রেলওয়েকে লাভজনক করতে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি পণ্য পরিবহনের কথা বলে ৩৫৮ কোটি টাকায় ১২৫টি লাগেজ ভ্যান কেনা হয়েছিল। এগুলো চালু করে লাভ তো হয়নি, উল্টো এখন এগুলো রেলওয়ের ‘গলার কাঁটায়’ পরিণত হয়েছে।

এখন এসব লাগেজ ভ্যান পরিচালনার দায়িত্ব বেসরকারি খাতে দিতে চায় রেলওয়ে। গত ৫ জানুয়ারি রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এক সভায় লাগেজ ভ্যান বেসরকারি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা বা ভাড়ায় দেওয়ার বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেন।

 অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাগেজ ভ্যান কেনার পরামর্শ দিয়েছিলেন। রেলওয়ের কর্মকর্তারা নানা পরিকল্পনা করলেও বাস্তবে এসব লাগেজ ভ্যান ব্যবহারে কৃষক ও উদ্যোক্তাদের তেমন উৎসাহী করতে পারেনি। কৃষকদের জন্য বিশেষ ট্রেন চালু করেও পণ্য পরিবহনে ব্যর্থ হয়েছে রেল।

এর আগে চীন থেকে আনা ডেমু ট্রেনও ব্যর্থ প্রকল্পে পরিণত হয়। এখন একই পথে যাচ্ছে লাগেজ ভ্যান প্রকল্প। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপযোগিতা বিবেচনা না করে জনগণের কষ্টের টাকায় এ ধরনের কেনাকাটার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের শাস্তি দিতে হবে।

সরবরাহকারীদের সুবিধা দিতে রেলের অনেক কেনাকাটা হয়। এসব লাগেজ ভ্যান কেনার আগে উপযোগিতা যাচাই করা হয়নি। কারণ, তাঁরা জানেন, এটার জন্য কাউকে জবাবদিহি করতে হবে না।বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পরিবহনবিশেষজ্ঞ মো.

সামছুল হক

রেলওয়ের নথিপত্র বলছে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে রেলওয়ের বহরে ১২৫ লাগেজ ভ্যান যুক্ত হয়। পুরোনো লাগেজ ভ্যান ছিল ৫০টি, যার ১৮টি সচল ছিল। নতুন লাগেজ ভ্যান যুক্ত হওয়ার আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পার্সেল পরিবহনে আয় হয়েছিল ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বরে লাগেজ ভ্যানগুলো যুক্ত হওয়ার পর শেষ তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) মাত্র ২২ লাখ টাকা বেড়ে আয় হয়েছিল ২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

লাগেজ ভ্যান থেকে আয় বাড়াতে গত বছরের ২৪ অক্টোবর খুলনা, পঞ্চগড় ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে তিন জোড়া ‘কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন’ চালু করেছিল রেলওয়ে। কিন্তু কৃষকদের কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে চালুর এক সপ্তাহের মধ্যে এসব ট্রেন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ২৪ অক্টোবর যাত্রার প্রথম দিন কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন পঞ্চগড় ছেড়েছিল কোনো পণ্য ছাড়াই।

ব্যবসায়ীরা বলেন, ট্রাকে যশোর থেকে ঢাকায় সবজি পাঠাতে প্রতি কেজিতে দুই টাকা খরচ পড়ে। সেখানে ট্রেনে করে পাঠাতে খরচ সাড়ে ৪ টাকার মতো। এ ছাড়া তিন-চারবার সবজি ওঠানো-নামানোতে পণ্য নষ্ট হবে।

কেন কাজে লাগছে না 

‘বাংলাদেশ রেলওয়ের মাধ্যমে ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের (বেসরকারি) পার্সেল এবং গুডস পরিবহন নীতিমালা ২০২৪’-এর খসড়া প্রণয়নে গত ৫ জানুয়ারি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে সভা হয়।

সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, সভায় রেলের যুগ্ম মহাপরিচালক এ এম সালাহ উদ্দীন বলেন, রেলে যে লাগেজ ভ্যান রয়েছে, তার মাত্র ৫ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে। নীতিমালা করে বেসরকারি খাতে লাগেজ ভ্যান ইজারা বা ভাড়া দিলে রাজস্ব বৃদ্ধি সম্ভব হবে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রেলওয়ের লাগেজ ভ্যানগুলো ব্যবহার করে সর্বোচ্চ সুফল পেতে তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু ফল পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পরিবহনবিশেষজ্ঞ মো. সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সরবরাহকারীদের সুবিধা দিতে রেলের অনেক কেনাকাটা হয়। এসব লাগেজ ভ্যান কেনার আগে উপযোগিতা যাচাই করা হয়নি। কারণ, তাঁরা জানেন, এটার জন্য কাউকে জবাবদিহি করতে হবে না। সে কারণেই বিগত সরকার এত বেশি দেউলিয়া ছিল। টাকার অপচয় যে যেভাবে করুক, সবাইকে সুরক্ষা দেওয়া হতো। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এসব ল গ জ ভ য ন কর মকর ত র লওয় র ব সরক র পর বহন প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার একটি বাড়িতে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার মশিপুর ইউনিয়নের ছোট ইতালি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

বিস্ফোরণে আতাউর রহমান (৩৫) নামের একজন গুরুতর আহত হন। তাঁকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আতাউর কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রামপ্রসাদের চর গ্রামের বাসিন্দা। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।।

গতকালের ওই ঘটনার পরপরই ছোট ইতালি গ্রামের বিস্ফোরণস্থল ঘিরে ফেলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব ও ডিবি সদস্যরা। উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েকটি তাজা হাতবোমা। বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা এসে উদ্ধার হওয়া হাতবোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করেন। পরে বাড়িটি সিলগালা করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগে আতাউর রহমানসহ কুমিল্লা থেকে আসা চার ব্যক্তি ছোট ইতালি গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেনের বাড়িতে ওঠেন। মুক্তারের স্ত্রী নাছিমা আক্তার (৪৫) মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মুক্তারের বাড়ির ভেতরে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হন। পরে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে রক্তাক্ত অবস্থায় আতাউর রহমানকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশকে খবর দেওয়ার পর মুক্তার হোসেনের তিন সহযোগী দ্রুত পালিয়ে যান। স্থানীয় লোকজন আহত আতাউরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেরাজুল হক বলেন, ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত হাতবোমা ও কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। বাগবাড়ি তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল সাদিক বাদী হয়ে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছেন। মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ঘটনার সঙ্গে আগামী নির্বাচনে নাশকতার পরিকল্পনার যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