ঠাকুরগাঁওয়ে ‘ঘুষ’ নেওয়ার সময় অডিটর-হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আটক
Published: 17th, March 2025 GMT
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে ঘুষ গ্রহণের সময় উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও অডিটরকে হাতেনাতে আটক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার (১৭ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে তাদের আটক করা হয়।
দুদক ঠাকুরগাঁও সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আজমির শরিফ মারজী আটকের তথ্য জানান।
আটককৃতরা হলেন- হরিপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো.
আরো পড়ুন:
পাপন পরিবারের ২৭ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ
স্ত্রীসহ সাবেক কর কমিশনার রঞ্জিতের ১২৩ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ
দুদক ঠাকুরগাঁও সমন্বিত জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মো. আব্দুল হামিদ নামে এক ব্যক্তি দুদক কার্যালয়ে অভিযোগ করেন। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত নিরাপত্তা প্রহরী। তিনি ওই উপজেলার গেদুরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে কর্মরত ছিলেন। অবসরকালীন সুবিধাপ্রাপ্তির জন্য গত ৫ ফেব্রুয়ারি হামিদ উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে আবেদন করেন।
সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের অডিটর মো. হান্নান ও উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. শেরিকুজ্জামান তার ফাইল প্রক্রিয়াকরণের জন্য ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন, যা পরে ২২ হাজার টাকায় সমঝোতা হয়। বিষয়টি হামিদ দুদক ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ে জানান। পরে কমিশন ঘুষ গ্রহণের সময় হাতেনাতে আটকের জন্য একটি পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, আব্দুল হামিদ চাহিদা মতো ২২ হাজারের মধ্যে ৫ হাজার টাকা নগদ দেওয়ার সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে মো. আব্দুল হান্নানকে হাতেনাতে আটক করে। একইসঙ্গে এই কর্মকাণ্ডের মূল হোতা হিসেবে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা শেরিকুজ্জামানকেও আটক করা হয়।
দুদক ঠাকুরগাঁও সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আজমির শরিফ মারজী বলেন, “এ ঘটনায় আটক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনিব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। এর আগেও তাদের বিরুদ্ধে দুদক কার্যালয়ে অভিযোগ করেছিলেন ভুক্তভোগীরা।”
ঢাকা/মঈনুদ্দীন/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আটক র সময় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।