ছুটির দিন সকালে শিল্পী-বন্ধু জিরানির বাসায় আড্ডা দিতে গিয়েছি। মরু শহরের প্রান্তে বিরান মাঠের মাঝখানে সনাতন মাটির ঘর। শিল্পের জন্য মোক্ষম জায়গাই পছন্দ করে নিয়েছে সে। ঘরের ভেতরটা আসবাবহীন, ছড়ানো ছিটানো। বিছানার ওপরেই বসতে বলল আমাকে। বসতেই মনে হলো, একটু যেন বিঁধছে– বিছানায় হয়তো ধুলোবালি আছে। উদাসীন শিল্পীর বিছানা এমন হতেই পারে! কিন্তু চোখে পড়ল, বেডশিটের ওপর ছোট ছোট দানা ছড়ানো, বহুরঙা চাদরে চোখে তেমন মালুম হচ্ছে না। এত ছোট দানার উপস্থিতি টের পাবার জন্য আমি আমার বংশপরম্পরার নিতম্বকে ধন্যবাদ জানাই। বিছানায় দানা দেখে আশ্চর্য হলেও কারণটা আমি অনুমান করতে পারি না। দু’কাপ চা নিয়ে আসে জিরানি, ‘তোমার জন্য একটা ছোট্ট সারপ্রাইজ আছে বন্ধু।’ সারপ্রাইজ যতই ছোট হোক কল্পনায় তা বেশ বড় মনে হয়। জিরানির চমক বরাবরই চমকপ্রদ।
চিকু চিকু … ডাক পাড়ে জিরানি। হঠাৎ কোত্থেকে ডানা ফরফর করে তার কাঁধে এসে বসল একটি চড়ুইপাখি। একটু পরেই কাঁধ থেকে নেমে বিছানা-বালিশের চিপাচাপাতে নেমে গেল সে। পাখির একটা পা ভাঙা, হাঁটতে পারে না কিন্তু উড়তে পারে। কিচকিচ শব্দ করে আনন্দে লাফিয়ে বেড়াতে লাগল পাখিটা, বিবিধ দানার খোঁজে। জিরানি একটু সাবধান করে দিল, ‘খেয়াল রেখো, তোমার বডির নিচে আবার চাপা পড়ে না যায় ছোট পাখিটা– জায়গাটা চিকুর খুব প্রিয়, তার কাছে বিছানাটা একটা বড়সড় ডাইনিং টেবিল, বেশ নিরাপদ– যেখান থেকে পড়ে যাবার সম্ভাবনা নেই।’ আমি তার বাড়িতে এহেন খঞ্জ চিকুর আগমন সম্পর্কে জানতে আগ্রহ প্রকাশ করি।
জিরানি নাতিদীর্ঘ বর্ণনা দেয়, ‘অফিসে ঢোকার পথে সারি সারি বাবলা গাছ। একটা বইয়ের কার্টন ঘাড়ে করে হাঁটছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়ল, উঁচু ডাল থেকে পড়ে যাওয়া একটি চড়ুইপাখির ছানা কাতরে বেড়াচ্ছে মাটিতে। কার্টন থেকে বই নামিয়ে পাখিটাকে সঙ্গে নিলাম। আগে তো প্রাণ তারপরে না বিদ্যা! দানাপানি খাইয়ে একটু সুস্থ করে পাখিটাকে বাড়ি নিয়ে গেলাম। মাস দেড়েক পর তোমার জন্য এখন সে সারপ্রাইজ হয়ে এলো। তবে আজ কিন্তু আরেকটা সারপ্রাইজ আছে … আমার প্রিয় এক টিচারের মেয়ে আসবে নাইরোবি থেকে, এই প্রথমবার। দুবাই কনস্যুলেট অফিসে অ্যাডমিনের চাকরি নিয়ে এসেছে। মেয়েটা বয়সে আমার ছোট– তবে ছোট হলেও বেশ বড়।’
