বরিশাল নগরের কাউনিয়া হাউজিং এলাকার আলোচিত যুবদল নেতা সুরুজ গাজী (৩৫) হত্যা মামলার প্রধান আসামি স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা শাহিন সরদারকে ওরফে সোনা শাহিনকে (৪২) ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার গভীর রাতে ঢাকার মাদারটেক কাঁচাবাজার এলাকায় যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করেন র‌্যাব–৩ ও ৮–এর সদস্যরা। আজ রোববার দুপুরে বরিশাল নগরের রূপাতলী এলাকায় র‌্যাব–৮–এর সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার শাহিন সরদার বরিশাল নগরের কাউনিয়ার গাউয়াসার এলাকার বাসিন্দা ও নগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক। আর নিহত সুরুজ গাজী একই ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।

র‌্যাব–৮–এর গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা অমিত হাসান বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শাহিন সরদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর আজ দুপুরে তাঁকে নগরের কাউনিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় এর আগে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। এবার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তিনি আরও বলেন, হত্যার শিকার সুরুজ ও প্রধান আসামি শাহীন একই রাজনৈতিক দলের অনুসারী। তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। এ ছাড়া আরও কোনো কারণ রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

জমি বিক্রি নিয়ে বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২ মার্চ রাত আটটার দিকে কাউনিয়া শের–ই–বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পেছনে শাহিন সরদার ও একই ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সুরুজ গাজীর মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। এর জেরে শাহীনের নেতৃত্বে কয়েকজন সুরুজকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। এ সময় তাঁকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলে একই ওয়ার্ড যুবদলের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক নয়ন গাজীকেও কোপানো হয়। গুরুতর অবস্থায় তাঁদের দুজনকে বরিশালের শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সুরুজকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

এ ঘটনার প্রতিবাদে ২ ও ৪ মার্চ রাতে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ লোকজন দুই দফায় শাহীনের বাড়িতে আগুন দেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে আনেন। ৩ মার্চ নিহত যুবদল নেতা সুরুজের ভাই শাহিন গাজী বাদী হয়ে নগরের কাউনিয়া থানায় শাহিন সরদারকে প্রধান আসামি করে তাঁর স্ত্রী, দুই সন্তানসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে সাত থেকে আটজনকে।

এদিকে যুবদল নেতা সরুজ গাজী হত্যা মামলার সব আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার শেষে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন। আজ দুপুরে কাউনিয়া হাউজিং এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের নেতা–কর্মীরা অংশ নেন। কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল মহানগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক সিরাজুল হক ও সদস্যসচিব শহিদুল ইসলাম হাওলাদার, ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সভাপতি আতাউর রহমান ও বরিশাল জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উলফাত রানা।

আরও পড়ুনবরিশালে যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ২০৫ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর শ হ ন সরদ র য বদল ন ত য বদল র দল ন ত বর শ ল ক দল র

এছাড়াও পড়ুন:

সাজেকে নিহত খুবি শিক্ষার্থী রিংকীর মরদেহ নেওয়া হবে গাইবান্ধা

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের সেশনাল ট্যুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী মোছা. রুবিনা আফসানা রিংকীর মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তার বাড়ি গাইবান্ধায় নেওয়া হবে।

এছাড়া শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে এদিন সকল ক্লাস-পরীক্ষাও বন্ধ রয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাজমুস সাদাত এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের সেশনাল ট্যুরের সময় রাঙামাটির সাজেক যাওয়ার পথে গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মোছা. রুবিনা আফসানা রিংকী নিহত হন। দুর্ঘটনায় নিহত রুবিনা আফসানা রিংকির মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তাদের বাড়ি গাইবান্ধায় নেওয়া হবে। এই দুর্ঘটনায় আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন। আহতদেরকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনজনকে চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হচ্ছে ।”

তিনি বলেন, “এই শোকাবহ ঘটনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীরভাবে মর্মাহত। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক ঘোষণা করা হয়েছে, সকল ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানের সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত আছেন। তিনি নিজে এবং সহকারী পরিচালকসহ কর্মকর্তারা খাগড়াছড়ি রওনা হয়েছেন।”

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদসহ সকল উপাসনালয়ে নিহত শিক্ষার্থীর আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতার জন্য বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি। 

এদিকে, সাজেকে শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সব ধরনের সেশনাল ট্যুর অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার কাকলি রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ ৪র্থ বর্ষ টার্ম-২ এর সেশনাল ট্যুরে অংশগ্রহণরত অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। শিক্ষার্থীর এই অকাল মৃত্যুতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীরভাবে শোকাহত এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল দূরপাল্লার সেশনাল ট্যুর স্থগিত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করেছে কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার পথে চান্দের গাড়ি পাহাড়ের খাদে পড়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হন। এসময় আহত হয়েছেন আরো ১১ জন। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সাজেকের হাউসপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

নিহত রুবিনা আফসানা রিংকী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। আহতরা সবাই একই বিভাগের শিক্ষার্থী।

ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