শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রিমিয়ার সিমেন্টের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে তার সহযোগী দুই কোম্পানি। কোম্পানি দুটি হলো ন্যাশনাল সিমেন্ট মিলস ও প্রিমিয়ার পাওয়ার জেনারেশন। খরচ কমাতে সহযোগী দুই কোম্পানিকে একীভূত করার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রিমিয়ার সিমেন্টের পরিচালনা পর্ষদ।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে নিয়ম অনুযায়ী, প্রিমিয়ার সিমেন্ট এ একীভূতকরণের সিদ্ধান্তের কথা গতকাল রোববার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে শেয়ারধারীদের জানিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার প্রিমিয়ার সিমেন্টের পরিচালনা পর্ষদের সভায় সহযোগী দুই কোম্পানিকে একীভূত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বর্তমানে কোম্পানি তিনটি আলাদাভাবে পরিচালিত হচ্ছে। লোকবল থেকে শুরু করে প্রশাসনিক খরচ সবই আলাদা। তাই খরচ কমিয়ে আনতে সহযোগী দুই কোম্পানিকে প্রিমিয়ার সিমেন্টের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।আমীরুল হক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রিমিয়ার সিমেন্ট

প্রিমিয়ার সিমেন্ট জানায়, ন্যাশনাল সিমেন্ট মিলস ও প্রিমিয়ার পাওয়ার জেনারেশন নামের কোম্পানি দুটি প্রিমিয়ার সিমেন্টের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাবে। বর্তমানে এ দুটি কোম্পানির মালিকানার সঙ্গে প্রিমিয়ার সিমেন্টও যুক্ত রয়েছে। তবে নিয়ম অনুযায়ী, শেয়ারধারী, সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আদালতের অনুমোদনের পর একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।

কোম্পানি–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ন্যাশনাল সিমেন্টের ১৮ শতাংশ মালিকানা রয়েছে প্রিমিয়ার সিমেন্টের হাতে। আর প্রিমিয়ার পাওয়ার জেনারেশনের ৯৬ শতাংশ মালিকানা প্রিমিয়ার সিমেন্টের। একীভূতকরণের মাধ্যমে এ দুটি কোম্পানির শতভাগ মালিকানা প্রিমিয়ার সিমেন্টের কাছে ন্যস্ত হবে। তাতে বিলুপ্ত হয়ে যাবে ওই দুটি কোম্পানির আলাদা সত্তা। বর্তমানে এসব কোম্পানি আলাদা আলাদা সত্তা নিয়ে নিজেদের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। প্রিমিয়ার সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, দুটি কোম্পানিকে একীভূত করা হলে তাতে প্রশাসনিক ব্যয় কমবে। এতে প্রিমিয়ার সিমেন্টের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ন্যাশনাল সিমেন্ট মিলস চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী ইছানগরে অবস্থিত। ১৯৯৬ সালে কোম্পানিটি চালু হয়। এটির মালিকানার সঙ্গে প্রিমিয়ার সিমেন্ট যুক্ত হয় ২০১৩ সালে। ওই বছর কোম্পানিটির ১৮ শতাংশ মালিকানা নেয় প্রিমিয়ার সিমেন্ট। বাকি ৮২ শতাংশ মালিকানা ব্যক্তিশ্রেণির উদ্যোক্তাদের হাতে রয়েছে। এখন কোম্পানিটি একীভূত হলে ব্যক্তিশ্রেণির উদ্যোক্তারা তাঁদের হাতে থাকা শেয়ার প্রিমিয়ার সিমেন্টের কাছে হস্তান্তর করবেন। বিনিময়ে তাঁরা প্রিমিয়ার সিমেন্টের শেয়ার পাবেন।

বর্তমানে ন্যাশনাল সিমেন্টের কারখানার বার্ষিক সিমেন্ট উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ লাখ মেট্রিক টন। কোম্পানিটির সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরে কোম্পানিটির টার্নওভার বা বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ছিল ৪৯৪ কোটি টাকা। ওই বছর সব ধরনের খরচ বাদ দেওয়ার পর কোম্পানিটির মুনাফা হয়েছিল প্রায় সোয়া এক কোটি টাকা। একীভূত হলে কোম্পানিটির এ আয় যুক্ত হবে প্রিমিয়ার সিমেন্টের আয়ের সঙ্গে।

শেয়ারবাজারের কোম্পানিন্যাশনাল সিমেন্ট ও প্রিমিয়ার পাওয়ার  নামে দুটি আলাদা কোম্পানিকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রিমিয়ার সিমেন্টের পরিচালনা পর্ষদ।

অন্যদিকে প্রিমিয়ার পাওয়ার জেনারেশনের যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালে। কোম্পানিটির বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৫ মেগাওয়াট। মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে প্রিমিয়ার সিমেন্টের কারখানাতেই এই বিদ্যুকেন্দ্র অবস্থিত। সিমেন্ট কারখানার উৎপাদন নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়। এটির উৎপাদিত শতভাগ বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় প্রিমিয়ার সিমেন্ট কারখানায়। কোম্পানিটির মালিকানার ৯৬ শতাংশই রয়েছে প্রিমিয়ার সিমেন্টের হাতে। বাকি ৪ শতাংশ শেয়ারের মালিকানায় রয়েছে ব্যক্তিশ্রেণির কয়েকজন উদ্যোক্তা। কোম্পানিটি এখন প্রিমিয়ার সিমেন্টের সঙ্গে একীভূত হলে তাতে ব্যক্তিশ্রেণির উদ্যোক্তাদের হাতে থাকা ৪ শতাংশ শেয়ার প্রিমিয়ার সিমেন্টের কাছে হস্তান্তর করা হবে। বিনিময় তাঁরা প্রিমিয়ার সিমেন্টেরও সমপরিমাণ শেয়ার পাবেন। সর্বশেষ ২০২৩–২৪ অর্থবছরে প্রিমিয়ার পাওয়ার জেনারেশন সাড়ে ১০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। বছর শেষে কোম্পানিটির লোকসান হয়েছে ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

