ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক সালিসে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে এনামুল খান (১৯) নামের এক তরুণের মাথার চুল কেটে দেন একজন ইউপি সদস্য। জনসমক্ষে ‘এমন অপমান সইতে না পেরে’ চিরকুট লিখে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ওই তরুণ। তখন কোনোমতে বেঁচে গেলেও চার মাস ভুগে গতকাল শুক্রবার ওই তরুণ মারা গেছেন।

এনামুল খান চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের লোহারটেক গ্রামের আইয়ুব খানের ছেলে। গত বছরের ১৩ নভেম্বর দুপুরে নিজের কক্ষে চিরকুট লিখে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি।

পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ১০ নভেম্বর বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালিয়ে একটি গরুর বাছুরকে আহত করেন এনামুল। এ ঘটনায় দুই দিন পর ১২ নভেম্বর সন্ধ্যায় চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের লোহারটেক গ্রামে সালিস বসে। সালিসে এনামুলকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করার পাশাপাশি তাঁর মাথার চুল কেটে নেওয়া হয়। ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের উপস্থিতিতে চুল কাটেন ইউপি সদস্য সরোয়ার মৃধা। লোকলজ্জার কারণে পরদিন দুপুর ১২টার দিকে নিজের কক্ষে চিরকুট লিখে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এনামুল। পরিবারের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে চরভদ্রাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে আইসিইউতে তিন মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন এনামুল। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত ১২ ফেব্রুয়ারি তাঁকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। বাড়িতে আসার এক মাস দুই দিন পর গতকাল রাত আটটার দিকে মারা যান এনামুল।

এ ঘটনায় গত বছরের ১৪ নভেম্বর এনামুলের চাচা রাজু খান বাদী হয়ে ইউপি সদস্য সরোয়ার মৃধা ও ওই গ্রামের বাসিন্দা টুকু প্রামাণিককে আসামি করে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে একটি মামলা করেন। মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।

এনামুলের বাবা আইয়ুব খান বলেন, জরিমানা করে ক্ষান্ত না হয়ে তাঁর ছেলের চুল কেটে দেন সালিসের লোকজন। যে কারণে লজ্জা-অভিমানে এনামুল আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। অনেক চেষ্টা করেও তিনি ছেলেকে বাঁচাতে পারেননি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ছেলের চিকিৎসার জন্য তাঁর ছয় লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। ছেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ইউপি সদস্য সরোয়ার মৃধার মুঠোফোন নম্বরে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে কথা হয় তাঁর ছেলে সাইফুর রহমান মৃধার সঙ্গে। সাইফুর বলেন, ‘চুল কাটা এবং লোকলজ্জার কারণে আত্মহত্যার এ চেষ্টার ঘটনা ঘটলে ১২ নভেম্বরই এ ঘটনা ঘটত। এক দিন পরে ঘটায় এর পেছনে নিশ্চয় অন্য কোনো কারণ আছে। আমার বাবা কোনো অন্যায় করেননি। সালিসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাবা চুল কেটেছিলেন।’

চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ খান বলেন, তিনি একাধিকবার ঢাকায় এনামুলকে দেখে এসেছেন। চিকিৎসা বাবদ টাকাও দিয়েছেন।

চরভদ্রাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

রজিউল্লাহ খান বলেন, এ বিষয়ে আগেই একটি মামলা করা হয়েছে। আসামিরা বর্তমানে জামিনে আছেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের পরে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

১০ টাকায় ইলিশ খাওয়াতে গিয়ে তোপের মুখে ‘এমপি প্রার্থী’ জামিল

ফরিদপুরের সদরপুরে ১০ টাকায় ইলিশ মাছ বিতরণের ঘোষণা দিয়েছিলেন মাওলানা রায়হান জামিল (৩৬) নামের এক স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী। তবে, ইলিশের চেয়ে মানুষ বেশি হওয়ায় উপস্থিত জনতার মধ্যে শুরু হয় হট্টগোল। একপর্যায়ে জনতার তোপের মুখে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রায়হান জামিল। প্রায় এক সপ্তাহ আগে মাত্র ১০ টাকায় ইলিশ মাছ বিতরণের ঘোষণা দিয়ে পোস্টার সাঁটিয়াছিলেন তিনি।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় সদরপুর উপজেলার বিশ্ব জাকের মঞ্জিল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ইলিশ বিতরণের কথা ছিল। তবে, সকাল থেকে শত শত মানুষ জাকের মঞ্জিল উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ভিড় জমাতে শুরু করেন।

রায়হান জামিল প্রায় ৬০০টি ইলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন। কিন্তু, মাছ নেওয়ার জন্য সেখানে দুই সহস্রাধিক মানুষ আগে থেকে উপস্থিত ছিলেন। বিতরণ শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই মাছ ফুরিয়ে যায়। মাছ না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন লাইনে দাঁড়ানো লোকজন।

তারা বলেন, সকাল থেকে অপেক্ষা করেও মাছ পাননি। উল্টো ধাক্কাধাক্কি ও মারামারি লেগে যায়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে রায়হান জামিলকে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে হয়।

এ বিষয়ে সদরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুকদেব রায় বলেন, ‘‘রায়হান জামিলকে আগেই এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়ে ছিল। কিন্তু, তিনি তা শোনেননি। বিশৃঙ্খলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’’

রায়হান জামিল ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার এমপিডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ঢাকায় ব্যবসা করেন বলে জানা গেছে।

এ ঘটনার পর রায়হান জামিল বলেন, ‘‘দেশের সবচেয়ে দামি মাছ ইলিশ। অনেক মানুষের ইলিশ কিনে খাওয়ার সক্ষমতা নেই। এই চিন্তা থেকে আমি প্রায় ৬০০ মানুষের মধ্যে ১০ টাকায় ইলিশ দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু, হাজার হাজার মানুষ জড়ো হওয়ায় সবাইকে মাছ দিতে পারিনি। পরে আমি এ ঘটনার জন্য সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে ফিরে আসি।’’

ঢাকা/তামিম/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১০ টাকায় ইলিশ খাওয়াতে গিয়ে তোপের মুখে ‘এমপি প্রার্থী’ জামিল