ভিউ বাণিজ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের ক্রিকেট
Published: 15th, March 2025 GMT
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতিরিক্ত কনটেন্ট ও নেতিবাচক উপস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় দলের ব্যাটার লিটন কুমার দাস। সম্প্রতি সমকালের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘মাঠে ব্যাটিংটা সুন্দর বলেই সবাই ধরে নেয় আমি নামলেই রান করব। কিন্তু আমি তো মানুষ, সব সময় তো রান করা সম্ভব না।’
২০১৯ সালে লিটনের ব্যাটিং দেখে ভীষণ মুগ্ধ হয়েছিলেন ইয়ান বিশপ। সেবার বিশ্বকাপে এই ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ধারাভাষ্য দেয়ার সময় লিটনের প্রতিটি শটকে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা বিখ্যাত চিত্রকর্ম মোনালিসার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তার মতে ইতালিয়ান চিত্রকর দ্য ভিঞ্চি তুলির আঁচড়ে মোনালিসার যে চিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন লিটনের ব্যাট যেন ঠিক তার তুলির মতোই।
এমন ছবির মত ব্যাটিংয়ের কথা জিজ্ঞেস করতেই আপত্তি তুললেন লিটন। জানালেন, এমন প্রশংসা আমার জন্য নেতিবাচক। আমার ব্যাটিং সুন্দর দেখে প্রতিদিন রান করতে হবে, এই জিনিসটি সবার ভেতরে গেঁথে গেছে। সবাই ভাবে আমি মাঠে গেলেই রান করব। কেউ রান করুক বা নাই করুক, আমাকে রান করতে হবে। কিন্তু আমি তো মানুষ, ফেল হতেই পারি। একজন বোলারের একটি ভালো বলে আউট হতেই পারি। একটি ভালো ক্যাচ নিতে পারে বা আমি একটি বাজে শট খেলতে পারি; কারণ আমি মানুষ।
লিটন ক্ষোভ ঝেড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার ভিউ বাণিজ্য নিয়েও। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার খারাপ মুহূর্তগুলো বারবার তুলে ধরা হয় উল্লেখ করে লিটন বলেন, যারা নিউজ পোর্টাল চালায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় রিলস বানায়, তাদের উপস্থাপনায় থাকে আমি কেন রান করছি না। আমাকে নিয়ে দিনের পর দিন তারা কনটেন্ট বানিয়েই যাচ্ছে। এটি শুধু চাপই নয়, বরং মানসিকভাবে ‘হ্যাম্পার’ করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা রিল বানায়, ইউটিউবে কনটেন্ট দেয়, তারা নিজেদের মতো করে উপস্থাপন করে—কিন্তু সেটি নৈতিক জায়গা থেকে না। এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্রিকেটারদের জন্যও ভুল বার্তা যাচ্ছে। একজন খেলোয়াড়ের খারাপ দিন থাকতেই পারে। কিন্তু একাধিকবার সেই খারাপ মুহূর্ত প্রচার করায় দর্শক বিভ্রান্ত হয়। এই কনটেন্ট কিছু মানুষের জন্য ভালো—ভিউ বাড়ে, লাভ হয়। কিন্তু আমাদের জন্য তা হতাশাজনক।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল টন দ স কনট ন ট র ন কর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।