু নেজাম উদ্দিনকে অবহিত করেন। পরে ২২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ছনখোলা এলাকায় আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিন অটোরিকশা পোড়ানোর বিষয়ে একটি সালিস বৈঠক করেন। ওই সালিস বৈঠকে আবদুল নুরের গাড়িতে কারা আগুন লাগিয়েছেন, তা শনাক্ত হয় এবং শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে সাত লাখ টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়।

এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আবদুল নুর ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্তের বিষয়ে সন্তুষ্ট হননি। মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন ৩ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সমাধানের কথা বলে আবু ছালেক ও তাঁর বন্ধু নেজাম উদ্দিনকে ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় ডেকে নিয়ে যান। এরপর সালিস বৈঠক চলাকালে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনকে মারধর শুরু করেন। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী ছনখোলা পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়েছে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনকে পিটিয়ে, কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর মামলার প্রধান আসামি মো. হারুন একটি পিস্তল নেজাম উদ্দিনের লাশের পাশে রেখে পালিয়ে যান।

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ছনখোলায় গণপিটুনিতে দুই ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনায় আজ থানায় একটি মামলা হয়েছে। নিহত আবু ছালেকের স্ত্রী সুরমি আক্তার বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন। মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল ন র উল ল খ আওয় ম উপজ ল ছনখ ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