মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) রাজশাহী অঞ্চলের উপপরিচালক আলমগীর কবিরের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে আটকে রাখা ১৫১টি ফাইল পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ফাইলগুলো পাঠানোর সময় পার হয়ে গেছে। টাকা ছাড়া ওই কর্মকর্তা ফাইল ছাড়েন না, এমন অভিযোগে মঙ্গলবার তাঁর দপ্তরে অভিযান চালায় দুদকের একটি দল।

দুর্নীতির অভিযোগে বদলির ৫ মাস ৭ দিনের মাথায় গত ১৮ নভেম্বর ওই কর্মকর্তাকে মাউশির রাজশাহীর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক হিসেবে আবার পদায়ন করা হয়। এ নিয়ে গত ১৯ নভেম্বর প্রথম আলোতে ‘দুর্নীতির অভিযোগে বদলি, সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ পাওয়া কর্মকর্তাই হলেন মাউশির রাজশাহীর উপপরিচালক’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।

আলমগীর কবিরের টেবিলে আটকে রাখা ফাইলগুলো বিভাগের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকদের নতুন এমপিওভুক্তির আবেদন, কলেজের এরিয়া বিলের আবেদনসংক্রান্ত। সবচেয়ে বেশি ফাইল কলেজের বকেয়া বিলের। আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে মাউশিতে ফাইল পাঠানোর সময় ইতিমধ্যে পার হয়ে গেছে।

১০ মার্চ দুদকের হটলাইনে অভিযোগ যায়, মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের কলেজ শাখার উপপরিচালক আলমগীর কবির যোগদানের পর থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুষ নিয়ে ফাইল অনুমোদন করেন। এমপিওভুক্তি ও বদলির ক্ষেত্রে অন্তত লাখ টাকা ঘুষ নেন তিনি। ঘুষ না দিলে ফাইল ওপরে ওঠে না। ছুটি কিংবা অনাপত্তিপত্র নিতে গেলেও ঘুষ দিতে হয়। তাঁর চাহিদামতো টাকা দিতে না পারলে তিনি ফাইল অনুমোদন করেন না। বর্তমানে (অভিযোগের সময় পর্যন্ত) ১৮৩টি ফাইল আটকে রেখে তিনি ঘুষ দাবি করছেন বলে অভিযোগ পায় দুদক।

ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাজশাহীর উপপরিচালক ফজলুল বারী একটি টিম গঠন করে দেন। দলনেতা করা হয় জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেনকে। সদস্য রাখা হয় সহকারী পরিচালক তানভীর আহমেদ সিদ্দিক, উপসহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন ও কোর্ট পরিদর্শক আশরাফুল ইসলামকে। মঙ্গলবার দুপুরে দুদকের এই দল মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ে অভিযান চালায়।

অভিযানে দুদকের দল দেখে, আলমগীর কবিরের টেবিলে ১৫১টি ফাইল আটকে আছে। এসব ফাইল প্রথমে পরিচালক মোহা.

আছাদুজ্জামানের কাছে দাখিল হয়েছে। এরপর তিনি সহকারী পরিচালক আলমাস উদ্দিনের কাছে পাঠান। নিয়মানুযায়ী আলমাস উদ্দিন তা উপপরিচালক আলমগীর কবিরের কাছে পাঠিয়েছেন। কিন্তু আলমগীর কবির সেগুলো পরিচালকের কাছে পাঠাননি। তিনি ফাইল পাঠালে পরিচালক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেগুলো ঢাকায় পাঠাতে পারতেন।

দুদক দলের কাছে আলমগীর কবির দাবি করেন, অসুস্থ অবস্থায় ছুটিতে থাকায় ও তিন দিন সার্ভার ডাউন থাকায় তিনি ফাইল ছাড়তে পারেননি। দুদকের দল এ সময় তাঁর কাছে লিখিত বক্তব্য চান। লিখিত বক্তব্য দিতে আগামী রোববার পর্যন্ত সময় নেন আলমগীর কবির। এ বিষয়ে কথা বলতে বিকেলে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে কয়েক দফায় তাঁর মুঠোফোনে কল করলেও তিনি ধরেননি।

যোগাযোগ করলে মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক মোহা. আছাদুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার কাছে ফাইল আসার পর আমি সর্বোচ্চ ১০ দিন রাখতে পারি। সহকারী পরিচালক সাত দিন ও উপপরিচালক পাঁচ দিন রাখতে পারেন। কিন্তু উপপরিচালক যথাসময়ে ফাইল ছাড়েন না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঢাকায় ফাইল পাঠাতে আমি তাঁকে ফোন করেছি। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করেছি, এমনকি তাঁর রুমে গিয়েও যেভাবে ভদ্রভাবে বলা দরকার বলেছি, তা-ও তিনি ছাড়েননি।’