আমি বড় কথাটার অর্থ বুঝি না, একটু খটকা লাগে, তবু কিছু জিজ্ঞেস করি না। মনে মনে আশা করি, একসময় তা আপনিই প্রকাশ পাবে।
জিরানি বলে, ‘আজ দুপুরে এয়ারপোর্টে যেতে হবে তাকে রিসিভ করতে, তুমি কিন্তু যাবে আমার সঙ্গে।’ তারপর মুচকি হেসে বলল, ‘তাকে দেখে তোমার হয়তো হেনরি মাতিসের কোনো পেইন্টিংয়ের কথা মনে পড়বে।’
রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে অপেক্ষমাণ জনতা। আমি অস্থির হয়ে বলি, একটা পোস্টার নিয়ে দাঁড়ালে বুঝি ভালো হতো! জিরানি মৃদু হাসল, ‘আরে না, সে নিজেই একটা পোস্টার, অনেক দূর থেকেই তাকে চেনা যাবে।’ সত্যিই তাকে চিনতে সময় লাগল না। তাকে দেখে হাত উঁচু করল জিরানি। আমাদের সামনে হেঁটে এলো মাতিসের ‘পিঙ্ক নিউড’। নিম্নাঙ্গ দারুণ বলিষ্ঠ, নারী বলে স্তন আছে, তবে দেহে তার প্রাধান্য নেই। জিরানি আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল তাকে, ‘ইনি আমার প্রিয় শিক্ষকের মেয়ে, উহুরু উমজুরি। তাকে আমরা ডিপ্লোমেটিক অফিসের রেসিডেন্সে পৌঁছে দেব।’
গাড়িতে এসে উঠল উহুরু, বসল সামনের সিটে। আমি পেছন থেকে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করি তাকে, ‘উহুরু নামটা খুব সুন্দর, এ নামের অর্থ কী?’
–‘সোয়াহিলি ভাষায় এর অর্থ ফ্রিডম,’ মুচকি হেসে বলল উহুরু, ‘তবে আমি এখনও স্বাধীন আছি, পরাধীন হইনি।’
জিরানি এক গমক হাসি দিয়ে বলল, ‘আরে, সে তো চিরকুমারী থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বুঝলে?’ আমি মনে মনে মিলিয়ে নিলাম– তাই তো! পিঙ্ক নিউড তো মাতিসের গ্রেট পেইন্টিংয়ের নায়িকা, তার আবার বিয়ে-থা কেন!
গাড়ি ড্রাইভ করার সময় জিরানি তার সানগ্লাস খুঁজে পেল না, ভাবল, হয়তো বাড়িতে ফেলে এসেছে। ডিপ্লোমেটিক রেসিডেন্সে গিয়ে গাড়ি থামল। মাল-সামান নামানো হলো গাড়ি থেকে। উহুরুও নামল গাড়ি থেকে। আমি স্থান বদল করে সামনের সিটে গিয়ে বসলাম। কিন্তু বসার পরপরই মনে হলো, পাছার নিচে কিছু একটা খচখচ করছে। গাড়ি থেকে নামলাম– সিটের ওপর গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে আছে তার পছন্দের ক্যারেরা সানগ্লাস। সে কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, ‘হাকুনা মাতাতা’।
আমি মনে মনে ভাবলাম, দুঃখ পেয়ে মেয়েটাকে সে গালি দিলে নাকি, সানগ্লাস ভাঙার জন্য। বন্ধু বলে আমি তবু সাহস করে জিজ্ঞেস করি, ‘হাকুনা মাতাতা কী?’
