হামজার বাংলাদেশ–অভিষেক দেখতে দেশে আসছেন পরিবারের সদস্যরা
Published: 15th, March 2025 GMT
ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে, আর সময় কমছে। ঘনিয়ে আসছে হামজা চৌধুরীর বাংলাদেশে আসার দিনক্ষণ। সব ঠিক থাকলে আগামীকাল (১৬ মার্চ) যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় দুপুরে শেফিল্ড ওয়েডনেসডের সঙ্গে ম্যাচ খেলে রাতেই সিলেটের বিমান ধরবেন। ১৭ মার্চ তাঁর সিলেটে পৌঁছানোর কথা।
হামজা আগেও বাংলাদেশে এসেছেন। তবে এবারের আসাটা বিশেষ। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ফুটবল দলের খেলোয়াড় হয়ে দেশে আসছেন তিনি। স্মরণীয় এ সফরে তাঁর সঙ্গী হবেন ৯ জন।
হামজার সঙ্গে আসছেন তাঁর মা, স্ত্রী, তিন সন্তান ও দুই ভাই। বাবা আগেই চলে এসেছেন। হামজার ইচ্ছা, বাংলাদেশের জার্সিতে তাঁর অভিষেক মাচটা যেন পরিবারের সবাই মাঠে বসে দেখেন। ২৫ মার্চ শিলংয়ের জহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে এএফসি এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইয়ের ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
হামজার বাংলাদেশ দলে অভিষেক দেখতে যুক্তরাজ্য থেকে আসা পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি সিলেট থেকেও কয়েকজন সঙ্গী হতে পারেন। তবে ইংল্যান্ড থেকে ফিজিও আনার কথা হামজা বলেছেন বলে সংবাদপত্রে যে খবর প্রকাশিত হয়েছিল, তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন বাফুফে সহসভাপতি ফাহাদ করিম, ‘হামজা আমাদের এমন কিছু বলেনি।’
সোমবার সিলেটে নেমে সরাসরি হবিগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা রয়েছে হামজা চৌধুরীর। প্রিমিয়ার লিগের দল লেস্টার সিটি থেকে এখন তিনি ধারে খেলছেন চ্যাম্পিয়নশিপের ক্লাব শেফিল্ড ইউনাইটেডে। ১৭ মার্চ সিলেট পৌঁছে সেদিন রাতটা নিজের গ্রামের বাড়িতে কাটাবেন।
১৮ মার্চও সেখানেই থাকতে পারেন, আবার দিনের শেষ ফ্লাইট ধরে ঢাকায়ও চলে আসতে পারেন। বিষয়টা এখনো নিশ্চিত নয়। এ প্রসঙ্গে ফাহাদ করিম আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘হামজা ১৮ মার্চ ঢাকায় আসতে পারেন। আবার ১৯ মার্চ সকালেও আসতে পারেন। এটা তাঁর ওপর নির্ভর করছে।’
১৯ মার্চ দুপুরে টিম হোটেলে বাংলাদেশ দলের অফিশিয়াল প্রেস কনফারেন্সে হওয়ার কথা রয়েছে। তাতে কোচ, অধিনায়ক, হামজা কথা বলবেন। এর আগে সকালে দলীয় ফটোসেশন হবে। বিকেল বা সন্ধ্যায় অনুশীলনে নামার কথা পুরো দলের। ফাহাদ করিম বলেন, ‘আমরা চাই হামজা এখানে এক দিন অনুশীলন করুন। তবে অনুশীন না জিম হবে, তা ঠিক করবেন কোচ। দেখা যাক কী হয়।’
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ ২৫ মার্চ হলেও কোচ হাভিয়ে কাবরেরা ২০ মার্চেই শিলংয়ে যেতে চেয়েছেন। তার ইচ্ছাই পূরণ করছে বাফুফে। ২০ মার্চ সকালে ফ্লাইটে কলকাতা হয়ে শিলংয়ে যাবে বাংলাদেশ দল। যাওয়ার আগে হাতে সময় কম। তাই হামজার জন্য আপাতত বলার মতো কোনো সংবর্ধনা হচ্ছে না। এ কথা জানিয়ে ফাহাদ করিম বলছেন, ‘তিনি সরাসরি ঢাকায় এলে একটা সংবর্ধনাও আয়োজন করা যেত। এখন হাতে সময় না থাকায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ হ দ কর ম
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।