ছয় দিন পর আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের আসামি করে মামলা
Published: 9th, March 2025 GMT
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় মাইকে ডাকাত পড়েছে প্রচারের পর গণপিটুনিতে দুই ব্যক্তি নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আজ রোববার নিহত আবু ছালেকের স্ত্রী সুরমি আক্তার বাদী হয়ে সাতকানিয়া থানায় মামলাটি করেন। মামলায় ৪৭ জনের নাম উল্লেখ ও ১০ থেকে ১৫ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় গণপিটুনিতে দুজন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন (৪৩) ও আবু ছালেক (৩৮)। তাঁরা জামায়াতের কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। একই ঘটনায় স্থানীয় এক দোকানিসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন।
মামলায় এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নজরুল ইসলাম ওরফে মানিককে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে। তাঁর নাম মামলার আসামিদের তালিকার ৫ নম্বরে রয়েছে। নজরুলের তিন ভাই মো.
এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রমজান আলীকেও মামলার আসামি করা হয়েছে। তাঁর নাম আসামিদের তালিকার ২৩ নম্বরে রয়েছে। রমজান আলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হোসেন কবির ও সদস্য মোখলেছুর রহমানের নাম রয়েছে। আসামিদের তালিকায় হোসেন কবিরের নাম ২৪ নম্বরে ও মোখলেছুরের নাম ৩৭ নম্বরে রয়েছে। মামলায় নাম উল্লেখ করা আসামিদের মধ্যে এ ছাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা–কর্মী রয়েছেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আবু ছালেক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একজন সক্রিয় কর্মী এবং চব্বিশের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সম্মুখসারির যোদ্ধা ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের শাসনামলে মামলা–হামলা ও জুলুম–নির্যাতনের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আবু ছালেক বাড়িতে ফিরে আসেন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ছনখোলায় আবদুল নুর নামের এক ব্যক্তির একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা কে বা কারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। আবদুল নুর এ ঘটনা আবু ছালেক ও তাঁর বন্ধু নেজাম উদ্দিনকে অবহিত করেন। পরে ২২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ছনখোলা এলাকায় আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিন অটোরিকশা পোড়ানোর বিষয়ে একটি সালিস বৈঠক করেন। ওই সালিস বৈঠকে আবদুল নুরের গাড়িতে কারা আগুন লাগিয়েছেন, তা শনাক্ত হয় এবং শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে সাত লাখ টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আবদুল নুর ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্তের বিষয়ে সন্তুষ্ট হননি। মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন ৩ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সমাধানের কথা বলে আবু ছালেক ও তাঁর বন্ধু নেজাম উদ্দিনকে ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় ডেকে নিয়ে যান। এরপর সালিস বৈঠক চলাকালে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনকে মারধর শুরু করেন। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী ছনখোলা পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়েছে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনকে পিটিয়ে, কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর মামলার প্রধান আসামি মো. হারুন একটি পিস্তল নেজাম উদ্দিনের লাশের পাশে রেখে পালিয়ে যান।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ছনখোলায় গণপিটুনিতে দুই ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনায় আজ থানায় একটি মামলা হয়েছে। নিহত আবু ছালেকের স্ত্রী সুরমি আক্তার বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন। মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ ল ন র উল ল খ আওয় ম উপজ ল ছনখ ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
চলন্ত বাসে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ, চালক আটক
ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে এক কলেজছাত্রীকে চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। নবীগঞ্জ-শেরপুর সড়কে রোববার রাতে যাত্রীবাহী বাসে এ ঘটনা ঘটে। পরে ওই ছাত্রীর চিৎকার শুনে স্থানীয় জনতা সড়কের তিনতালাব পুকুর পাড় নামক স্থানে বাসটি আটক করে এবং বাসের ড্রাইভারকে আটক করে সেনাবাহিনীর নিকট হস্তান্তর করে। এসময় বাসের হেলপার পালিয়ে যায়।
পরে সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে একদল সেনা সদস্য ওই কলেজ ছাত্রী ও ড্রাইভারকে নবীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করে। এ বিষয়ে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
জানা যায়, ঢাকায় একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে ওই ছাত্রী। রোববার সকালে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে একটি বাসে উঠেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি যেতে বানিয়াচং যাওয়ার পথে শায়েস্থাগঞ্জ বাস স্ট্যান্ডে নামার কথা থাকলেও তিনি বাসের মধ্যে ঘুমিয়ে যান। ফলে বাস তাকে শায়েস্থাগঞ্জে না নামিয়ে শেরপুর বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে রাত সাড়ে ১০টায় ওই কলেজছাত্রী একটি লোকাল বাসে উঠে। সেই বাসে কয়েকজন যাত্রী ছিল, বাসটি নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি নামক স্থানে পৌঁছালে অন্যান্য যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। এরপর ওই ছাত্রীকে একা পেয়ে বাসের চালক ও হেলপার তাকে বাসে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
এ বিষয়ে ওই ছাত্রী জানায়, তিনি ঢাকায় একটি কলেজে লেখাপড়া করেন। তার পরিবারের সবাই ঢাকায় থাকে তিনি ঢাকায় ঈদ করেছে। ঈদের ছুটিতে তিনি বাড়ি আসেননি এই জন্য আজকে গ্রামের বাড়িতে আসছিলেন।
বানিয়াচং থানার সেনাক্যাম্পের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হারুনুর রশিদ বলেন, আমরা কলেজছাত্রী ও বাস চালককে নবীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করেছি।
এ বিষয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি দুলাল মিয়া জানান, ঘটনার পর বাস চালককে আটক করা হয়েছে এবং হেলপার পালিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে মামলা লেখার কাজ চলছে।