–‘আরে, এটা হলো আফ্রিকার সোয়াহিলি ভাষার একটি বিখ্যাত প্রবাদ। এর মানে, নো প্রবলেম বা নেভার মাইন্ড-জাতীয় কিছু। ডিজনি এটা ব্যবহার করেছে লায়ন কিং ছবিতে। শপিং মলে হয়তো ‘হাকুনা মাতাতা’ লেখা টি-শার্টও পাওয়া যাবে।
আমি খুব আশ্চর্য হই, ‘পাওয়া গেলে কিনতে হবে টি-শার্ট, এত বিখ্যাত প্রবাদ অথচ এর সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না।’
–‘হাকুনা মাতাতা … এ দায়িত্ব আমার, আমিই সংগ্রহ করে দেব, দরকার হলে কেনিয়া থেকে আনিয়ে দেব তোমাকে।’
আমি যা ধারণা করেছিলাম, তা নয়। জিরানি উদারমনা শিল্পী মানুষ, সানগ্লাস চুর হয়ে যাওয়াকে সে সহজভাবেই নিয়েছে অথচ আমি কীসব ভাবছিলাম। সে আফসোস করে বলল, ‘আফ্রিকার অনেক দেশে এই নিতম্বস্ফীতি দেখা যায়, এটা জেনেটিক ব্যাপার, স্টিয়াটোপিজিয়া। উহুরুর নিম্নাঙ্গে সংবেদনশীলতা হয়তো কম, বেচারি বুঝতে পারেনি। আমি মনে মনে স্থির করি– জিরানির জন্য পরদিনই একটা সানগ্লাস কিনে আনতে হবে।
২
সানগ্লাস দিয়ে আসার পর অনেক দিন আর জিরানির সঙ্গে যোগাযোগ হয়ে ওঠে না আমার। একদিন সে ফোন করে বলল, ‘অনেক দিন তোমার দেখা নেই বন্ধু, আগামী শুক্রবার ছুটির দিন কোনো প্রোগ্রাম রেখো না, দুপুরের লাঞ্চ খাবে আমার সাথে। উহুরু আসবে, আমি তার পোর্ট্রেট করব। সময়মতো চলে এসো কিন্তু।’
অতি উৎসাহে লাঞ্চের আগেই গিয়ে উপস্থিত হই আমি। জিরানির ঘরের দরজাটা ঈষৎ খোলা। ভেতরে ঢুকে দেখি, ‘পিঙ্ক-নিউড’ স্থির হয়ে বসে আছে সিল্কের ফ্যাব্রিক দেওয়া একটি টুলের ওপর। তার পরনে প্রথম দিনের সেই পিঙ্ক ড্রেস। জিরানি রংতুলি নিয়ে ব্যস্ত ছবি-আঁকা ইজেলে। আমাকে দেখেই বলল, ‘দরজা বন্ধ করে এসো, আমি খুলে রেখেছিলাম, সামান্য কাজ বাকি, দশ মিনিট। প্যাকেট-লাঞ্চ আনা আছে, আমরা শুধু ওভেনে একটু গরম করে নেব। উহুরুর আবার বিকেলে ডিউটি আছে, একটু টাইম লেগে গেল পোর্ট্রেট করতে। আমি একটু আগের শেখা বুলিটা আওড়াই, ‘হাকুনা মাতাতা, কাজ করো তুমি, আমি লাঞ্চ রেডি করছি।’
দুজন ধরাধরি করে একটা নিচুমতো টেবিল এনে রাখলাম বেডের সামনে। আজ বেডের ওপর কোনো পাখির দানা নেই। কিন্তু চিকু আছে আশেপাশেই, অন্য দিনের মতো মনের আনন্দে কিচকিচ করছে না। সানন্দে লাঞ্চ শেষ করলাম আমরা। উহুরুর পোর্ট্রেট দারুণ হয়েছে, তবে পিঙ্ক-নিউডের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই এমনকি ব্লু-নিউডের সঙ্গেও। পেইন্টিংটা বেশ সাবধানে মোড়া হলো যাতে কাঁচা রং নষ্ট না হয়।
উহুরুকে রেসিডেন্সে নামানো হলো। পেইন্টিং হাতে করে নেমে গেল সে। আমি লক্ষ করলাম, তার নিতম্বের মাঝবরাবর হালকা লাল দাগ। কৌতূহলবশে জিরানির মনোযোগ আকর্ষণ করলাম আমি। জিরানি হাসল, ‘ও কিছু না, এখন আর সমস্যা নেই, সে তো বাড়ি পৌঁছে গেছে। তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে বাসায়, তাড়াহুড়োতে আর হয়ে ওঠেনি।’ আমি অপেক্ষায় থাকি, কী হতে পারে নতুন সারপ্রাইজ!
বাড়ি ফিরতে ফিরতে অন্ধকার হয়ে গেল। ঘরে ঢুকে বিজলি বাতির সুইচ টিপেই চিকু-চিকু বলে ডাকল জিরানি। চিকুর কোনো খবর নেই, ফুড়ুৎ করে উড়ে এসে কাঁধে বসা নেই। হলো কী পাখিটার! ঘরে আবার বিড়াল-টিড়াল ঢুকল না তো! নাহ্, ঘরে বিড়াল আসবে কোত্থেকে, ঘর তো লক করা ছিল। বিছানায় বসতে গিয়ে আবিষ্কার করি, চিকু চ্যাপ্টা হয়ে মিশে আছে বিছানার ওপর, পালকের একপাশে কিছুটা রক্তের ছোপ। লাঞ্চ করার সময় এখানেই তো বসেছিল উহুরু।
জিরানি দেখল, মুহূর্তেই সব বুঝে ফেলল সে। ঘরের অন্য প্রান্তে ছোট্ট একটি জানালা। সেই গবাক্ষে চোখ রেখে শূন্য ভূদৃশ্যের অন্ধকারে তাকিয়ে রইল সে। ইচ্ছা করলেও আমি তার পেছন পেছন গেলাম না, বরং তার কষ্ট জুড়ানোর জন্য অপেক্ষা করলাম। একসময় ঘুলঘুলি বন্ধ করে ফিরে এলো জিরানি। আলনা থেকে এনে দিল একটা কালো রঙের টি-শার্ট– যার ওপরে সাদা ছাপার অক্ষরে লেখা, ‘হাকুনা মাতাতা’। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য অন ক দ প ইন ট র ওপর করল ম
এছাড়াও পড়ুন:
সমান কাজ করেও কম মজুরি পান আদিবাসী নারীরা
দিন যায়, আসে নতুন দিন। প্রযুক্তি আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে যায় অনেক কিছুই। শুধু বদল হয় না সমাজের পিছিয়ে পড়া কিছু জনগোষ্ঠীর ভাগ্য। বিশেষ করে, আদিবাসী নারী শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন যুগ যুগ ধরে।
সমালোচনার মুখে ও সময়ের প্রয়োজনে অনেক ক্ষেত্রেই লিঙ্গ বৈষম্য কমেছে। নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য দিনে দিনে কমছে। কিন্তু, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাঁওতাল পল্লীর নারী শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আগের মতোই।
দিনাজপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটামোড় এলাকার সাঁওতাল পল্লী জয়পুর পাড়া। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামটি দেখতে বেশ সুন্দর। নিরিবিলি পরিবেশ, চারদিকে সবুজের সমারোহ। সবুজ ধানক্ষেত আর কিছু দূর পর পর সাঁওতালদের বাড়ি। কোথাও কোথাও উঁচু টিলার মাঝে বড় বড় পুকুর। পুকুর পাড়ে কিছু সাঁওতাল ঘর বেঁধে থাকছেন। পাশের বড় মাঠে খেলা করছে কিছু আদিবাসী শিশু।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে পেশা বদলাচ্ছেন অনেক শ্রমিক
ছোট্ট হাতে সংসারের হাল
পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের কেউ কেউ বাঁশের চটা তুলছেন, কেউ রান্নার জন্য গাছের ডাল কাটছেন। বাড়িতে পালন গরু-ছাগল দেখভাল করছেন পুরুষ ও নারী উভয়ই। নারীদের অধিকাংশই গরু-ছাগল চড়ানোসহ বিভিন্ন কাজে বাড়ির বাইরে। যদিও ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়নি তেমন।
কয়েকজন সাঁওতাল নারীকে কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়। তারদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরাও পুরুষের মতো জমিতে বীজ বপন, চারা উত্তোলন, রোপণ, সার দেওয়া, নিড়ানি ও ধান কেটে ঘরে তোলা পর্যন্ত সব কাজ করি। কিন্তু, এখনো সেই আগের মতোই মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছি আমরা।”
গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউনিয়নের জয়পুর পাড়া গ্রামের কর্মজীবী সাঁওতাল নারী মমতা হেমব্রম। তিনি বলেন, “পুরুষরা কাজ করে মজুরি পান ৫০০ টাকা আর আমাদেরকে দেওয়া হয় ৪৫০ টাকা। ক্ষেত-খামারের কাজ অনেক কঠিন। পুরুষ-নারী তো সমান কাজ করি। আমরা সমান মজুরি চাই, কিন্তু চাইলেও তো তারা দেন না।”
একই গ্রামের সাবিনা হাসদা। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, “এই অঞ্চলে অধিকাংশ পুরুষ ও নারী ধান-আখ ও মাছ চাষ ও গরু-ছাগল লালনপালন করেন। কাজ একই হলেও আমাদের মজুরি পুরুষের চেয়ে কম। আমরা সমান মজুরি চাই।”
সুরুজ মনি টুডু নামের আরেক নারী বলেন, “আমরা পুরুষের সমান কাজ করি, তাই আমরা এই মে দিবস থেকেই সমান মজুরি চাই। আপনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে সমান মজুরি নিশ্চিত করার দাবি করছি।”
সাপমারা গ্রামের দেলু মারমা বলেন, “আমাদের সব কাজই কৃষিনির্ভর। সে কারণে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের কাজ করতে হয়। তা না হলে সংসার চলে না। আমরাও চাই, পুরুষ এবং নারী যেন সমান মজুরি পান।”
পুকুর পাড়েই বাস করেন অমেদা হাজদা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “সব জায়গায় পুরুষের দাম বেশি, নারীদের দাম কম। সে কারণে তাদের মজুরি বেশি, আমাদের কম। আমাদেরকেও পুরুষের সমান দাম দেবে, সমান মজুরি দেবে, এটাই আমাদের দাবি।”
সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে রাইজিংবিডিকে বলেন, “এই এলাকার অধিকাংশ নারী তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নন। কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা বিষয়ে তাদের ধারণাই নেই। অনেকে জানলেও কাজ হারানোর ভয়ে ন্যায্য মজুরির বিষয়ে মুখ খুলতে চান না। সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা সমঅধিকারের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি।”
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গাইবান্ধার সাধারণ সম্পাদক রিকতু প্রসাদ বলেন, “গাইবান্ধার নারীরা আজও মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে, গোবিন্দগঞ্জের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নারীরা। নারী-পুরুষ সবাই শ্রমিক, বৈষম্য করতেই তাদের আলাদা চোখে দেখা হয়। মে দিবসে মুখে যতই বলি না কেন, পুরুষশাসিত সমাজে এখনো পরিবর্তন আসেনি। সমাজ থেকে মজুরি বৈষম্য দূর করার জোর দাবি জানাই।”
বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী রাইজিংবিডিকে বলেন, সব ক্ষেত্রেই নারীরা অবহেলিত এবং বঞ্চিত। মুখে সবাই নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় উল্টো। সাঁওতাল তথা আদিবাসী নারীদের সমান মজুরি পাওয়া সাংবিধানিক অধিকার। তারা এ দেশেরই নাগরিক। তাদের সমান মজুরি নিশ্চিত করতে করা প্রয়োজন।
ঢাকা/মাসুম/রফিক