মোহা. আছাদুজ্জামান বলেন, ‘তাঁর কাছে মোট ২৮২টি ফাইল ছিল। তার মধ্যে ১৭৪টি আটকে রেখেছিলেন। ঢাকায় পাঠানোর সময় শেষ হলে তিনি আমাকে ২৩টা ফাইল দিয়েছেন। এসব ফাইল নিয়ে এখন আমার কোনো লাভ নেই, ঢাকায় পাঠানো যাবে না। আর ১৫১টি ফাইল তো তিনি ছাড়েনইনি।’ তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে তাঁর কানে কথা আসে, যেসব ফাইল ওই কর্মকর্তার টেবিলে আছে, সেগুলো অগ্রগামী করতে টাকা চেয়ে তিনি ‘থার্ড পার্টি’ কলেজের শিক্ষকদের ফোন করেন। তিনি কয়েকটি নম্বর তাঁকে দিয়েছেনও। কিন্তু ফোন করা ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যায় না। এখন এই ফোনকলের সঙ্গে ফাইল আটকে রাখার কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তা তিনি জানেন না।

গত ডিসেম্বরে রাজশাহীর পবা উপজেলার ডাঙ্গেরহাট মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আসলাম আলী মাউশির আঞ্চলিক পরিচালকের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ করেন, উপপরিচালকের টেবিলে তাঁর কলেজের ৪৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীর ৯০ লাখ টাকা বকেয়া বিলের ফাইল আটকে আছে। ফাইল অনুমোদন করাতে ‘আমি মাউশি থেকে বলছি’ জানিয়ে এক নারী তাঁকে ফোন করে টাকা চেয়েছিলেন। তখন ফাইল আটকে রাখার কথা অস্বীকার করেছিলেন উপপরিচালক।

আলমগীর কবীর সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। মাউশির রাজশাহীর উপপরিচালক হিসেবে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি প্রথম যোগদান করেছিলেন। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম করে এমপিও দেওয়ার অভিযোগ উঠলে তদন্ত চলাকালে তাঁকে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে তাৎক্ষণিক বদলি (স্ট্যান্ড রিলিজ) করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি মাউশিতে ফিরতে মরিয়া ছিলেন। গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি সবেতনে তিনি পরিচালক হতে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। তাঁর আবেদনে সুপারিশ করেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। এতে তিনি সচিবকে লেখেন, ‘শূন্য পদ সাপেক্ষে পদায়নের ব্যবস্থা নিন।’ কিন্তু কাম্য যোগ্যতা না থাকায় তিনি পরিচালক হতে পারেননি। এরপর চুপচাপ ছিলেন আলমগীর। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি আবার মাউশিতে ফেরার তৎপরতা শুরু করেন। এরপর গত ১৮ নভেম্বর তাঁকে মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাজশাহীর উপসহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘তিনি ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেন না বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। ঘুষের জন্য তিনি ফাইল আটকে রাখেন বলেও অভিযোগ এসেছে। তাই আমরা অভিযান চালিয়ে যাচাই করেছি। কোন তারিখে কোন ফাইল এসে আটকে আছে, সেগুলো দেখেছি। আমরা পেয়েছি যে ১৫১টি ফাইল আটকে আছে। এ ব্যাপারে ওই কর্মকর্তার লিখিত জবাব চাওয়া হয়েছে। তিনি রোববার পর্যন্ত সময় চেয়েছেন। জবাব আসার পর পর্যালোচনা করে আমরা ঢাকায় প্রতিবেদন পাঠাব।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন কর ন কল জ র ফ ন কর ল আটক সহক র ত সময় প রথম র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা

প্রতিদিনের মতো কাজ শেষে গতকাল সোমবার বাসায় ফিরছিলেন নাজমা বেগম। ঢাকার টঙ্গী এলাকায় থাকেন তিনি। পরিচিত এক ব্যক্তি তাঁকে হঠাৎ ফোন করে জানান, তাঁর নিখোঁজ ছেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। দ্রুত ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন নাজমা। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিও দেখান নাজমাকে। সে ভিডিওতে দেখতে পান, তাঁর ১০ দিন ধরে নিখোঁজ ছেলে আবদুল্লাহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।