দুই কোম্পানি একীভূতকরণের এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে কোম্পানি তিনটি আলাদাভাবে পরিচালিত হচ্ছে। লোকবল থেকে শুরু করে প্রশাসনিক খরচ সবই আলাদা। তাই খরচ কমিয়ে আনতে সহযোগী দুই কোম্পানিকে প্রিমিয়ার সিমেন্টের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাতে খরচ কমলে প্রিমিয়ার সিমেন্ট দীর্ঘ মেয়াদে লাভবান হবে।

কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, দুই কোম্পানিকে একীভূত করতে প্রিমিয়ার সিমেন্টকে নতুন করে প্রায় তিন কোটি শেয়ার ইস্যু করতে হবে। আদালত ও সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের পর এসব শেয়ার ইস্যু করা হবে। ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের হাতে থাকা ন্যাশনাল সিমেন্ট ও প্রিমিয়ার পাওয়ার জেনারেশনের মালিকানা বুঝে নিতে এসব শেয়ার ইস্যু করা হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রিমিয়ার সিমেন্টের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, ১০ টাকা অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালুতে প্রিমিয়ার সিমেন্টের নতুন এসব শেয়ার ইস্যু করা হবে। তাতে প্রিমিয়ার সিমেন্টের পরিশোধিত মূলধন বাড়বে ৩০ কোটি টাকা।

প্রিমিয়ার সিমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে কোম্পানিটির কর্মীর সংখ্যা ১ হাজার ৯০১। অন্যদিকে প্রিমিয়ার পাওয়ার জেনারেশনের ২৪ জন ও ন্যাশনাল সিমেন্টে ৭৬২ জন কর্মী রয়েছেন। সব মিলিয়ে তিন কোম্পানিতে লোকবল দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ৬৮৭ জন। কোম্পানি তিনটি একীভূত হলেও কোনো কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হবে না বলে জানিয়েছেন কোম্পানির শীর্ষ এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, সব কর্মী প্রিমিয়ার সিমেন্টের কর্মী হিসেবে কাজ করবেন।

প্রাক্‌–বাজেট আলোচনায় পরামর্শ

প্রাক্‌-বাজেট আলোচনায় অর্থ পদেষ্টাকে ধনী ব্যক্তিদের কাছ থেকে বাড়তি কর আদায়ের পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদেরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প র ম য় র স ম ন ট র পর শ য় রব জ র পর চ ল অন য য় সহয গ উৎপ দ ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনের আগেই পাঁচ ব্যাংক এক হবে: গভর্নর

বেসরকারি খাতের পাঁচ ইসলামী ব্যাংককে একীভূত (মার্জার) করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সঙ্গে এই একীভূতকরণের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা আশা করি, আগামী সরকারও এ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেবে। তবে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা না করে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক একীভূত হবে।’

আজ রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর এ মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি ব্যাংককর্মীদের আশ্বস্ত করেন, এই একীভূতকরণের ফলে কোনো কর্মীকে চাকরি হারাতে হবে না।

গভর্নর বলেন, কর্মীদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। প্রয়োজনে কিছু শাখা পুনর্বিন্যাস করা হবে। যেসব ব্যাংকের শাখা শহর এলাকায় বেশি, সেগুলোর কিছু শাখা গ্রামাঞ্চলে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

এ সময় পাচার করা সম্পদ উদ্ধার করা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন গভর্নর। তিনি বলেন, ‘সম্পদ উদ্ধারের বিষয়টি একটি দীর্ঘমেয়াদি ও ধাপে ধাপে অগ্রসর হওয়ার প্রক্রিয়া। আদালতের চূড়ান্ত রায় ছাড়া এসব অর্থ উদ্ধার সম্ভব নয়। এ জন্য সুনির্দিষ্ট তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমরা চাই, আদালতের মাধ্যমে যাচাই হোক, আমাদের দাবি কতটা সঠিক। আদালতের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই অর্থ উদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।’

বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, আদালতের বাইরে সমঝোতার মাধ্যমে অর্থ ফেরতের পথও খোলা আছে। সে ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের আইনজীবীরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজবেন। সরকার যে পথ নির্ধারণ করবে, আদালত কিংবা এডিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবে।

গভর্নর আরও বলেন, দেশীয় সম্পদ উদ্ধারে দেশের আদালতে এবং বিদেশি সম্পদ উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট দেশের আদালতে মামলা পরিচালনার প্রস্তুতি চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কিছু ব্যাংক একীভূত হবে, কর্মীদের আতঙ্কের কিছু নেই: গভর্নর
  • পাচার অর্থ ফেরাতে যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করছে সরকার: গভর্নর
  • নির্বাচনের আগেই পাঁচ ব্যাংক এক হবে: গভর্নর