দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না থাকলে অন্য ঘটনার সঙ্গে নারীর ওপর অভিঘাত বেশি হয়। নির্যাতন, হামলা ও ধর্ষণের ঘটনা বাড়ে। আদতে গণঅভ্যুত্থানের পর সমাজে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এর মানে এটা না, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলের 
চেয়েও পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়ে গেছে। তবে কয়েক দিনের ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে নির্যাতকের পক্ষে সাফাই গাওয়ায় অনেক বেশি প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। বিশেষত নারীরা অনেক বেশি ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। 
লালমাটিয়ায় ভুক্তভোগী নারীর ওপর হামলা হয়েছে, যা ফৌজদারি অপরাধ। কিন্তু সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে এ ঘটনায় হামলাকারীদের তো আইনের আওতায় নেওয়াই হয়নি বরং সরকারের পক্ষ থেকে হামলাকারীদের মুরব্বি বলে তাদের পক্ষালম্বন করা হয়েছে। এর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী নির্যাতনের ঘটনায় এ রকম একটা পরিস্থিতি তৈরি করা হলো, নির্যাতনের পক্ষে একটা গোষ্ঠী সারারাত থানার সামনে অবস্থান করল। স্বীকৃত নির্যাতকের মুক্তির দাবি জানানো হলো। সর্বশেষ সরকার এ রকম একটা অপরাধীকে এক দিনের মাথায় জামিন দিতে বাধ্য হলো। পরে সেই অপরাধীকে নির্ধারিত গোষ্ঠীটি বীরের বেশে বরণ করে নিল। একজন অপরাধীকে যদি বীর হিসেবে দেখানো হয়, তবে অন্যরাও একই অপরাধ করতে অনুপ্রাণিত হবে। আর বাদী নিরাপত্তাহীন হয়ে ভাববে, সে মামলা চালাবে কিনা? 
এই পরিস্থিতিতে নারীরা দেখতে পেল সমাজ ও রাষ্ট্রে ধর্ষণ আর হত্যাকাণ্ড বেড়ে যাওয়ার পরও সরকার ও বিভিন্ন গোষ্ঠী নারীর বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকেও সহযোগিতা পাচ্ছে না তারা। গত শনিবার পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল এসব নিয়ে কথা বলেনি। আর আট বছর বয়সী শিশু ধর্ষণের ঘটনাটি নারীদের মধ্যে ক্ষোভের স্ফুলিঙ্গ হিসেবে কাজ করে। তারা তাদের আত্মসম্মান ও অধিকার ফিরে পেতে রাস্তায় নেমেছে। তাই শনিবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসটি কেটেছে অত্যন্ত বেদনার মধ্যে। এর চেয়ে আরও বেদনাদায়ক হচ্ছে, আমাদের 
সমাজে নির্যাতনের শিকার একজন নারীকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়। আমাদের মূলধারার গণমাধ্যম এসব বিষয়ে সতর্ক থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্যাতনের শিকার নারীর নাম, পরিচয় ও ছবি প্রকাশ 
করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে আমরা একবারও খেয়াল করছি না, মেয়েটা যদি বেঁচে যায় তাহলে সে কি সমাজে যেতে পারবে? তার পরিবার সমাজে কীভাবে চলবে? নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুর পরিচয় প্রকাশে বিধিনিষেধ আছে। কিন্তু এই আইন মানছে না কেউ। নির্যাতনের শিকার নারীর পরিচয় প্রকাশের ক্ষেত্রে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। 
সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনায় নারী নির্যাতনকারীকে জনসমক্ষে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি আবার উঠেছে। এটা আরও ভয়াবহ। শাস্তি যত কঠোর, মামলায় জেতার সম্ভাবনা তত কম। কারণ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভিকটিমকে বাঁচতে দেওয়া হবে না। সাম্প্রতিক সময়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের লোকজন নারী নির্যাতনকে ঘিরে মিথ্যা তথ্যও ছড়াচ্ছে। তবে প্রতিটি ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনার বিচার করতে হবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর স থ ত সরক র র অপর ধ ক র ঘটন ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাবি শিবিরের ৩ দিনব্যাপী কর্মসূচি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা।

বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন শাখা সভাপতি এসএম ফরহাদ।

আগামী ৫, ৬ ও ৭ আগস্ট এই কর্মসূচিগুলো অনুষ্ঠিত হবে। আয়োজনে থাকছে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, বিপ্লবী নাটক, গান, কবিতা, আলোচনা সভা ও বিশেষ চিত্র প্রদর্শনী। কর্মসূচির সূচনা হবে ৫ আগস্ট (মঙ্গলবার) ভোর ৫টায় প্রতীকী সাইকেল র‌্যালির মাধ্যমে, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয়ে গণভবন পর্যন্ত যাবে।

আরো পড়ুন:

মেয়াদোত্তীর্ণ অগ্নিনির্বাপকে চলছে বেরোবি

তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন

সকাল ৯টায় টিএসসিতে থাকবে সাধারণ নাস্তার আয়োজন। এর পরপরই প্রদর্শিত হবে ‘জুলাই বিপ্লব’ ভিত্তিক একটি প্রামাণ্যচিত্র। একইসঙ্গে বিপ্লবী গান ও কবিতা পরিবেশিত হবে । সকাল ১০টা থেকে শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের মুখে অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা শোনার আয়োজন থাকবে।

দুপুর ২টায় একটি মাইম পরিবেশনা ও নাটক মঞ্চস্থ হবে। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টা ও সাড়ে ৫টায় পরপর আরো দুটি নাটক প্রদর্শিত হবে। সন্ধ্যা ৬টায় ব্যতিক্রমী আয়োজন ‘প্ল্যানচ্যাট বিতর্ক’ অনুষ্ঠিত হবে। এটি একটি প্রতীকী বিতর্ক, যেখানে গণআন্দোলনে নিহতদের উত্তরাধিকার ও আত্মিক উপস্থিতিকে ঘিরে আলাপ-প্রতিআলাপের একটি রূপক পরিসর গড়ে উঠবে ।

৬ আগস্ট দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচির শুরুতেই থাকবে রাজনৈতিক ও দার্শনিক আলোচনা সভা। সকাল ১০টার দিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও ফ্যাসিবাদ পলায়নের ১ বছর: প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বিকেল ৩টার দিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্ররাজনীতি ও ডাকসু নির্বাচন’ বিষয়ে আলোচনা হবে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ‘নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্তে ইসলাম প্রসঙ্গ’ শীর্ষক মতবিনিময়ের মাধ্যমে পর্দা নামবে দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচির।

কর্মসূচির তৃতীয় দিন ৭ আগস্ট দিনব্যাপী চলবে বিশেষ চিত্র প্রদর্শনী ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন। সেখানে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ ও গণআন্দোলন সংশ্লিষ্ট নানা দলিল, ছবি ও ভিডিও উপস্থাপন করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে ঢাবি শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি এসএম ফরহাদ বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া গণজাগরণ ও ছাত্র প্রতিরোধ ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অনন্য মাইলফলক। সেই ঘটনার স্মরণে এবং তা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের পথরেখা নির্ধারণের প্রয়াসে ঢাবির টিএসসি প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাবি শাখা আয়োজন করতে যাচ্ছে তিন দিনব্যাপী ‘আমরাই ৩৬ জুলাই: আমরা থামবো না’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।”

তিনি বলেন, “এ আয়োজন হবে শিল্প, সংস্কৃতি, স্মৃতি ও রাজনৈতিক ভাবনার এক সংমিশ্রণ। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের অভিজ্ঞতা আমাদের অনুপ্রেরণা। আর সংস্কৃতির মাধ্যমে আমরা সেই প্রতিরোধ চেতনাকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই।”

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাঁধন-সাবার ভার্চুয়াল দ্বন্দ্বে যোগ দিলেন অরুণা বিশ্বাস
  • ‘বিচার প্রক্রিয়া ও সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে’
  • তিতুমীর কলেজে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী
  • হাসিনাকে ১০ বার ফাঁসিতে ঝোলালেও তার অপরাধ কমবে না: নাহিদ 
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা
  • গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাবি শিবিরের ৩ দিনব্যাপী কর্মসূচি
  • নরসিংদীতে আজ এনসিপির পদযাত্রা 
  • এনসিপির অনুরোধে সমাবেশের স্থান পরিবর্তন করল ছাত্রদল