ছেলের খোঁজ পেয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ছুটে আসেন তিনি। রেলস্টেশন থেকে সরাসরি চলে আসেন চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে। এখানেই ৮ দিন ধরে ভর্তি আবদুল্লাহ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৮ সেপ্টেম্বর আহত অবস্থায় আবদুল্লাহকে হাসপাতালে আনা হয়। সে সময় তার নাম-ঠিকানা কিছুই জানা যায়নি। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবেই হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে নেওয়া হয় তাকে। পরদিন তার অস্ত্রোপচার হয়। গত শনিবার আবদুল্লাহর জ্ঞান ফেরে। এরপর নিজের ও বাবা-মায়ের নাম আর বাসার ঠিকানা জানায় সে।

চিকিৎসকেরা সেই সূত্রে ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। ফেসবুকে আবদুল্লাহর ছবি দিয়ে খোঁজ চাওয়া হয় বাবা-মায়ের। সেই ছবি পরিচিতদের মাধ্যমে দেখেন নাজমা বেগম। এরপর ছুটে আসেন চট্টগ্রামে। হাসপাতালে এসেই নার্সদের সহায়তায় যান নিউরোসার্জারি বিভাগে। সেখানে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ)চিকিৎসাধীন আবদুল্লাহকে দেখেন।

আজ বিকেলে হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের সামনে কথা হয় আবদুল্লাহর মা নাজমা বেগমের সঙ্গে। সকালেই চট্টগ্রাম পৌঁছেছেন তিনি। জানালেন, তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে ১০ বছর বয়সী আবদুল্লাহ সবার বড়। ছোট মেয়ের বয়স পাঁচ ও আরেক ছেলের বয়স দুই। আবদুল্লাহ সুস্থ আছে জেনে স্বস্তি পেলেও দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। কারণ, এটিই প্রথমবার নয়, এর আগেও কয়েকবার ঘর থেকে কিছু না বলে বেরিয়ে যায় সে।

নাজমা বেগম বলেন, প্রায়ই আবদুল্লাহ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এদিক–সেদিক চলে যায়। পরে আবার ফিরে আসে। এর আগেও ঢাকার আশপাশে এদিক-সেদিক চলে গিয়েছিল সে। ৬ সেপ্টেম্বর সে ভাত খাওয়া থেকে উঠে হঠাৎ চলে যায়। সে ফিরে আসবে এই আশায় থানায় যাননি। কিন্তু ১০ দিন হয়ে যাওয়ায় এদিক–সেদিক খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। ঢাকায় বিভিন্ন স্টেশনে ছেলের খোঁজে গেছেন বলে জানান নাজমা।

চমেক হাসপাতালে চিকিৎসকেরা আবদুল্লাহর বরাত দিয়ে জানান, বাসা থেকে বেরিয়ে সে কক্সবাজার যাচ্ছিল। পথে চট্টগ্রামে ট্রেন থামলে সে ট্রেন থেকে পড়ে যায়। চিকিৎসার পর এখন সুস্থ হয়ে উঠছে সে।

চিকিৎসকেরা জানান, আবদুল্লাহকে যখন আনা হয় তার মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। তার মাথার এক পাশের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। ট্রেন থেকে পড়ার কারণে মাথায় আঘাত লাগে। হাড়ের কিছু অংশ মস্তিষ্কের ভেতরে গেঁথে যায়। অস্ত্রোপচারও সফল হয়েছে। তবে জ্ঞান না ফেরায় তার পরিচয় জানা যায়নি। জ্ঞান ফেরার পর তার তথ্য নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়।

শুরু থেকে আবদুল্লাহর অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরোসার্জারি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক মু. ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘তার হাড় ভেঙে মস্তিষ্কের ভেতরে চলে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর স্বাভাবিকভাবে সেটি জোড়া দেওয়া হয়েছে। এখন সে পুরোপুরি সুস্থ। তাকে আমরা আজ-কালের মধ্যে ডিসচার্জ করে দেব। শিশুকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিতে পেরে আমরাও আনন্দিত।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রাম চেম্বারে ‘পরিবারতন্ত্র’ পুনর্বহালের অভিযোগ
  • পাকিস্তানি খেলোয়াড়ের থ্রো লাগল আম্পায়ারের মাথায়, এরপর যা হলো
  • সিপিবির ১৩তম কংগ্রেস ১৯-২২ সেপ্টেম্বর, ঠিক হবে ‘রণকৌশল’
  • ফের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার 
  • আমার স্বামীর উপরে কু-নজর পড়েছে: অঙ্কিতা
  • সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
  • ‘আমি থানার ওসি, আপনার মোবাইল হ্যাকড হয়েছে’
  • কালিয়াকৈরে এক মাসে ২০ ডাকাত গ্রেপ্তার 
  • দুর্গাপূজায় অরাজকতা রোধে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান মহিলা পরিষদের
  • ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা